somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য ঘোস্ট রাইটার: আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্তরালের গল্প (স্পয়লার অ্যালার্ট)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোমান পোলানস্কির ২০১০ সালের সাফল্যমন্ডিত পলিটিক্যাল ড্রামা "দ্য ঘোস্ট রাইটার"। রোমান পোলানস্কি বিভিন্ন কারনে আলোচিত, সমালোচিত। ১৯৬২ সালে নাইফ ইন দ্যা ওয়াটার সিনেমার মাধ্যমে পূর্নদৈঘ্য সিনেমার জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং প্রথম সিনেমাতেই মুণ্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তবে দর্শক বোধহয় তার "দ্য পিয়ানিস্ট" সিনেমার কারণেই বেশী চিনেন। আবার নানাবিধ কারনে বিশেষত: সেক্সুয়াল স্ক্যান্ডাল তাকে বেশ সমালোচিত করেছে বিভিন্ন সময়। "দ্য ঘোস্ট রাইটার" এর প্রিমিয়ারের সময়ও তিনি কারাগারে বন্দী অবস্থায় ছিলেন।

ঘোস্ট বা ঘোস্ট রাইটার বলতে এক ধরনের লেখককে বোঝায় যারা অর্থের বিনিময়ে আরেকজনের 'আত্মজীবনী' লিখে দেয়। সিনেমায় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডাম ল্যাঙ এর আত্মজীবনী লেখার দায়িত্ব পায় একজন ঘোস্ট রাইটার। কাজটা সহসাই পেয়েছিল কারন সাবেক ঘোস্ট রাইটার ম্যাককারা এক দূর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেছিল। প্রশ্নটা শুরু থেকেই - সাবেক ঘোস্ট কি আত্মহত্যা করেছিল, দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল নাকি হত্য করা হয়েছিল তাকে? ঘটনা আরেকটু ঘোরালো হয় যখন নতুন ঘোস্টকে দেয়া একটা পান্ডুলিপি ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুজন হেলমেটে ঢাকা মটরসাইকেল আরোহী।

প্রধানমন্ত্রীর অবকাশযাপন কেন্দ্রে লেখার এক চমতকার পরিবেশে কাজ শুরু হয় নতুন ঘোস্টের। কিন্তু পরদিনই সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইকার্ট অ্যাডাম ল্যাঙ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ গুরুতর: সন্দেহভাজন কিছু সন্ত্রাসীকে বন্দী করা এবং নির্যাতনের জন্য সিআইএ-র নিকট হস্তান্তর করা। কাজ করতে গিয়ে নতুন ঘোস্ট খুজে পায় বিভিন্ন সূত্র, অনুভব করে প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক সমস্যা, এবং জেনে যায়, সাবেক ঘোস্টের লেখা পান্ডুলিপিতেই আছে এমন কোন তথ্য যা দরকার অনেকেরই। সন্দেহ দৃঢ় হয় যখন বহুদিন ধরে বাস করছেন এমন একজন অধিবাসি জানায়, লাশটি যেখানে পড়ে ছিল, সেখানে ভেসে আসার কোন সম্ভাবনাই নেই।

এভাবেই ঘাটতে ঘাটতে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সাথে সম্পর্ক নিশ্চিত করে ঘোস্ট। এই সম্পর্কের উদঘাটন নতুন সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করে, কেন প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় গৃহীত সব সিদ্ধান্তই আমেরিকার স্বার্থে গিয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইকার্টের সাথে যোগাযোগ করে ঘোস্ট। কিন্তু তখনই অ্যাডাম ল্যাঙ নিহত হন বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীদের একজনের গুলিতে। অসমাপ্তই থেকে
যায় একপ্রকার। কিন্তু না, বইটি প্রকাশিত হয়ে প্রিমিয়ারের দিন নতুন তথ্যের ভিত্তিতে ঘোস্ট উদ্ধার করে, অ্যাডাম ল্যাং নয়, বরং তার স্ত্রী রুথই সিআইএ-র পক্ষে কাজ করে গেছে সারাজীবন আর স্বামীকে দিয়ে আমেরিকার স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছেন।

পোলানস্কির সিনেমার চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যের মতো এই সিনেমাটায় গতি এগিয়েছে ধীরে ধীরে। চাইলেই একে গতানুগতিক হলিউডের সিনেমার মতো বেশ চঞ্চল হিসেবে তৈরী করা যেতো। কিন্তু তেমনটা করেন নি পোলানস্কি। ফলে সিনেমাটা ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। দ্য ঘোস্ট রাইটার রবার্ট হ্যারিস এর উপন্যাস 'দ্য ঘোস্ট' অবলম্বনে নির্মিত। কাহিনীর সারসংক্ষেপ থেকেই বোঝা যায়, অ্যাডাম ল্যাঙ এখানে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে ইঙ্গিত করে। বিবিসি তার এক রিপোর্টে এই নিয়ে বিস্তারিত বর্ননা করেছিল। সিনেমায় রাইকার্টকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন কুক এবং ইউএস স্টেট সেক্রেটারীকে কন্ডোলিসা রাইজ এর মতোই উপস্থাপন করা হয়েছে।

অ্যাডাম ল্যাঙ চরিত্রে বন্ড খ্যাত পিয়ার্স ব্রসনান অভিনয় করেছেন, ঘোস্টের চরিত্রে ইওয়ান ম্যাকগ্রেগর। বেশ সুন্দর কিছু ব্যাকগ্রাউন্ডে সিনেমার নির্মান দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। সঙ্গীতও বেশ আকর্ষনীয়।

সিনেমার গল্প তেমন কোন বিতর্ক তৈরী না করলেও সিনেমার অর্থায়ন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরী হয়েছে। সিনেমাটির প্রায় বেশীরভাগই শ্যুটিং হয়েছে জার্মানীতে। এমনকি, মোট ৪৫ মিলিয়ন ডলারের এই সিনেমায় ৭ মিলিয়ন ডলার বহন করেছে খোদ জার্মানী। ২০১০ সালে জার্মানী কর্তৃক বিনিয়োগকৃত সিনেমায় খুব কম সংখ্যকই রয়েছে যারা মিলিয়নের ঘরে পৌছাতে পেরেছিল। সূত্র এখানে। এর আগে "ভালকেইরী" সিনেমার জন্যও জার্মান সরকার বেশ ভালো পরিমান অর্থ সরবরাহ করেছিল।

এখানে আটকে গিয়েছি। পোলানস্কি জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে সিনেমা নির্মান করেছিল, ভালকেইরী জার্মান নেতা হিটলারের বিরুদ্ধে কিছু জার্মান সেনা অফিসারের বিদ্রোহের কাহিনী - কিন্তু এ সকল ক্ষেত্রে জার্মানী কেন অর্থ সহায়তা দিচ্ছে?

হয়তো জার্মানীর রাজনীতি নিয়ে ভালো জানেন কিংবা জার্মানীতে বহুদিন বসবাস করছেন এমন কেউ এ ব্যাপারে সহায়তা করতে পারবেন।

ফ্যানপেজ

লো বাজেট ফিল্মমেকারদের জন্য আদর্শ হতে পারে Christopher Nolan এর সিনেমা “Following”

অন্তহীন: অন্তর্জালিক ভালোবাসায় অন্তহীন অপেক্ষা

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১০
১৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×