"বুকের উপরে জগদ্দল পাথরটাকে, ওয়াইনে চুবিয়ে আড়াল করতে ইচ্ছে করছে। .......
দাদা দুবোতল দিন না,
আজ যে বড্ড ঝোঁক চেপেছে।
ঐ যে সবচে উঁচু বিল্ডিংটার মাথায় রাতভর জ্বলতে থাকা বাতিটা যখন ঘন কুয়াশায় টিমটিমে আলো ছড়িয়ে আবিষ্ট করে চারপাশ।
মাথার ভেতরটা কেমন জানি ওলট পালট হয়ে যায়।
কি ভীষন আর নিষ্ঠুর একা সে,
যেভাবে একা এখন আমি।
ও দাদা! সেকি, দিন না দাদা দুবোতল।
এইযে দেখুন পুরো পয়সা এনেছি সাথে।
প্লিজ, দিন না দাদা।
আমি ছিলাম কোন এক ঘুড়ি উড়ানো দলে,
রঙ্গীন হেমন্তের বিকেল গুলোতে,
ঘুড়ি আমার উড়ে বেড়াতো মস্ত ওই আকাশেতে।
গোধূলীর আবছা আলোতে ঘরে ফেরার সময়ে খেলার মাঠে কি হয়েছে তা নিয়ে হাসাহাসি আজো কান পাতলে মনের দূর থেকে ভেসে আসে।
দাদা, বিশ্বাস করুন আজ থানার দারোগা বাবু এদিকটাতে আসবেন না।আপনার কোন চিন্তা নেই বাবু। ও দাদা দিন না! দুবোতল।
বাড়িতে রাস পূর্নিমায় দু দিনের মেলা বসতো, মাইল খানেক দূরে। রাত করে মেলা থেকে ফেরার পথে আমাদের যে কত দৈত্য, দানো তাড়া করতো!
আজ হয়তো তাদের দেখা পেলে দু চুমুক দিতাম।
শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন আর বিকেলের ক্রিকেট,
জানেন দাদা, বড্ড ইচ্ছে করে আবার সেই বিকেলগুলো ফিরে পেতে।
হয়তো স্বর্গ এতো সোনালী নয়।
সাইকেল শেখার সময় পাওয়া চোটগুলোও আজ বড্ড মধুর লাগে।
স্বরস্বতী পূজোর সময়, পিঠা আর কূল খাওয়া। আর পূজোর রাতে হরেক রকম অনুষ্ঠান।
দাদা এখনের পূজোতো কোন মতে অঞ্জলী দিতে পারলেই হলো।
আজো আমি নাকে মিষ্টি খেজুর রসের ঘ্রান পাই। আজো আমার চোখে ভাসে পথের ধারে কাঠের বেঞ্চী,
যেখানে বসলে বিশাল ধান ক্ষেতের প্রান্তরে লাইনে ছুটে আসা বিকেলের ট্রেন দেখা যেত।
আজো আমার খুব করে ইচ্ছে করে, টিয়া পাখির ঝাঁক হতে একটিকে খাচাঁয় পুরে কথা শেখানোর।
চাঁদমামাটাকে একা করে দিয়ে আমি হঠাৎ বড়ো হয়ে গেলাম।
স্বপ্নগুলো বড্ড ছোট্ট ছিল আমার,
পথের ধারে বসে পাহাড় হতে ফিরে আসা গরুর পাল দেখার মত,কুয়াশা ভেজা ভোরে ফাঁকা রাস্তায় দৌড়ানোর মত, বছরের শুরুর দিকে উঠোনে জাকে আগুন লাগিয়ে চারপাশে ঘোরার মত,পূজোতে বাজি পোড়ানোর মত,
বাড়ির উঠোনে বসে হাতে হাত রেখে তারা গোনার মত,
ছাদে বসে পূর্নিমায় স্নান করার মত,
অধর নিংড়ানো চুপিসার ভালোবাসার মত,
এই ছাপোষা মধ্যবিত্ত স্বপ্নগুলো আজ অবধি আমায় শ্বাস প্রশ্বাস যোগায়।
কুয়াশা নিজেই আজ মাতাল হয়ে পুরো রাত নেশায় ভরিয়ে দিয়েছে। মায়াময় করে তুলেছে চারপাশ।
ও দাদা, মা কালীর দিব্যি। পুরো দুশো টাকা বাড়তি দিবো, সাথে তুমিও গলাটা ভিজিয়ে নিওখন। দাওনা দুবোতল।
অতপর উন্মাদ মাতাল লোকটি তীব্র আশায় আকাশের পানে চেয়ে থাকে। যেনো ওখান থেকে এক ফোঁটা করুনা এসে তাকে রঙ্গীন করবে। রাত ভোর হতে চলেছে, মহাকালের রেখা ধরে এগিয়ে চলছে জীবন। এগিয়ে চলছে সময়। টিক টিক টিক টিক..... ...... .......।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২১ সকাল ৭:৪৩