অত:পর মৃত্যুর বীজ তার দেহ জমিনে বোনা হয়ে গিয়েছিলো
কেবল চারা গজানো থেকে ফসল বেড়ে উঠার অপেক্ষায় ছিলেন মৃত্যুদূত,
সে বুঝে উঠতে পারেনি, ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেনি,
শীঘ্রই তাকে মর্ত্য ছেড়ে প্রস্থান করতে হবে শূন্যে
না, তার আত্মা চলে যাবে আর আহ্লাদী দেহটা জায়গা করে নেবে মাটিতে
অথবা তার দেহ পুড়ে হবে ছাই!
ইহলোক ছেড়ে সে চলে যাবে স্বর্গলোক,
অথবা কোথায় ঠাঁই হবে কেউ জানি না।
ক'দিন আগেই লিফটে উঠেছিলো সে, ঠোঁটে আলতো হাসি
গোলাপী লিপস্টিক, চোখে কাজল, হাতে একগাছি চুড়ি,
আহ্ ঠিক তখনি বোধয় মৃত্যুর চারা গজিয়ে উঠেছিলো,
সে দেখতে পায়নি, আমিও না;
কেমন আছো?
সে হেসে উঠে বলেছিলো এইতো ভালো আছি
শরীর আগের চেয়ে ভালো!
অফিসের সিঁড়িতে কখনো দেখা হতো,
কখনো লিফটে-মৃত্যুর ছায়া দেখতে কখনো পাইনি!
বেঁচে থাকার আনন্দে সে বিভোর ছিলো!
দুটো কন্যা তার, মা মা বলে যখন ডেকে উঠতো
তখন হয়তো তার বেঁচে থাকার সাধ বেড়ে যেতো পাঁচগুন!
দুটো কন্যার গায়ের ঘ্রাণ মনে মেখে
সে কখনো হয়তো বসেছিলো সন্ধ্যার ধূঁপজ্বালানো প্রহরের পুজো অর্চনায়!
কন্যারা ঝাপটে ধরেছিলো, পুজোর ফুল কপালে ঠেকিয়ে হয়তো
প্রার্থনা করেছিলো বেঁচে থাকো মা মনিরা, থাকো মায়ের আঁচল ছুঁয়ে!
ধীরে ধীরে তার দেহ জমিনে মৃত্যুর চারা বড় হতে থাকে...
সে হতে থাকে দুর্বল, ক্ষীণকায় দেহ, সওয়ার ক্ষমতা হারায়,
ব্যথার পাহাড় সর্বাঙ্গে, চোখের কোণে এক দুই ফোঁটা অশ্রু,
বেঁচে থাকার আশা আহা! সে তখনো হেসে বলেছিলো
আমি আবার কবে অফিসে যেতে পারবো,
যারা কাছে ছিলো, তাদের মুখে অস্ফুট কষ্ট কান্না রেখেছিলো বন্দি!
মৃত্যুর ফসল প্রস্ফুটিত হওয়া শুরু করেছে মাত্র
ফসল পাকলেই একটি আত্মার ইহজগতের সমাপ্তি টানতে হবে!
হয়েও ছিলো তাই, যমদূত ঠিক সময়মত এসে তাকে নিয়ে যায়
অসহায় করে দিয়ে তার দু'কন্যাকে-
মায়ের আঁচল ধরে থাকার আর সাধ্য ছিলো না তাদের!
-
হ্যা জীবন এমনই, হুটহাট দেহ ছেড়ে আত্মা উড়ে যায়
কেউ জানতেও পারে নি, পারবেও না;
যতজন ফেরেশতা নিয়োজিত ছিলো মানুষের সেবায়
একে একে দায়িত্ব থেকে হাত পা নেবেন গুটিয়ে,
শুধু পড়ে থাকবে অসহায় মানুষ নিথর দেহ নিয়ে।
(শর্মিলি পাল স্মরণে)
November 26, 2018 at 11:41 PM
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৯