আষাঢ়ের রাত্রিগুলো আরো নিঝুম থাকে, শহরে নয় গ্রামে...
কান খাড়া করলেই ভেসে আসে ব্যাঙের ডাক;
ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের চরম আস্ফালন;
এক দুইটা জোনাকি উড়তে থাকে বাঁশের ঝাঁড়ে...
ঝিম ধরা রাতেও থেমে নেই পথিকের পথচলা,
সেন্ডেল পায়ে পচপচ শব্দে কাদায় মাখামাখি।
কেউ ফিরে বাজার নিয়ে, কেউবা দিনমান রুজি রুটির সন্ধানে;
কর্মক্লান্ত ব্যস্ততার প্রহর পেরিয়ে ফিরে আসে নীড়ে;
বউ তুলে দেয় পাতে লাকড়ির চুলায় রান্না করা গরম ভাত,তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে,
পানের খিলি মুখে পুড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে নিমেষেই চলে স্বপ্নের দেশে।
আর এখানের আষাঢ়ের রাতে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক নেই,
নেই ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের কান ফাটানো চিৎকার....
হাজার রঙের আলোয় আলোকিত শহরে মানুষ দু চোখে হাজার স্বপ্ন নিয়ে দিনাতিপাত করে,
এখানে মানুষ হিংস্র, মায়াহীন, স্বার্থলোভী, নিজেকে ছাড়া চিনে না কাউকে...
ফরমালিনযুক্ত মানুষের মন; পরম মায়ামমতা ভালবাসাও হজম হয় না এদের,
ফরমালিন মানুষেরা ফরমালিন খেয়ে বাঁচে; অন্যকে বাঁচতে সহযোগিতা করে
ফরমালিনের বেসাতি করে দিনমান, টাকার থলে নিয়ে ঘরে ফিরে ভাগ্যবান হয়ে...
ওদের ঘরে ফিরতে মেঠো পথের ভেজা মাঠির গন্ধেসেমত কাঁদা মাড়াতে হয় না,
সেন্ডেলের পচপচ শব্দও ভেসে আসে না কানে; হুশ করে দুয়ারে দাঁড়ায় মার্সিডিস।
সফেদ পোশাকে আচ্ছাদিত মানুষ ঘরে ফিরে ডাইনিং টেবিলে বসে বাড়া ভাত খায়;
পাশে থাকে না কেউ, প্রশান্তির ঘুমও ভর করে না দু'চোখের পাতায়,
মধ্য রাত অবধি টিভির পর্দায় চোখ রেখে মনে শান্তি আনার চেষ্টায় মগ্ন হয়েও...
শান্তির বাবা মা চলে যায় গাও গেরামে....খেটে খাওয়া মানুষের পাশে।
ফরমালিন মনের মানুষেরা টাকায় শান্তি খুঁজতে গিয়ে হোঁছট খেয়ে পড়ে অশান্তির দরজায়....
ওরা বুঝতেই পারে না কখন যে সে, তার পুরো পরিবার ফরমালিনে আসক্ত হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ক্রমেই অতলে,
ফরমালিনে টাকা আনে, সুখ আনে না; বুঝতে বড্ড দেরী হয়ে যায়।
নিজের পায়ে নিজের কুঁড়ালের আঘাতে জর্জরিত...
গায়ে দগদগে কাঁচা ঘা; মনের ভিতর কুটকুট ছোবল বসায় ফরমালিন
ছোপ ছোপ মাংসপিন্ড ঝরে পড়ে অবেলায়।
অদৃশ্য মাছিদের বাসস্থান শরীরে তোমার হে ফরমালিন মানব...
তুমি দেখতে পাবেনা; বুঝতেও পারবে না; পঁচবেও না গলবেও না...
তবু মাছিরা কুটকুট করে খেয়ে যাবে তোমায় অনন্তকাল ধরে।