somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্তর্জালিক ভালোবাসায় অন্তহীন অপেক্ষা

২৩ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসা তার প্রকাশভঙ্গী পাল্টেছে, পাল্টেছে তার নির্মান পদ্ধতি কিন্তু প্রাচীনতম অনুভূতি এই ভালোবাসার ফলাফল কতটুকু অপরিবর্তনীয় আছে? অতীতের প্রেম-ভালোবাসা কতটুকু সুখ এনে দিত আর এখনকার প্রেমই বা কতটুকু দিতে পারে- কিংবা যাকে ভালোবাসা হলো তাকে কতটুকুই বা জানা হলো, কবে তাকে পুরোপুরি পাওয়া গেল, কতদিনই বা অপেক্ষা করতে হবে পুরোটা জানার জন্য, পাবার জন্য – এ সবই অন্তহীন প্রশ্ন। বোধহয় এই অপেক্ষা অন্তহীন, শেষ হবার নয়। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী তার অন্তহীন ছবিতে এর জবাব দেবার সামান্য চেষ্টা করেছেন।

মানুষগুলো সংখ্যায় খুব বেশী নয় – সৎ আর দক্ষ পুলিশ অফিসার অভীক, নিষ্ঠাবান টিভি রিপোর্টার বৃন্দা, তারই অফিসের বস পারো, পারোর স্বামী রঞ্জন বা রনো, অভীকের পিসি, মি. এবং মিসেস মেহরা – সব মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ন চরিত্র এরাই। প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবন একেক বৈশিষ্ট্যে ভিন্নতর, কিন্তু তাদের সবার মধ্যে রয়েছে এক সম্পর্ক – আন্ত:সম্পর্ক। রঞ্জন অভীকের দাদা, সে সূত্রে পারো তার বৌদি, বৃন্দা পারোর প্রিয় অধস্তন সহকর্মী, অভীকের পিসি আর পারোর মধ্যে খুব সমঝোতাপূর্ন উষ্ণ সম্পর্ক – সবাই আন্তসম্পর্কের শক্ত বাধনে বাধা, কিন্তু তা সত্বেও এই সম্পর্ক তাদের মধ্যে দুরত্ব তৈরীতে বাধা হতে পারে নি। পারো আর রঞ্জন স্বামী-স্ত্রী কিন্তু তারা আলাদা থাকছে অনেকদিন ধরেই। মি. এবং মিসেস মেহরা একসাথে থাকছেন কিন্তু মনের দিক দিয়ে যোজন যোজন দুরত্ব – যেন কোন প্রতিষ্ঠানের চুক্তিবদ্ধ দুজন ব্যক্তিমাত্র। যেখানে স্বাভাবিক সম্পর্কের রূপই এমন, সেখানে ভালোবাসা গড়ে উঠবে ভিন্ন কোন পদ্ধতি অনুসরন করে, সে আর এমন কি আশ্চর্য?

ব্যস্ত অভীক আর বৃন্দার অবসরের সঙ্গী ল্যাপটপ আর সেখানেই চ্যাট করতে গিয়ে জানাশোনা দুজনের কিন্তু কেউ জানে না কারও নামটি, কিংবা পরিচয়। এই জানাশোনা যে একসময় একটু গভীর ভালোলাগার দিকে গড়াবে তা কি কেউ জানতে পেরেছিল? অনলাইনে এই দুজনের মনের গভীরতা যতটুকু, বাইরে কিন্তু ততটা নয়। দেখা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু কথাগুলোতে প্রাণ ছিল না, আলাপ রূপ নিয়েছে তর্কে। সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফেরার তাড়া থাকে শুধু অনলাইনে পারস্পরিক দুরত্বকে কিছুটা কমিয়ে আনা, একের মনের উষ্ণতায় অন্যকে আলিঙ্গন করা।

পারো আর রনোর মধ্যেকার সম্পর্কটি যেন অনলাইন সম্পর্কের বাস্তর প্রয়োগ - দূরে থাকলে কাছাকাছি হবার ইচ্ছে হয়, কিন্তু কাছে থাকার ভয়টা অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে মি. এরং মিসেস মেহরার সম্পর্কের কাঠিন্য কাছে থাকার সমস্যার চূড়ান্ত রূপ। অথচ অবিবাহিত অভীকের পিসি - সেও কিন্তু অপেক্ষা করে যায় একজনের, ভরাট কন্ঠের কোন ফোন কলের, সেই যে বিশ বছর আগে তার মন নদীতে স্রোত তুলেছিল।

পরিচালক অনিরূদ্ধ রায় চৌধুরীর এটা দ্বিতীয় ছবি, অনুরননের পরে এটা তার দ্বিতীয় সাফল্য। সিনেমা নির্মানের আগে বিজ্ঞাপন-সিনেমা বানিয়েছেন, তাই কাজের মধ্যে এর প্রভার সুস্পষ্ট। অন্তত: কাহিনী নির্মানে এবং চরিত্র বিন্যাসে যথেষ্ট পরিপক্কতার পরিচয় রেখেছেন। বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাতা হবার কারনেই কিনা জানি না, অন্তহীন মুভিতে বিজ্ঞাপনের গন্ধ তীব্র। স্টার আনন্দ চ্যানেল, রিলায়েন্স মোবাইল আর ইন্সুরেন্স, পেপসি কোলার ব্যবহার ঐ মুহুর্তগুলোকে বিজ্ঞাপনে রূপ দিয়েছে; এদের উপস্থিতি বড় প্রকট, বড় বেশী নগ্ন।

শ্যামল সেনগুপ্তকে তার কাহিনী আর চিত্রনাট্যের জন্য বাহবা দিতে হয়। অল্প কটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমাজের একটি বর্তমান রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। অবশ্য উচ্চ মধ্যবিত্ত সমাজের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তার অন্তহীন মুভিতে, তা কতটুকু সার্থক হয়েছে তা বিচার করবে সেই সমাজের অধিবাসীরা। কিন্তু ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটে চলা আর দিন শেষে হুইস্কির বোতলে শান্তি খোঁজা - অস্থির সময়েরই ইঙ্গিতবাহী। প্রযুক্তি আর অর্থ যদি পরিবার পদ্ধতির প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতে সাহায্য করে তবে তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা যায়।

চিত্রনাট্যের অগভীরতা আর ছোটখাটো দুর্বলতা ঢেকে গেছে অসাধারন সব গান আর সংলাপের মাধ্যমে। শ্রেয়া ঘোষালের যাদুকরী, মোলায়েম কন্ঠে আধুনিক কথাসমৃদ্ধ গানগুলো সিনেমার গতিকে সঞ্চাবিত করেছে, এনে দিয়েছে স্বীকৃতি। সবচে' বেশী ধন্যবাদ প্রাপ্য ক্যামেরার পেছনের মানুষটির, তিনি হলেন অভীক মুখোপাধ্যায়। বৃষ্টিস্নাত কলকাতা শহরকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে নি:সন্দেহে। মি. মেহরার কাছে সাক্ষাতকার নিচ্ছে একাকী বৃন্দা, যে একজন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী - এ ধরনের দৃশ্য পরিচালকের অমনযোগিতা তুলে ধরে।

বৃন্দা চরিত্রে রাধিকা আপ্তে খুব ভালো অভিনয় করেছেন। তার সুন্দর হাস্যমুখ, আর প্রানবন্ত অভিনয় চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে, সেই তুলনায় অভীক চরিত্রে রাহুল বোসের অভিনয় অনেকটা স্থির। অবশ্য তার চরিত্রটাই এমনটি দাবী করে কিন্তু তাই বলে এর মধ্যে আরেকটু গতি আনা যেত, তাতে সিনেমার শ্রীবৃদ্ধি বৈ কমতো না। তাছাড়া ভিন্ন ধারার প্রায় সব চলচ্চিত্রে রাহুল বোসের সরব উপস্থিতি তাকে একটি নির্দিষ্ট বন্ধনীর মধ্যে যেন আবদ্ধ করে না ফেলে যে ব্যাপারে সতর্কতা প্রয়োজন। পারোর চরিত্রে অপর্না সেন আর অভীকের পিসির চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুরের অনবদ্য অভিনয় করেছেন।

পরিচালক অনিরুদ্ধ ইতিমধ্যেই দুএকটি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন অন্তহীন মুভির মাধ্যমে। পরবর্তী মুভিগুলোতে এ ধরনের দুর্বলতাগুলোকে কাটিয়ে তুলবেন এমনটি আশা করা খুব একটা অন্যায় হবে না বোধহয়।

দারাশেকো.ইনফো
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×