আসসালামু আলাইকুম
আমি তনু বলছি,
আমার অপরাধ এটা নয় যে আমি ধর্ষিতা, আমার অপরাধ এটাই যে আমি কোন বড় আর্মি অফিসারের মেয়ে না।
আপনারা সবাই জানেন যে, "সেনাবাহিনী আমাদের দেশের সবচেয়ে শক্তিশালি এবং শৃঙ্খলবদ্ধ একটি বাহিনী কিন্তু সেই শৃঙ্খলার সিমানার ভিতর আমাকে পালাক্রমে ধর্ষন করে হত্যা করা হয়েছে।"
আমি মরে গেছি এতে আমার কষ্ট নেই আর এই দেশের বিচারের অপর আমি নির্ভরশীলও না কারন আমি এখন অনেক ধর্ষিতা মেয়েদের সাথে শুয়ে আছি তারাও বিচার চেয়েছিলো কিন্তু তারাও নাকি বিচার পাইনি।
বিচার না পাওয়া মেয়েদের সংখ্যাই বেশী এখানে। আমি একা যদি বিচার পাই বা সুবিধা পাই তবে এই হতভাগা মেয়েদের থেকে আমি তো আলাদা হয়ে যাবো। আমি চাইনা এদের থেকে আলাদা হতে, এরাই আমার এখন আসল বন্ধু।
সবাই কি শুনতে পারছেন....... আমি তনু বলছি,
শুধু আমার জন্য বিচার চাওয়া হলে কবরের ভিতর শুয়ে থাকা অসংখ্য ধর্ষিতা শিশু, নারীর আত্বা ক্রন্দন করবে।
আসল চিত্র হলো দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মানুষ। বাসাবাড়ি থেকে কর্মস্থল এবং চলতি পথের সর্বত্রই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন নারীরা। স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে, বাবার সামনে মেয়েকে, প্রেমিকের সামনে প্রেমিকাকে, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসে ঘটছে নিকৃষ্ট ধর্ষণের ঘটনা।
এমনকি বোনের ধর্ষনের দায় ভাইকে দেওয়া হয় এই দেশে। সেই দেশের বিচার........ আমি ভাবতে পারি না!!!!!!!!!!!
> রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে গত সাত মাসে নাকি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫০ জন নারী ও শিশু।
যাই হোক- আমার কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে আমাকে নিয়ে কেনো একবার পুলিশ, একবার ডিবি, একবার RAB এর শরনাপর্ন হতে হচ্ছে। আমি কি খেলনা পুতুল যে ইচ্ছা মত হাতাহাতি করবেন আপনারা।
আমার বাবা ৪র্থ শ্রেনীর নিম্ন পর্যায়ের লোক বলে কি আর্মির অফিসাররা আমার ধর্ষনের বিচার করতে লজ্জা পাচ্ছে??
এমন প্রশ্নবিদ্ধ বিচার আমি চাইনা।
পুলিশ বলছে, "সীমাবদ্ধ এলাকাই কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে"
আবার কোন লোক নাকি বলেছে, "আমার বিষয়ে সেনাবাহিনী নাকি তাকে কথা বলতে নিষেধ করেছে"
উহহহ.. আমি আর পারছি না,
আমি বলব না আমাকে আর্মিরা ধর্ষন করছে কারন তাদের গায়ে আর্মির পোশাক ছিলো না কিন্তু আমার প্রশ্ন, "আমাকে এত বড় নিরাপত্তা বলয়ের ভিতর কিভাবে কেউ ধর্ষন করতে সাহস পেলো?" শুধু ধর্ষন নয় পিটিয়ে ছুরি দিয়ে জখম করে তারপর আমাকে মেরেও ফেলা হয়েছে।
শুনেছি সেনানিবাস এলাকায় কেউ সহজে ঢুকতে পারে না, ওখানে CCTV থাকে আরো কত প্রযুক্তি আছে, নিজের আত্নীয় স্বজনদের ঢুকতে হলেও নাকি অনেক কৈয়ফিয়ত দিতে হয় তবে এই রেপিস্ট গুলো কারা এরা তো নিশ্চয় অন্য রকম হ্মমতার অধিকারী তানা হলে আমাকে এত কিছু করার সাহস পেলো কিভাবে।
আমার আফসোস আর কষ্ট এটাই যে আমাকে যদি দুরে কোথাও নিয়ে ধর্ষন করত তবে ভাবতাম এটা আমার কপাল কিন্তু সেনাবাহিনীকে আমি আমার পরিবারের মতন ভাবতাম, সেনাবাহিনীকে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বাহিনী হিসেবেই ভাবতাই তাই আমি এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছি না যে সেনা এলাকাই আমার দেহ বিসর্জন দিতে হলো।
আর বেশী কথা বলবো না, ধর্ষীতা অনেকেই আমাকে এখন খুজছে....
আমার শরীরে এখনো ধর্ষকদের অত্যাচারের ব্যাথা রয়েছে। তবে ভালো লাগছে এটা ভেবে যে, "বাংলাদেশে নিতীবাক্যের লোকদের অভাব নেই" এই কয়টাদিন আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছুই লিখছে, ইভেন্ট খুলছে কিন্তু তার ফলাফল যে খুব বেশি লাভদায়ক হবে তাও আশা করতে পারছি না।
সবাই ভালো থাকবেন নিজের মা- বোনের দায়িত্ব নিজেরাই নিতে শিখুন.. কোন বাহিনীর উপর বা দেশের বড় বড় নেতা গোতার উপর কেউ নির্ভর করলে তার পরিনতি আমার মতই হোওয়ার আশংকাই বেশি থাকবে।
ধন্যবাদ
হতভাগা তনু
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬