"মুক্তমন" - এটা আসলে কি? বেশ অনেকদিন ভেবেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনোই উপসংহারে পৌঁছাতে পারিনি। আর আজকাল অনলাইনে (বিশেষ করে ফেসবুকে) বিভিন্ন লিখা দেখে বরং আরও বেশি বিভ্রান্ত হই। আমার নিজস্ব ধারণার সাথে অনলাইন বেশিরভাগ ধারণার আকাশ-পাতাল তফাৎ! এবং সেই তফাৎ থাকাটাই স্বাভাবিক।
২৪ বছর হয়ে যাচ্ছে। একটা বিষয়ে "উপসংহারে" পৌঁছাতে না পারি,নিজস্ব একটা মতামত থাকা উচিৎ বলে মনে করি। আমারও একটা মতামত আছে এবং হয়তো হাস্যকর কিন্তু সেই মতামতের পিছনে কাল্পনিক চরিত্রের অবদান বেশি।
আমরা ছোটবেলা থেকে একটা "সিলেবাস" নিয়ে বড় হই। সেই সিলেবাসে কিছু কনটেন্ট থাকে। সেইসব কনটেন্ট অনেক সীমাবদ্ধ জ্ঞানের। সিলেবাসের কভার শুরু হয় ফ্যামিলি থেকে,তারপর সমাজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যাদের/যেসবের ভূমিকা আছে।
আমাদের শিখানো হয়,"এইটা" ঠিক কাজ,"ওইটা" ভুল কাজ। উদাহরণস্বরূপ,আমি মুসলমান পরিবারের সন্তান,আমাকে শিখানো হয়েছে - "ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম,বাকি ধর্মগুলো ভুল"। ফলস্বরূপ দেখা যেতো,আমি অন্য ধর্মের ভালো দিকেরও বদনাম করতাম। মুসলমান হিসেবে নিজেকে "সবসময় ঠিক" ভাবার একটা প্রবৃত্তি কাজ করতো। এখানে বলে নিচ্ছি,আমি ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করতে আসিনি। আমি ধর্ম পালন করিনা কিন্তু নাস্তিক ও না। বিন্দুমাত্র কেয়ার করিনা এসব ব্যাপারে। এটা শুধুমাত্র আমি উদাহরণ হিসেবে আনতে চেয়েছি।
আমি মনে করে থাকি আমরা আমাদের সেই সিলেবাসের কনটেন্ট অনুযায়ী নিজেদের একটা পৃথিবী গড়ে নেই। সেই পৃথিবীতে "ভুল" আর "ঠিক" এর সংজ্ঞা আমরা নিজেরা ঠিক করি। সেই "ঠিক" আর "ভুল" এর সংজ্ঞা অনুযায়ী সবাইকে জাজ করি। ভুলে যাই,যে মানুষটাকে জাজ করছি তারও আমার মতো "নিজস্ব একটা পৃথিবী" আছে "ঠিক আর ভুল" এর।
আমার এক বন্ধু CSE পড়ে। সারাদিন ঘরেই থাকে,সরকারী ক্যাম্পাস হওয়ায় ক্লাস মিস দিলেও প্রব্লেম কম করে। ওর বাবা নেই কিন্তু দুই বড় ভাই আছে যারা সংসার চালায়,তার ভাবীও কাজ করে। তো ওর ভাইরা প্রায়ই ওকে বলে,"অনেককেই দেখি ছাত্রবস্থায় কাজ করে,তুমি কিছু করো না কেন?"। ওর আবার ফ্রিল্যান্সিং ভালো লাগেনা,মাঝে মাঝে নিজের কোনও খরচ এক্সট্রা লাগলে টুকটাক কাজ করে চালিয়ে নেয় তবে এছাড়া আর করেনা। তো ভাইদের ইচ্ছা সে কিছু করুক এখন থেকেই কিন্তু তার "ভালো লাগেনা" - এই বলে সরে যায়। বন্ধুদের সাথে রেগুলার আড্ডা,আত্মীয়ের বাসা যাওয়া কোনও কিছুতেই সে থাকেনা দেখে ভাইদের থেকে বিরক্তিই পায় বেশিরভাগ সময়,"অসামাজিক" বলে।
একদিন আমার বাসায় একটা ফ্রেন্ডদের পার্টি ছিল,ও আসে। তো রাতে ছাদে বসে আমি আর ও ড্রিঙ্ক করতেছিলাম,হয়তো এর প্রভাবে ও কিছুটা বলা শুরু করে-"আমার মা অনেক অসুস্থ,সে কাউকে তেমন বলেনা কিন্তু আমি জানি। একদিন তাকে বিছানায় পড়ে কাতরাতে দেখেছি,কিছুই করতে পারতেছিল না। ভাই-ভাবী কেউ বাসায় থাকেনা,ভাতিজি ছোট। আমিও যদি কাজ নিয়ে বাইরেই থাকি আম্মুর সিরিয়াস কিছু হলে অনেক সমস্যা হবে। আর কিছু না পারি,অন্তত হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবো। তারউপর বছরখানেক পর আমি বাইরে চলে যাবো,মার পাশে কিছুদিন ভালোভাবে থেকে যাই। আর আমি যেতে যেতে ভাতিজি কিছুটা বড় হয়ে যাবে,ও খেয়াল রাখতে পারবে।" আমি বললাম,"তোর ফ্যামিলির ভুল ধারণা ভেঙ্গে দে?"। ও মুচকি হেসে বলে,"রাশির দোষ"।
অনেককেই বলতে শুনি,প্রত্যেক মানুষ আলাদা এবং সবাইকে তার মতো করেই একসেপ্ট করে নেয়া উচিৎ। কিন্তু আমি জানিনা,আমরা কয়জন সে কাজটা পারি। কারো একটা সিদ্ধান্ত আমাদের পছন্দ না হলে ঝগড়া করি,দূরে সরে যাই তাকে "ভুল" ভেবে। একসময় রাগ হয়তো চলে যায়,কিন্তু অহমিকার কারণে সেই দূরত্ব আর কখনো পাড়ি দেয়া হয়না।
নাস্তিকদের খুন করা,সেই খুনের দায় সব মুসলমানদের উপর দেয়া,দেশের কোটি কোটি টাকা চলে যাওয়া,সেই টাকার ঘটনা ধামাচাপা দিতে "তনু" হত্যার মতো কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা তৈরি করা-এসবের মধ্যেই হয়তো আমরা পথ হারাবো।
আমিও পথ হারাতে চাই। একসময় না একসময় আমার ভালোলাগার পথ খুঁজে পাবো। সেই পথ আরেকজনের কাছে "ভুল" পথ হলেও আপত্তি নেই।