সবুজ মাঠ জুড়ে রোদ্দুর খেলে যাচ্ছে। আশ্বিনের এই মধ্যাহ্নে উদাস কে ই বা না হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদাস দৃষ্টি রোদ্দুরের খেলা দেখে যাই... সুন সান নিরবতা... কেউ কোথাও নেই, কাকের সভাও নিরব। কেমন বিষন্নতা চারিদিকে।নেই সুরাসুর-নেই প্রাণ চঞ্চলতা কোথাও। ছুটির দিনগুলো তবে এমন কেনো। কেনো এত উদাসীনতা প্রকৃতি জুড়ে।রোদ্দুর ঝরে পড়ে একাকি গাছের পাতায় পাতায়। ঝিরিঝিরি হাওয়ায় দুলছে পাতারা সাথে আমার মনও।
শহুরে জীবন বুঝি এমনই-মাঠ আছে গরু নেই-রাখাল নেই-আচ্ছা সেই দিনগুলো হারালো কেনো। উদাস দুপুরে দূর থেকে ভেসে আসতো মিষ্টি সুরের বাঁশির সুর। রাখাল’রা বাজাতো বাঁশি... হৃদয়ের অথৈ হতে সুর তুলে আহা-শুনলেই মন প্রাণ ভরে যেতো আবেগে। আমার এখনো মনে আছে স্মৃতির পাতা থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসি-তোমরা শুনবে- শুনো-বাঁশির সুর শুনে একদা আমারও বাঁশি বাজাতে ইচ্ছে হতো। মেলা থেকে কে আমায় বাঁশি কিনে দিবে-মুলি বাঁশ কেটে নিজেই লোহা আগুনে গরম করে ছিদ্র করে বাঁশি বানিয়েছিলাম। এক দুই নয় রোজ রোজই বাঁশি বানাতাম-তবে আমি তাতে সুর দিতে পারিনি। ফেঁ ফুঁ ছাড়া আর কিছুই হয়নি-হয়তো তখন সুর আমায় ছেড়ে পালিয়েছিল। আমি সেদিন মধ্যাহ্নেও বিষন্নতায় ডুবেছিলাম। মনের সুর কেটে সেদিনও বেসুরো সুরের উদাস দুপুর আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল অকারণেও।আজও রোদ্দুরের খেলা দেখি আনমনে দাঁড়িয়ে।ফাঁকা রোদ্দুর জ্বলা মাঠের মতই যেনো বুকটা খাঁ খাঁ প্রেমহীন বিরানভুমি। সাইমুম ঝড় কখন এসে আমায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে যেনো ।ফেরিওয়ালার হাঁক শুনে আচম্বিতে ধ্যান ভেঙ্গে যায়।
রোদ্দুর’রা মেঘের ছায়ায় লুকিয়েছে.....মাঠজুড়ে মেঘের ছায়া-আহা আরো কত বিষন্নতা ঝরে পড়ছে চারিদিক। ঝরা বকুল ফুলগুলো হয়তো শুকিয়ে ইট সুড়কির বিছানায় তাদের সলিল সমাধি হয়ে গেছে।সবুজ হরিতকিগুলো চুপসে গিয়ে ধূলায় লুটিয়ে পড়েছিল সেই সকালে। এতক্ষণে শুকিয়ে কাষ্টরূপে শুয়ে আছে বিষন্নতার চাদরে।সবুজ গাছপালাগুলো থিরথির কাঁপছে কখনো রোদ্দুর তাপে কখনো মেঘরঙ হাওয়ায়।আচ্ছা পৃথিবীটা এত মায়াময় কেনো? উফ-বিষন্নতা,নিরবতা, উদাস তবুও এত ভাললাগা ছড়িয়ে আছে আনাচে কানাচে। চোখ রাখলেই মুগ্ধতায় খুন হই। বিষন্ন মন আনমনে মুগ্ধতায় পরিপূণ।
ভাল লাগে আমার সব ভাল লাগে। ভালবাসি হুম বিষন্নতাকেও ভালবাসি-নিরবতা-সুরাসুর-উচ্ছ্বাস-উল্লাস- কাকেদের কাকা সুরও ভালবাসি...একটু পরেই ভেসে আসবে আযানের মিষ্টি মধুর ধ্বনি, সেই ধ্বনি মনে অনুরণনের বেজে উঠে স্রষ্টার রূপের মহিমায় মন নত হয় মুহুর্তেই।বেলা পড়ে এলো-এই-রে-এখনো দুপুরের খাওয়া সারা হয়নি। খেতে হবে আমায়-তৃপ্তি করে মুগ্ধতায় খাবো স্রষ্টার দেয়া রিযিকদানা-ছুটির দিনের দুপুর-আহ্ বিছানায় গা এলিয়ে বালিশের স্তুপে মগজ ঢুকিয়ে দিলেই ঘুম’রা আসবে স্বপ্নরূপে। আমি আবারো মুগ্ধ হবো-আবারো আযানের ধ্বনিতে জেগে উঠবো ওযুমে মগ্ন হয়ে স্রষ্টার প্রাথনায় রত হবো-বিকেল আমায় দিবে আবারো একরাশ ছায়ামাখা মিষ্টি মুগ্ধতা।
হুম, ভালবাসতে জানতে হয়-বুঝতে হয় অন্তর দিয়ে-মন দিয়ে অনুধাবন করতে হয় স্রষ্টার দেয়া এই ছোট জীবন। ভালবাসার সুর শুনতে হয় গভীর মগ্নতায়। ভালবাসতে হয় হুম সৃষ্টির সবকিছুকেই ভালবাসতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬