জনি হোসেন কাব্য : আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। ক্লাসে এসে শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের জীবনের লক্ষ্য কী? কে কী হতে চাও বলো? একে একে সবার কাছথেকে উত্তর নিলেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষক-এই উত্তরগুলোই উঠে এসেছিল। আমিও এগুলোর মধ্যেই একটা বলেছিলাম। বলার জন্যই বলা। সত্যি কথা, এসবের কোনোটিই আমার হতে ইচ্ছে করতো না। লেখক হওয়ার ইচ্ছেটা মনে মনে পুষতাম যদিও। সবাই হাসাহাসি করবে বলে সেদিন 'লেখক হতে চাই' উত্তরটি দিতে পারিনি। নবম শ্রেণিতে উঠলাম। রোল নং- ১৩। পরিবারের ইচ্ছেতে বিজ্ঞান বিভাগ বেছে নিলাম। পড়তে গিয়ে খুব একটা মনোযোগী হতে পারিনি। দশমে উঠে রোল নং হয়ে গেল ৫২ (একদম ভাষা আন্দোলন, হিহিহি)। চারগুণ বৃদ্ধি! কী আর করা, পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়ে গিলতে শুরু করলাম বই। এস এস সি-তে মোটামুটি একটা রেজাল্ট হলো। এইচ এস সি-তে উঠে বিজ্ঞান বিভাগকেই গলাধঃকরণ করতে হলো। বই ও পরিস্থিতির সাথে নানান জোরাজুরি করে কোনো রকম সে ধাপও অতিক্রম করলাম। বুঝা হয়ে গেলো, এ বিভাগে পড়ে আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। উল্টো হতাশ হচ্ছি। ততদিনে লেখক হওয়ার আগ্রহটা তুমুল পর্যায়ে পৌঁছে গেল। লেখকদের জীবনী পড়া শুরু করলাম। দেখলাম বেশিরভাগ লেখকই কোনো না কোনো পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, সাংবাদিকতা করেছেন। ভাবলাম, তাহলে সাংবাদিক হবো। যদিও নবম শ্রেণি থেকে পত্রিকার সাথে নিয়মিত সখ্যতা ছিল। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক বিভাগ বেছে নিলাম। পড়াশুনাকে উপভোগ করতে শুরু করলাম। প্রতি সেমিস্টারে মনমতো ফলাফল এলো। ব্যবহারিক জীবনে কালের কণ্ঠ-এর মতো একটি পত্রিকায় কাজ করে নিয়মিত চিপ রিপোর্টারের প্রশংসা পেলাম। পাশাপাশি খুব ভালোভাবে লেখালেখির চর্চাটা চালিয়ে গেলাম, এখনও যাচ্ছি, যাবো। এই হচ্ছে আমার বড় হওয়া ও বেড়ে ওঠার নিখাদ সত্য একটি গল্প। এমন গল্প প্রায় সবারই। পার্থক্যটা হচ্ছে আমি এক পর্যায়ে এসে পছন্দের বিভাগ বেছে নিতে পেরেছি। কিন্তু অনেকে তা পারেন না। ফলে একটা সময় ঝরে যেতে হয়। দোষটা কার? অভিভাবকের নাকি সন্তানের? হয়তো কারোই না। কারণ জড়তা, ভয়, লজ্জা অথবা যে কারণেই হোক সন্তান বলতে পারে না তার ইচ্ছের কথা। ফলে অভিভাবকরা তাদের পছন্দমতো সাব্জেক্ট চাপিয়ে দিতে বাধ্য হন। অনেক ছেলেমেয়ে সেটি জোর করে হলেও হজম করতে পারে, অনেকে পারে না। যারা পারে না তাদের ভবিষ্যৎ বিপদে পড়ে যায়। এই সংখ্যাটাই বেশি। সেই শিশুকিশোরকেই যদি বেড়ে ওঠার বয়সে একটি ডায়েরি দেওয়া হয়-যেখানে সে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ, ভালো-মন্দ ইত্যাদি বিষয়ে লিখতে পারবে। কোন কোন বিষয়ে লিখবে সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া থাকবে। অনেক নিঁখুত, সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জানতে চাওয়া হবে, সে উত্তর দেবে। পুরো ডায়েরিটা লেখা হয়ে গেলে অভিভাবক পড়বেন সেটি। পড়ে সন্তানদের ভেতরগত না-বলা অনেক অজানা কথা জানতে পারবেন এবং তাদের ব্যাপারে সঠিক পরিচর্যা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ব্যাপারটা শিক্ষামূলক ও চমৎকার। এমন একটি ডায়েরির সাথে আজ পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। নাম 'ম্যাজিক ডায়েরি'। যে ডায়েরিটি সম্পূর্ণ লেখার পরে শিশুকিশোরমনে লুকিয়ে থাকা কঠিন সত্যগুলো সুকৌশলে উঠে আসবে।
ম্যাজিক ডায়েরির বর্ণনা:
প্রথম পলকেই প্রচ্ছদটি শিশুকিশোরদের নজর কাড়বে। অনায়াসেই তাদেরকে ভাবাবে। যার মধ্য দিয়ে চিন্তাশক্তি প্রখর ও উর্বর হবে। পৃষ্ঠা উল্টালেই 'আমার পরিচয়' আসবে। সেখানে কয়েকটি লেখার সামনে খালি ঘর রয়েছে, যেগুলো পূরণ করে ডায়েরিলিখিয়ে তাদের পরিচয় দেবে। এরপর আমার শখ, আমার স্বপ্ন, ভ্রমণ ইত্যাদি রঙিন পাতাগুলো মন চাঙ্গা করে তুলবে। পরবর্তী পাতাগুলোতে কিছু স্বাস্থ্যসম্মত খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদন সম্পর্কে জানতে পারবে তারা। ফটোগ্রাফি ও আঁকাফটো সংরক্ষণের জন্য আলাদা পাতা রয়েছে। পড়া বইয়ের তালিকা লেখার জন্য শৈল্পিক একটি পাতা বরাদ্দ আছে। তাদের দেখা নানা রকম পেশার কথাও লিখতে পারবে তারা। 'ক্লাসের বাইরে' পাতাটি তাদের সমৃদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করবে। এরপরের পৃষ্টাগুলোতে নজর বুলিয়ে সামাজিক ও নৈতিক অনেক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। পাশাপাশি বিখ্যাত অনেকের সম্পর্কে ধারণা পাবে। 'আমার স্বীকারোক্তি' পাতাটি দারুণ এক স্বীকারোক্তি নিয়ে ফেলবে তাদের। বড়রা কী সত্যিই বোকা, আমার আমি, স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর নিয়ম, বয়ঃসন্ধি, আমার কাউকে ভালো লাগে-এই বিষয়ের পাতাগুলোতে ভ্রমণ করে অনেক বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবে। পরবর্তী পাতাগুলোতে কিশোরীরা তাদের পিরিয়ড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিজ্ঞাসা ও উত্তরের সম্মুখীন হবে। মা ও মাটি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খোঁজা, একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে সাক্ষাৎ, আমার দেশপ্রেম-এই পাতাগুলো পড়ে ও লিখে মন ও মগজে দেশপ্রেমের বীজ বপন করতে পারবে। পরের পাতাগুলোতে গিয়ে একাকিত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে তার। সফলতা ও হতাশা দূর করার সূত্র খুঁজে পাবে একটু পরেই। টানা কয়েকটি পৃষ্ঠায় তারা লিখবে- অনেকবার চেষ্টা করেও যা পারেনি, কেমন করে কথা বলে, কী করতে ভালো লাগে, যে কাজ সুন্দরভাবে করতে পেরেছে, যা ভালো লাগে, যে ১০টি কাজ ভালোভাবে পারে বা পারে না ইত্যাদি বিষয়। তারা আরও লিখবে- স্বপ্নের কথা, অজুহাতের কথা, স্কুলের যে বইটি ভালো লাগে, যে বইটি পড়তে ভালো লাগে না ও কেন লাগে না, প্রিয় মানুষের কী কী ভালো লাগে, প্রিয় গান, বন্ধু সম্পর্কে, প্রিয় খাবার, যা দেখে শিখতে ইচ্ছে হয়, পছন্দের কাজ, নিজের ভুল সম্পর্কে, বনভোজন ও বইমেলার স্মৃতি, টিভিতে দেখা স্মরণীয় খেলার কথা, অসহায়দের জন্য যা যা করতে চায়, যে ধরনের পারিবারিক বন্ধন ভালো লাগে, আব্বু-আব্বুকে যা উপহার দিতে চায়, ধর্মীয় যে কাজগুলো করে নিয়মিত ইত্যাদি। প্রতিমাসের সেরা কাজগুলো লিখে রাখার জন্য আছে দারুণ কয়েকটি পাতা। শেষ কয়েকটি পৃষ্ঠা তাদের ব্রেনকে উজ্জীবিত করবে। মোটামুটি এই হচ্ছে ম্যাজিক ডায়েরির আদ্যপ্রান্ত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কতটা অভিনব, তথ্যবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ডায়েরি। দেরি না করে আপনার সন্তানের জন্য আজই সংগ্রহ করে ফেলুন, তার বেড়ে ওঠাকে সুস্থ, সুন্দর ও সমৃদ্ধ করুন।
নাম: ম্যাজিক ডায়ের
বানিয়েছেন: আবদুল হাকিম নাহিদ
প্রকাশ: দাঁড়িকমা প্রকাশনী, মুদ্রিত মূল্য: ১৫০ টাকা
রকমারি.কম
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১৬