somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশ্রুভেজা পাঁপড়িঃ সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী

৩০ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করা আদিত্য আজ ৭ম বারের মত ভাইভা দিয়ে বের হল। গত ৩ বছরে এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছিলনা, যেখানে সে আবেদন করেনি! মোবাইলটা অন করতেই তার ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। ইনবক্সে ঢুকতেই দেখে অর্পিতার ম্যাসেজ- "বাবু ভাইভা কেমন হলো? আজ বিকেলে আরেকটা ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আর কত নানা অজুহাতে বিয়ে আটকাবো? প্লিজ বাবুটা আমার, তুমি কিছু একটা করো। "
স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে। কিন্তু আদিত্য তার স্বপ্নকে এখন এতটাই ছোট করে নিয়েছে, যেকোনো একটা চাকরি হলেই হলো। অর্পিতা যতটা ছেলেপক্ষকে নানা অজুহাতে রিজেক্ট করেছে, ঠিক তার দ্বিগুন সিভি আদিত্যের রিজেক্ট করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। তাই সে এখন বুঝতে পারছে না সে আসলে 'কিছু একটা ' কী করবে!
:
বিকেলে পার্কে অপেক্ষা করছে আদিত্য। গাছের দিকে তাকিয়ে দেখছে একজোড়া পাখি কত মধুরভাবে মিশে আছে একে অপরের সাথে। সেও ভাবছে- ইশ! যদি অন্তত পাখি হতাম তবে এই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হত না। অর্পিতাকে হারাতে হত না। পৃথিবীর প্রায় সকল রাজধানী থেকে মুদ্রার নাম, কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী কে, প্রেসিডেন্ট কে সবই তার জানা আছে। শুধু জানা নেই তার চাকরিটা কবে হবে। এরই মধ্যে অর্পিতা এসে তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে- কখন এলে?
- এইতো একটু আগে। নীল জামা পরেছ কিন্তু নীল টিপ কোথায়? চোখ লাল কেন?
- (কান্না জড়িত কন্ঠে) বাবু এভাবে আমি বাঁচতে পারব না। বাবা ঐ ছেলের সাথেই আমার বিয়েটা দিয়ে দিবে। প্লিজ তুমি কিছু করছো না কেন?
অর্পিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আদিত্য। সে কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না কান্নায় গলাটা ভারি হয়ে আসছে তার। ছেলেরা লুকিয়ে কাঁদে, প্রকাশ্যে তারা কাঁদতে পারেনা। শুধু বুকের ভেতরটাতে মনে হয় বিশাল এক পাথর বসিয়ে দিয়েছে কেউ।
:
৫ বছরের সম্পর্ক তাদের। শীতের রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চুপিচুপি মোবাইলে কথা বলা, কনকনে শীতের রাতেও গরমের অজুহাতে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে মোবাইলে কথা বলত দুজনে, যেন ফ্যানের শব্দের কারণে কেউ তাদের কথা না শুনে। শুধু কি তাই! মোবাইল চার্জারে লাগিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে ফেসবুকে চ্যাটিং চলত দুজনের। এসব ভাবতে ভাবতে তার চোখ ক্রমাগত ঝাপসা হয়ে আসে, পাপঁড়িগুলো ভিজে যাচ্ছে। দুজন এবার রিক্সায় উঠল। অর্পিতা আজ খুব শক্ত করে আদিত্যের হাতটি ধরে রইল। চৌরাস্তার মোড় পেরোতেই অর্পিতা ভাঙা গলায় কান্না জড়িত কন্ঠে, জড়িয়ে ধরল আদিত্যকে বলছে - এই বাবু, কিভাবে থাকব তোমাকে ছেড়ে? এভাবে কি থাকা যায়? প্লিজ বাবুটা আমার তুমি যেকোনো একটা চাকরি অন্তত করে আমাকে নিয়ে যাও। প্লিজ, প্লিজ... আমি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে মেনে নিতে পারব না। " আদিত্য শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অর্পিতাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিক্সা থামে অর্পিতার বাসার সামনে। বিদায় নেয় দুজনে।
:
আজ আবার একটা ভাইভা আছে আদিত্যের। সে রেডি হচ্ছে। হঠাৎ অর্পিতার ম্যাসেজ- "আমি তোমার বাসার নিচে। তাড়াতাড়ি এসো। " সে নিচে নেমেই দেখে অর্পিতা। আজ তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। চোখগুলো লাল, চুলগুলো এলোমেলো। মুখটাও শুকনা। আদিত্য জিজ্ঞেস করল
- কী হয়েছে?
- বাবা স্ট্রোক করেছে। সব আত্মীয় স্বজন শুধু আমাকেই দোষারোপ করছে। আমার জন্যই, আমার চিন্তায় বাবার এই অবস্থা। বাবু, তুমি আমাকে মাফ করে দাও বলেই সে আদিত্যের হাতে বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে- এই নাও তোমার অর্পিতার মৃত্যুর পাসপোর্ট।
:
এক হাতে ভাইভা পরীক্ষার এডমিট কার্ড, অন্য হাতে ভালোবাসার অর্পিতার বিয়ের কার্ড। পৃথিবীতে এর চেয়ে করুন দৃশ্য কে কবে দেখেছে! সময়মত এপয়েন্টমেন্ট লেটার যোগার করতে না পারায়, আজ তারই হাতে তার প্রেয়সীর বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড। শুধু দুজোড়া চোখের অশ্রু ঝড়ছে। চোখ মুছতে মুছতেই মুহুর্তেই চলে গেল অর্পিতা। আদিত্য ঝাপসা চোখে শুধু অর্পিতার চলে যাওয়া দেখছে।
:
আজ অর্পিতার ১ম বিবাহ বার্ষিকী ও পরেরদিন তার জন্মদিন। আদিত্যের মোবাইলে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। ইনবক্স খুলতেই দেখে অর্পিতার ম্যাসেজ- "বাবু, আমাদের সম্পর্কের পর আমার একটা জন্মদিন ও তোমাকে ছাড়া কাটাই নি। প্লিজ তুমি কাল অন্তত একবার আমার সাথে দেখা কর। আমার জন্মদিনে তুমি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিও, সেটাই আমার সেরা গিফট হবে"।
পরদিন বিকেল ৫টায় দুজনের দেখা হয়। দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। অর্পিতা আদিত্যকে বলছে- বাবু আমার গিফট কোথায়? আদিত্য একটা কাগজ দেয় অর্পিতার হাতে। কাগজ খুলেই দেখে এপয়েন্টমেন্ট লেটার। মানিব্যাগ থেকে বের করে একটা ছোট ভিজিটং কার্ড দিয়ে বলে এটাই তোমাকে দেয়া আমার উপহার। অর্পিতা ভিজিটং কার্ড হাতে নিয়ে দেখে সেখানে লেখা-
আদিত্য রায়
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
অর্পিতার চোখে পানি, একই পানি আদিত্যের চোখেও। কেবল বিধাতায় জানে এই দুজোড়া চোখের পানির অর্থ কী!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×