আমার পাঁচ বছরের ছেলেটা বড় হয়ে অনেক কিসু হতে চায়, কী হবে জানিনা, কোনো কিছু হবার জন্য ওর উপর কোনো চাপ প্রোয়োগ ও করিনা।
যখন আকাশ ভেদ করে পখিদের আতংকিত করে প্লেন উড়ে যায়,সে পাইলট হতে চায়। আমরাও চাইতাম পাখি কিংবা পাইলট হতে, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন মনে হয় মানুষের সহজাত।
খেলনা নষ্ট হয়ে গেলে বা করে ফেললে, হতে চায় ইন্জিনিয়ার, যাতে সব কিছু মেরামত করতে পারে।
ডালের ভিতর লবণ, পানি, লেবু মিশিয়ে একদিন সে বানিয়ে ফেলল লেনটিন সূপ। হতে চায় কুক।
জাহাজের ক্যাপ্টেন, আয়রন ম্যান,..... ইতং বিতং আরো কত হতে চায় সে বড় হয়ে।
গত রোজার ঈদের পরের কথা। অফিসে যাবার জন্য রেডী হচ্ছি, ভাত খেতে বসেছি। পাশের চেয়ারে আমার ছেলে দুলতে দুলতে জিগ্গেস করে 'বাবা তুমি কি হইছ?'
প্রশ্নটা হটাৎ করে বুঝতে পারিনা। বলি ' তোমার কথা বুঝতে পারি নাই, আবার বল।'
'আমিতো বড় হয়ে একটা কিছু হব, পাইলট হই আর কুক হই। তুমিতো বর হইছ, তুমি কি হইছ?'
এতক্ষণে প্রশ্নটা পরিষ্কার হ্য়, আর গলার ভিতর ভাত আটকে যায়। প্রশ্নটার গভীরতা, এর পিছনে তার চিন্তার প্রবাহ, আমার আত্মোপলব্ধি- কী হতে চেয়ে কী হয়েছি, সবকিছু একসাথে দলা পাকিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলি, 'আমি বেসরকারি কেরানী হইছি।'
আমার উত্তরটা মনে হ্য় তার মা'র বেশী পছন্দ হয় নাই। সে আবার ব্যাখ্যা করে।' বাবা, বড় হয়ে কেউ ডাক্তার হয়, কেউ ইন্জিনিয়ার হয়, কেউ কেউ চাকুরিজীবি হয়। তোমার বাবা হইছে চাকুরিজীবি।'
"ধ্যুত ! বাবা কিছুই হয় নাই, বাবা শুধু বড়ই হইছে।" আমার পুত্রের নির্লিপ্ত উত্তর।
( সেই থেকে চিন্তায় আছি, আসলেই আমি কি হইছি? জন্ম কি এইটা বৃথা যাবে??)