somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রান্সফর্মারস: বর্তমানে ভবিষ্যত প্রযুক্তির মুভি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেকনলজির সাহায্যে কি করা সম্ভব তা বোঝার জন্য এই মুহুর্তে ট্রান্সফর্মারস একবার মনযোগ দিয়ে দেখাই যথেষ্ট। পরিচালক মাইকেল বে বেশ দক্ষতার সাথে কম্পিউটার প্রযুক্তির যথোপযুক্ত এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন তার ট্রান্সফর্মারস মুভিতে। শৈশবের অবাস্তব কল্পনাগুলোকে বাস্তব রূপে দেখার সুযোগটা মিলে গেল ট্রান্সফর্মারস মুভির মাধ্যমে।

মুভির টাইটেল এবং এর সাথে এফেক্ট সাউন্ড সহজেই বলে দেয় ট্রান্সফর্মারস কি ধরনের ছবি। ড্রিমওয়ার্কস পিকচার এবং প্যারামাউন্ট পিকচার্সের যৌথ প্রযোজনার মুভি ট্রান্সফর্মারস। প্রযোজকের তালিকায় রয়েছে স্টিভেন স্পিলবার্গের নাম। স্পিলবার্গের নামের সাথে টেকনলজির অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আর জুরাসিক পার্ক, সেভিং প্রাইভেট রায়ান মুভিগুলোর সাথে মিল রেখেই ট্রান্সফর্মারস একই বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে।

ছবির শুরুতেই অফ ভয়েস থেকে যান্ত্রিক কন্ঠস্বরে জানা যায় কি কারণে পৃথিবীতে ভিন্ন জগতের অতি উন্নত প্রাণীদের আনাগোনা এবং তাদের অভ্যন্তরীন কলহের প্রভাবে পৃথিবী কি বিপর্যয় হতে পারে। অস্কারজয়ী মুভি লর্ড অফ দ্যা রিংসে সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল একটি আংটি। ট্রান্সফর্মারস মুভিতে সেটি একটি কিউব। সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু এই ঘনকটি একসময় হারিয়ে যায় এবং পৃথিবীতে এসে পড়ে। একে দখলে নেয়ার জন্য ভালো এবং মন্দ দলের অতি উন্নত প্রজাতির রোবটের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। “লাইক অল গ্রেট পাওয়ার, সাম ওয়ান্টেড ইট ফর গুড অ্যান্ড আদারস ফর ইভল, সো বিগিনস দ্যা ওয়্যার” - পৃথিবীর চিরন্তন এই সত্যটিকে তুলে ধরা হয়েছে একদম শুরুতেই।

মিডল ইস্টকে বোধহয় হলিউডের পরিচালকরা বেশ ভালোবাসেন। এ কারণে অন্যান্য মুিভর মত এখানেও প্রথম অ্যাটাক হয় কাতারের ইউএস মিলিটারী বেজের ওপর। তিনমাস আগে আফগানিস্তানে বিব্ধস্ত একটি এয়ারক্রাফট ৪৫০০এক্স ফিরে আসে কাতারের রেসট্রিকটেড এয়ারবেসে। ল্যান্ড করার পরেই তার প্রভাব শুরু হয় - প্রথমে রাডার বিকল হওয়া এবং তার পরেই বিস্ময়করভাবে এয়ারক্রাফটের পরিবর্তিত দানবাকৃতি উত্তেজনার সৃষ্টি করে। পরিচালক এবং এডিটর বেশ সফলতার সাথে প্যারালাল কাটে ছোট ছোট শটের মাধ্যমে ধীরে ধীরে উত্তেজনা তৈরী করেছেন। এর পাশাপাশি এফেক্ট ও অ্যামবিয়েন্ট সাউন্ড সিকোয়েন্সটিকে বাস্তব করেছে।

পরের সিকোয়েন্স আমেরিকায়, গল্পের প্রধান চরিত্র স্যাম উইটউইকির স্কুলে, যে তার গ্রেট গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার বিখ্যাত স্কলার আর্চিবাল্ড্ উইটউইকির ব্যবহৃত কিছু জিনিস বিক্রির চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য,বিক্রয় এবং জমানো টাকা আর বাবার সহায়তায় একটি গাড়ি কেনা যা তার পছন্দের মেয়ে মিকেলাকে আকৃষ্ট করতে সহায়তা করবে। এই গাড়ি কিনতে গিয়েই স্যাম জড়িয়ে যায় রোবটদের ভালো দল অটোবটস্দের সাথে যারা পৃথিবীতে এসেছে বিদ্রোহী ডিসিপটিকনসদের ঠেকাতে, এবং কিউব উদ্ধার করে ধংস করতে।

অটোবটস্রা সবাই গাড়ির ছদ্মবেশে থাকে। স্যামের কেনা ১৯৭৬ মডেলের ম্যাকারো গাড়িটা আর কিছু না, অটোবট ’বাম্বলবি’ যে পরবর্তীতে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের ডেকে জড়ো করে। অটোবটস্দের নামগুলো বেশ ব্যঞ্জনাময় - অপটিমাস প্রাইম (দলনেতা), জ্যাজ, আয়রনহাইট, র‌্যাচেট। অন্যদিকে, ডিসিপটিকনসদের প্রধান মেগাট্রন । মেগাট্রনের কন্ঠস্বর দিয়েছেন ম্যাট্রিক্স খ্যাত বিখ্যাত ভিলেন হুগো ওয়েভিং।

ডিফেন্স সেক্রেটারী জন কেলার একদল তরুন ছেলেমেয়ে নিয়ে কাতার মিলিটারী বেসে ডাটা হ্যাকারকে চিহ্নিত করতে মাঠে নামেন এবং স্যাম, অটোবটস্ এবং ডিসিপটিকনসদের সাথে জড়িয়ে যান। যুদ্ধ শুরু হয় এবং ডিসিপটিকনস্রা পরাজিত এবং ধংস হয়। সবই ফিরে যায়, কেবল বাম্বলবি থেকে যায় স্যামের সাথে।

ছবিটি আকর্ষনীয় হয়েছে স্পেশাল এফেক্ট এবং অ্যানিমেশনের সফল প্রয়োগে। ক্যামেরার অবস্থান এবং বিক্ষিপ্ত অবস্থান পরিবর্তন যুদ্ধের সিকোয়েন্সগুলোকে উত্তেজনাময় করেছে। অ্যানিমেশনগুলো এতটাই নিখুত ছিল যে একবারও মনে হয়নি এগুলো অবাস্তব। ছোট গাড়ি থেকে বিশালকায় রোবট এবং হেরিকপ্টার, ফাইটার জেট থেকে রোবটে পরিবর্তনের অ্যানিমেশনগুলো বিস্ময়কর। পাশাপাশি ব্যকগ্রাউন্ড সাউন্ড আর এফেক্ট সাউন্ডের যথাযথ ব্যবহার দর্শককে ছবির সাথে মিশে যেতে সাহায্য করেছ।

এতকিছুর পরেও কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্যনীয়। যান্ত্রিক রোবটরা এত উন্নত প্রজাতি হওয়া সত্ত্বেও অপছন্দের ব্যক্তির গায়ে প্রস্রাব করা হাস্যকর, যন্ত্রের প্রস্রাব করাতো অযৌক্তিক। শুটিং এবং কন্টিনিউটিতিতে কিছু গোলমাল ধরা পড়েছে। যেমন শুরুতে স্যামের ভাষ্যানুযায়ী আর্চিবাল্ড্ উইটউইকির অভিয়ান ছিল ১৮৯৭ সালে কিন্তু পরে ফ্রেনজি নামের ডিসিপটিকন যখন এয়ারফোর্স ওয়ানে ভাইরাস প্ল্যান্ট করছিল তখন দেখা যায়, নিউজপেপারে প্রকাশিত খবর ১৮৯৫ সালের। ভুলটা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত তা জানা নেই। এছাড়াও আরও কিছু কন্টিনিউটি সমস্যা দেখা যায় যা খুব ভালো করে না দেখলে ধরার উপায় নেই।

স্যামের ভুমিকায় সিয়া লাবেওফ চমৎকার অভিনয় করেছে। ডিফেন্স সেক্রেটারীর চরিত্রে জন ভয়েট তার যোগ্যতার যথার্থ পরিচয় দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রান্সফর্মারস এক বসাতে দেখার মত টান টান উত্তেজনার মুভি।

পুরানো হয়ে যাওয়া জনপ্রিয় এই মুভিটির রিভিউ যায়যায়দিন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল, সম্পাদিত হবার পর। কিন্তু মূল লেখাটাই তুলে দিলাম, কারণ ওদের আর্কাইভটা নষ্ট

আমার ব্লগ
দারাশিকো.ইনফো
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৭
১১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×