somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়ের মার গল্প ....... সাব্বির আহমেদ জয়

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে বয়সে কিশোরী মেয়েটির পায়ে আলতা মেখে নির্জন দুপুরে মিষ্টি রোদে ছাদে হাটবার কথা,যে বয়সে স্কুল পালিয়ে বান্ধবীদের সাথে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা,যে বয়সে সামজিক বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করে একটি প্রেম পত্র পাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে জাগ্রত হয়,যে বয়সে কচিকাঁচার আসরের ছোট্ট ছড়া রচিয়তা থেকে একজন পূর্ণাঙ্গ কবি হওয়ার ক্রাইসিলাইসিস পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ঠিক সেই বয়েসেই কিশোরী মেয়েটিকে বিয়ে নামক সামাজিক দায়বদ্ধতার শিকলে আবদ্ধ হতে হয়।কিশোরী মেয়েটির কবি হওয়ার স্বপ্ন আর পুরন হয়না ,কিশোরী মেয়েটি ইন্টারমিডিয়েটের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই প্রথম সন্তানের জননী হয়, মেয়েটির চারুকলায় ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন শশুর বাড়ীর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার কারনে ধুলিৎসাত হয়ে যায়।এইভাবে অজস্র সপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে মেয়েটি ধীরে ধীরে যুবতী হয়ে উঠে আর মাতৃত্ব এবং সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই সুখের অন্বেষণ করতে থাকে।কিন্তু যে হৃদয় সৃজনশীলতা আর সৃষ্টিশীলতা কে ধারন করে সে হৃদয় কক্ষনোই সুকুমারবৃত্তির চর্চা থেকে নিজেকে নিবৃত করেনা তাই সেই যুবতী মা সংসারের যাবতীয় কাজের পাশাপাশি রবীন্দ্ররচনাবলী পড়া থেকে শুরু করে নিজেই নিজেই একদিন রং তুলি দিয়ে ছবি আকা শুরু করে ছোট্ট শিশু জয় একদিন অবাক হয়ে দেখে তার মা রাধা কৃষ্ণের সুন্দর একটি ছবি একে ফেলেছে কিন্তু যুবতী মায়ের এই সৃজনশীলতাকে জয়ের বাবা মন থেকে সাধুবাদ জানায়না কক্ষনোই কারন সুন্দরী স্ত্রীর এতো গুন থাকা বাঞ্ছনীয় নয় যে এই পুরুষশাসিত সমাজে !!!!জয়ের বাবা কেতাদুরুস্ত ব্যাবসায়ী প্রায়শই বাসায় বিদেশী অতিথিদের নিমন্ত্রন জানানো হয় সেইখানে জয়ের মার কন্টিনেন্টাল রান্না পরিবেশন করা হয় রান্না খেয়ে মারুবিনি কোম্পানীর কর্ণধার জাপানী ব্যাবসায়ীর স্ত্রী কেঁদে জয়ের মাকে জড়িয়ে ধরে বোন ডাকে এতে জয়ের বাবা খুব খুশি হয় মনে মনে এই কারনে যে গুনবতীর স্ত্রীর গুনের সদব্যাবহার করা হচ্ছে বিজনেস আউটপুট টা ভালোই আসবে। দিন যায় জয়ের মার বিষণ্ণতা জয়ের মাঝেও সঞ্চারিত হয় তাই দুপুরে সংসারের সব কাজকর্ম সম্পন্ন করার পর জয়ের মা যখন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে মলিন মুখে জয়কে আর জয়ের ভাই বাবুকে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দেয় আর রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে দুপুরে রুশদেশের উপকথা থেকে অথবা ঠাকুরমার ঝুলি থেকে গল্প পড়ে শোনায় জয়ের ভালো লাগেনা কিন্তু বাবুকে ঘুম পারাতে ওর মার কোন সমস্যা হয়না কিন্তু জয় বড় বড় চোখ করে মার মলিন মুখ হা করে দেখে মা হেসে বলে কিরে ঘুম আসেনা!!! জয় বলে না আম্মু !!! এইভাবে অনেক বিষণ্ণ দুপুর পার হয়ে যায় জয় আর বাবু একদিন স্কুলে ভর্তি হয় জয় বাবুর মার ব্যাস্ততা বেড়ে যায় কারন দুই ছেলেকে স্কুলে আনা নেওয়া থেকে শুরু করে গোসল পর্যন্ত মা করিয়ে দেয়। জয় আর বাবু ধীরে ধীরে কিশোর হয়ে উঠে ওদের মা কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায় যাক ছেলেগুলো বড় হচ্ছে নিজেরাই স্কুল থেকে আসতে পারে তাই সংসারের ব্যস্ততার পাশাপাশি সৃষ্টিশীল কিছু করার অভিপ্রায় উনার মাঝে জেগে উঠে। তাই পারাবারিকসুত্রে জয় বাবুর মা একজন ধনাড্য এবং শিল্পপতির কন্যা সন্তান হওয়ায় একজন নারী উদ্যোগতা হওয়ার বাসনা জয় আর বাবুর বাবাকে জানায় এতে জয় বাবুর বাবা কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্মতি প্রদান করে। তাই সংসারের যাবতীয় কাজকর্মের পাশাপাশি জয়-বাবুর মা নিজেই রুপাঞ্জনা নামে একটি ফ্যশন হাঊজ দাড়া করিয়ে ফেলে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এবং বিচিত্রা ঈদ ফ্যাশনে সেরা শাড়ির পুরুস্কারটি জিতে নেয়। জয়-বাবুর মায়ের এই ব্যাবসায়িক সাফল্যকে ভালভাবে গ্রহণ করেনা লর্ড ক্লাইভের উচ্ছিষ্ট খাওয়া শশুরবাড়ীর লোকজন তাই উন্নাসিক শশুরবাড়ীর লোকজন ফতোয়া জারি করে এবং বাধ্য করে সেই তরুনী উদ্যোগতার তিলে তিলে গড়া প্রতিষ্ঠান কে চিরতরে বন্ধ করে দিতে এই অজুহাতে যে কিশোর ছেলেরা বখে যেতে পারে মায়ের আদরের অভাবে।এইভাবে সপ্নভঙ্গের বেদেনাকে সাথী করে সেই তরুনী মা একদিন প্রৌরত্বে পৌছায় মেজ এবং বড় ছেলের বিয়ে হয়ে যায় দুই ছেলের বিয়েতেই মা নিজের হাতে তার সেই পুড়নো সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে শাড়ী তৈরি করে দেয় এবং একটি সুন্দর যৌথপরিবার গড়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু মা এর সেই স্বপ্নও বেশিদিন স্থায়ী হয় না জয় আর বাবুর বাবাকে একটি মিথ্যে রাজনৈতিক মামলায় বিপর্যস্ত হতে হয় এবং সেই সঙ্কটময়মুহূর্তে জয় আর বাবুর মা একাই পরিবারকে আগলে ধরেন একজন লৌহমানবী হয়ে কিন্তু যে ক্রান্তিকালে সন্তানদের বাবা মার বেশি প্রয়োজন ঠিক সেই মুহূর্তে বাবু জীবনের তাগিদে সিদ্ধান্ত নেয় আলাদা হয়ে যাওয়ার এতে মা নীরব সম্মতি দেয় যদিও ওনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় তাই কোন এক ছুটিরদিনে বিষণ্ণ দুপুরে মা জয় কে জিজ্ঞেস করে জয় তুমিও কি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে?? বিষন্নতার শহরে বেড়ে ওঠা জয় যেন শৈশবের সেই বিষণ্ণ দুপুরে চলে যায় মার মলিন মুখ দেখে বড় বড় চোখ করে অস্রুসজল দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়ে থাকে .........
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×