somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুইডিশ মুভি The Hunt: শিশু নির্যাতন, ভিন্ন বাস্তবতা

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৭ সালের একটা ঘটনা শেয়ার করি। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর খালাতো বোনটা তখন নার্সারিতে পড়ে। বন্ধু বেড়াতে গেলেই প্রচুর দুষ্টামি হত। একদিন এই দুষ্টামির মাঝখানে হঠাৎ সে ‘এই তুমি আমার গায়ে হাত দিলা ক্যান?’ বলেই খেলা থামিয়ে সোজা তার মায়ের কাছে বিচার দিয়ে এল – ‘আম্মা, ভাইয়া আমার গায়ে হাত দিছে'. বিচার দেয়া শেষে ফিরে আবার দুষ্টামি শুরু করেছে বন্ধুর সাথে, কিন্তু বন্ধু বজ্রাহত হয়ে বসে ছিল, সারাদিনই তার এভাবেই কেটেছে। রাতে আমাকে বলেছিল – যদি তার খালা এই কথাটাকে গুরুত্ব দিত, তাহলে কি হত? ঘটনাটা যদি খালাতো বোনের সাথে না ঘটে অন্য কোন পিচ্চির সাথে ঘটতো – তাহলে কি হত?

এই ঘটনাটিকে আমি খুব পজেটিভলি নিয়েছি। আমাদের সমাজে শিশুরা, সে মেয়ে হোক বা ছেলে, অনেক রকম শারীরিক মানসিক নির্যাতনের ভিকটিম হয়, কিন্তু প্রকাশ পায় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝতেই পারে না যে তারা নির্যাতিত হচ্ছে, অথচ কচি মনে এই ঘটনার ছাপ রয়ে যায়, বয়ে বেড়াতে হয় পুরো জীবন। বন্ধুটির খালা তার সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলছে ছোটবেলা থেকেই এবং এই সচেতনতা সকলের মধ্যে গড়ে উঠলে শিশু নির্যাতন কমে আসবে বহুগুণ। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে শিশুদের এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। ডেনমার্কের ছবি ‘দ্য হান্ট’-এ একজন শিশুর করা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে, এবং এটা সম্ভব হয়েছে জেমস বন্ড মুভি ‘ক্যাসিনো রয়াল’ এর ভিলেন চরিত্রে রূপদানকারী অভিনেতা ম্যাডস মিকেলসন (Mads Mikkelsen – উচ্চারণ ভুল হতে পারে, উইকিও কোন সাজেশন দিতে পারে নি) এর ব্রিলিয়ান্ট অভিনয়ের কারণে।

ছবিতে মিকেলসন অভিনয় করেছেন একজন মধ্যবয়সী, একাকী, ডিভোর্সড ব্যক্তি ‘লুকাস’ চরিত্রে। স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরী করত লুকাস, কিন্তু স্কুলটিই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে একটি নার্সারীতে যোগদান করে সে। চাকুরীর কারণেই বাচ্চাদের সাথে তাকে প্রায় পুরোটা সময় কাটাতে হয়। সেই বাচ্চাদেরই একজন যে কিনা আবার লুকাসের প্রতিবেশী এবং বেস্ট ফ্রেন্ড থিও-র মেয়ে, প্রিন্সিপালের কাছে একটি ছোট্ট অভিযোগ জানায় – কিন্তু অভিযোগের গুরুত্বানুযায়ী নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে লুকাসের জীবনে যে শোচনীয় অবস্থা সেটা উঠে এসেছে দ্য হান্ট চলচ্চিত্রে।

এই ঘটনায় লুকাসের প্রতি পরিচালক টমাস ভিন্টেরবার্গের স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব আছে। শুরু থেকেই লুকাসকে নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। ফলে, সত্যিকারের ঘটনাটি কি ঘটেছিল সেটা নিয়ে দর্শককে কোন সন্দেহ করার সুযোগ দেন নি পরিচালক। টমাস ভিন্টেরবার্গ ‘ডওমা ৯৫’ (Dogme’95) আন্দোলনের বিখ্যাত নির্মাতা। লার্স ভন ট্রায়ার তার সাথে মিলেই ডওমা’৯৫ এর দশটি রুল বা ‘ভো অব চ্যাস্টিটি’ তৈরী করেছিলেন এবং প্রথম ডওমা ফিল্ম ‘দ্য সেলিব্রেশন’ ভিন্টেরবার্গেরই পরিচালনা। দ্য হান্ট চলচ্চিত্রটি ডওমা চলচ্চিত্রের আওতাভুক্ত না হলেও খুব দূরের কিছুও নয় – ফিল্ম ক্রিটিকরা দ্য হান্টকে প্রথম ডওমা চলচ্চিত্রের সাথেই তুলনা করছেন।

২০১২ সালে মুক্তি পেলেও ছবির মূল থিম ভিন্টেরবার্গ পেয়েছিলেন এক দশক আগে – একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছ থেকে। তিনি শিশু নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু নির্মান করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন কাজের চাপে ভুলে যাওয়ার পর ২০০৫ সালে একই চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে হয় টমাস ভিন্টেরবার্গকে। ফলে নতুন করে কাজ শুরু করেন ভিন্টেরবার্গ কিন্তু থিম একই থাকলেও গল্পের মোড় ঘুরিয়ে ভিন্নঘাতে নিয়ে যান তিনি।

ছবিটির অন্যতম সাফল্য হল – দর্শককে লুকাসের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে হয়। অসহায় বোধ হয়, মানসিক চাপে লুকাস উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলে কিনা তা নিয়ে সংশয় জাগে, সমাধান কি হতে পারে তা নিয়ে অবচেতন মনে চিন্তা শুরু হয়ে যায়। এর পেছনে কারণ সম্ভবত এমন এক সেটিংসে ছবির গল্প বলা যা আগ্রাহ্য করা সম্ভব হয় না। ঢাকা শহরে থেকে আপনি হয়তো খুব অনুভব করতে পারবেন না কারণ এখানে এ ধরনের সমস্যার সমাধান অপেক্ষাকৃত সহজ, কিন্তু ভেবে দেখুন এমন কোন স্থানে যেখানে দুই তিন পুরুষ ধরে বসবাস করছেন এবং এমন কোন অভিযোগের কারণে পুরো সমাজ আপনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে – তখন কেমন বোধ করবেন।

দ্য হান্ট চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি চমৎকার। ঋতু পরিবর্তনের বিষয়টি খুব দারুনভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর খুব বেশী গুরুত্ব পায় নি – ডওমা চলচ্চিত্রের মত এখানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর নেই – এই বৈশিষ্ট্য গল্পের সাথে মিশে যেতে আরও বেশী সাহায্য করেছে।

২০১২ তে মুক্তি পাওয়া ছবিটি এর মাঝেই বেশ কিছু পুরস্কার জিতে নিয়েছে। আইএমডিবি-র টপ ২৫০ মুভির মধ্যে অবস্থান করে নিয়েছে এর মাঝেই, রোটেনটম্যাটোস এর রিপোর্টে শতকরা ৯৫ ভাগ ফ্রেশ। দেখে নিতে পারেন, ঠকবেন না নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

দারাশিকো'র ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×