somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Life In a Metro: শহুরে কাব্য

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমা না দেখেও সিনেমা মনে রাখা যায় – লাইফ ইন আ মেট্রো আমার জীবনে সবচে’ বড় উদাহরণ। এই সিনেমাটা না দেখলেও মনে রাখতাম, একটাই কারণ, প্রিয় গায়ক জেমস এই সিনেমায় হিন্দীতে গান গেয়েছেন, তার সেই চিরাচরিত স্টাইলে ঝাকড়া চুল ঝুলিয়ে মাতাল ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়েছেন, সর্বোপরি এই সিনেমার একটি অংশ হয়েছেন। সিনেমাটা ভুলে যাওয়া আরও কষ্টকর হয়ে গেল দেখার পর। ঢাকা শহরের এত যন্ত্রনা, যানযট, দুর্বিষহ জীবন, নোংড়া জীবন পদ্ধতি ইত্যাদি ইত্যাদি সত্ত্বেও আপনি ঢাকা শহরে কেন বাস করছেন – এই প্রশ্নের জবাবটা বোধহয় পাওয়া যাবে লাইফ ইন আ মেট্রো তে। ঢাকা একটা মেট্রো, এবং মেট্রোর জীবন এমনই যে সবকিছু সত্ত্বেও এখানেই থেকে যাই আমরা। এখানে রঞ্জিত-শিখার মতো দম্পত্তি আছে যারা নিজেদের পারিবারিক জীবনে শান্তি খুজে পায় না, রঞ্জিত খুজে নেয় নেহার মতো কোন সুন্দরী তন্বীকে, শরীরে তৃপ্তিসন্ধান করে আর শিখা নিরাপত্তা-সম্মান খুজে ফেরে আকাশ শর্মার বাহুডোরে। আছে শ্রুতি-মন্টির মতো কসফিউজড জুটি। মন্টি টিপিক্যালপন্থায় জীবনঙ্গিনী খুজছে, শ্রুতি খুজছে আধুনিক মানুষের মতো করে। আছে অমল-শিবানীর মতো জুটি যারা জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে যৌবনের পছন্দের মানুষটির কাছে আশ্রয় খুজে। আর রাহুলের মতো কিছু মানুষ তো সবসময়ই আছে, থাকবে যারা চোখের সামনে পছন্দের মানবীটিকে আরেকজনের শয্যাসঙ্গিনী হতে দেখবে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারবে না, “তোমাকেই আমার চাই” ।

অনুরাগ বসু সিনেমার পরিচালক। এই ভদ্রলোক নাকি ডার্ক প্যাশন এবং অ্যাডাল্টারী থিম নিয়ে সিনেমা নির্মানের জন্য সুপরিচিত, এর আগে গ্যাঙস্টার, মার্ডার সিনেমা তারই চিহ্ন বহন করে। ভারতীয় সিনেমায় নতুন কিছু প্রয়োগ করেছেন তার এই সিনেমার মাধ্যমে। মেট্রো নামের একটা তিন সদস্যের ব্যান্ড যারা সিনেমার কাহিনীকে টেনে নিয়ে যেতে সাহায্য করে – এই কনসেপ্ট প্রথম অনুরাগ বসুই দেখিয়েছেন। সিনেমার কাহিনীতে নতুনত্ব আছে কিন্তু সেটা কতটা মৌলিক সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিছু সিনেমার বোদ্ধা। দ্য অ্যাপার্টমেন্ট নামের ৬০ এর দশকের এক সিনেমার সাথে রঞ্জিত-শিখা-আকাশের কাহিনীর মিল পাওয়া যায়। অনুরাগ বসুর আইডিয়াকে বাস্তবতা দান করতে প্রিতমের সঙ্গীত অসাধারণ হয়েছে, গানগুলো তো বটেই।

কিন্তু তার পরেও কিছু কথা থেকে যায়। কাহিনী, উপস্থাপন, সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফী সব দিক দিয়ে নতুনত্ব আর অভিনবত্ব দেখা গেলেও পরিচালক টিপিক্যাল হিন্দী সিনেমা থেকে পুরোটা সরে আসতে পারেন নি। আর তাই বিয়ের ভরা মজলিশে শ্রুতি তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছে মন্টিকে আর বিয়ের পোশাকেই ঘোড়া নিয়ে ছুটতে ছুটতে মন্টি পৌছে গেছে রেলস্টেশনে। এই রেলস্টেশনেই এসে জড়ো হয়েছে আকাশ-শিখা-রাহুল-নেহা-অমল। হাস্যকর।

অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রত্যেকেই অসাধারণ কাজ করেছেন সিনেমায়। শিল্পা শেঠীর উপস্থাপন বেশ মোলায়েম, আপন করে নিতে চায়। নিষ্পাপ মুখের পেছনে কত দু:খ নিয়ে নেহা মরে যেতে চায় তার প্রশংসা অবশ্যই করতে হয়। আর ইরফান খানের গোবেচারা অভিনয় এটাই জানিয়ে দেয়, আরও অনেক কিছু পাওয়ার আছে এই মানুষটির কাছে।

অনেক বছর আগে একটি পুরুষ তার নারীটিকে রেল স্টেশনে বিদায় দিয়ে পাড়ি দিয়েছিল পরবাসে, অনেক বছর বাদে একটি নারী তার ভালোলাগার পুরুষটিকে বলেছিল, “ইউ গো, স্টার্ট আ নিউ লাইফ” – সেও এই রেলস্টেশনেই। রেলস্টেশনেই তো বলবে কারণ এটাই যে মেট্রোর প্রধান দরজা।


অন্যান্য পোস্ট:
The Butterfly Effect: অতীতের সংশোধন

The Ghost Writer: আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্তরালের গল্প

লো বাজেট ফিল্মমেকারদের জন্য আদর্শ হতে পারে Christopher Nolan এর সিনেমা “Following”

শেয়ার করুন: সম্প্রতি কি সিনেমা দেখলেন?
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×