somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন এতদিন লিখিনি

২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় দু বছর পর আবার আজ লিখতে বসেছি।
এই সময়ে আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেল ।যা আমার প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে ওলোট পালোট করে দিয়ে গেছে।এমনিতে আমি একটু রুগ্রন প্রকৃতির।সব সময়েই কোন না কোন অসুখে ভুগি।এজন্য আমার নিজেরই নিজের প্রতি রাগ হয়। কিন্তু আমার স্বামীকে কোন দিন বিরক্ত হতে দেখিনি অসুখ হলে এমন ব্যস্ত হয়ে পড়তেন যে আমার নিজেরই লজ্জ্বা করত।গত জুলাইয়ের শেষ দিকে হটাৎ করে অসুস্থ হয়েপড়লাম। এখানে ভাল ডাক্তারের বড় অভাব ।তবু একজনকে দেখালাম ।তার ওষুধে কোন কাজ হলনা ।খুব কষ্ট হচ্ছিল। আর সহ্য করতে না পেরে বড় মেয়েকে ফোন করে জানালাম। জামাই ডাক্তার।ওরা বাবাকে বলল আমাকে নিয়ে ওদের বাসায় চলে আসতে।উনি একটু ইতঃস্তত করছিলেন।নাতি টার পরীক্ষা শুরু হবে সামনের সপ্তাহে।আমরা গেলে তার পড়ার ক্ষতি হবে। এসব চিন্তা করে ছেলেকে দিয়ে আমায় একাই মেয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। ছেলে আমায় পৌঁছে দিয়ে ওর বাসায় ফিরে গেল। ও কলকাতার কাছে একটা হাউসিং এ থাকে।
আমাদের ফ্ল্যাটে ওনাকে একা রেখে আসতে মন চাইছিলনা ।কিন্তু উনি কিছুতেই এলেননা।মেয়ে বাবাকে না দেখে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করে না আসার জন্য বাবাকে বকাবকি করতে লাগলো ।শেষে বাবার কাছে কথা আদায় করে নিল যে উনি দু বেলা ফোন করে শরীরের কুশল সংবাদ জানাবেন। এ ব্যবস্থায় আমিও কতকটা নিশ্চিন্ত হলাম।জামাই ওষুধ দিলে আমারও রোগের কিছুটা উপশম হল।উনি কিন্তু কথা রাখলেননা দুবেলাই ফোন করতে ভুলে যেতে লাগলেন। মেয়ে রাগ করে ফোন করে বকতে লাগল না আসার জন্য শেষে ঠিক হল আর দুদিন পর রোববারে উনি এসে আমায় নিয়ে যাবেন।ততদিনে আমিও অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছি।কিন্তু তখনও জানতাম না কিদুসঃহ দিন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
উনি এলেন রবিবারে ছেলের সাথে। গায়ে জ্বর বুকে কফ বসে গেছে । ভালো করে হাঁটতে পারছেননা । আমি ওনাকে ভালো দেখে এসেছিলাম । ওনার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম ।আমার বুকের ওপর কেযেন পাষান চাপিয়ে দিয়েছে । এত বছর বিয়ে হয়েছে ওনাকে কোনদিন এত অসুস্থ দেখিনি ।মেয়ে বলতে লাগল সেই এলে বাবা তবু কিছুতেই আগে এলেনা। আমার ছেলের পরীক্ষার জন্য তুমি এভাবে সব লুকোলে।জামাই ওনাকে পরীক্ষা করে ওষুধ দিল। আমার মনে হল এবার উনি সেরে যাবেন। ছেলেও নিশ্চিন্ত হয়ে বাসায় ফিরে গেল।কিনতু রাতে খাওয়া দাওয়া করার পর ওনার শরীর আবার খারাপ হতে শুরু করল জামাই পরপর দুদিন বাড়ীতে রেখে ওষুধ ইনজেক্শন দিয়ে অনেক চেষ্টা করল ।মেয়ে রাতে বাবার পাশে ঠায় বসে রইলো ।কোন ভাবেই অবস্থার কোন উন্নতি হলনা। বিকেলের দিকে অবস্থা আরও খারাপ হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হল।উনি খুব সৌখীন আর পরিপাটি ছিলেন ।সরকারী অফিসে উচ্চ পদে কাজ করতেন।সততার জন্য সুনাম ছিল।অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগেও উনি পরিপাটি করে পোশাক পরলেন ।ইস্ত্রি করা জামা প্যান্ট। চশমা ঘড়ি । আমি বললাম এত কষ্ট করে পরছ হসপিটালে সব তো খুলে ওদের পোষাক পরাবে যাহোক একটা পরলেইতো পারতে। উনি বললেন একবার ফোন করে দাদার খবর নাওতো কেমন আছে শুনে যাই ।আমার সেই দাদা ।দাদা তখন মাস তিনেক শয্যাশায়ী । ক্যানসার হয়েছে অন্ত্রে। উনি আর দাদা বছর চারেক এর ছোটো বড়। আমি ফোন করতে গেলাম। মেয়ে এসে বলল অ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে ।দাদার খবর আর নেওয়া হলনা। উনি চাইছিলেন আমি সাথে যাই। কিন্তু আমি তখন ভয়ে কাঁটা হয়ে গেছি। পা সরল না বুকের পাষান ভার যেন আমায় চেপে ধরল। আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।ছেলে মেয়ে ওনাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে অ্যাম্বুলান্সে তুলল। তার পর চোদ্দ দিন শুধু যমে মানুষে টানাটানি ।২০১১ র৩০ শে আগষ্ট উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
সব মেয়ের জীবনেই স্বামী একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে । কিন্তু আমি বোধহয় ওনার ওপর বড় বেশী নি্র্ভর করতাম।তাই চিররুগ্ন আমাকে এমন আকস্মিক ভাবে ছেড়ে চলে যাবেন কল্পনাও করিনি। রোগে ভুগে ভুগে আমার নিশ্চিত ধারণা ছিল আমিই আগে যাব।কিন্তু উনি যে এমন করে আমায় ফাঁকি দেবেন ভাবিনি। নিজে অসুস্থ হয়ে ওনাকে ফেলে চলে নাএলে হয়তো এমন হতোনা।আর সেজন্য নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিনা।এর এক মাস পরেই দাদা চলে গেল ।তার মাস খানেকের মধ্যে মেজকাকীমা । দাদার মৃত্যুর জন্য আমরা তৈরী ছিলাম মনেমনে ,
মেজকাকীমাও জীবন্মৃত হয়ে ছিলেন। কিন্তু ওনার চলে যাওয়াটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।
আমার অসুস্থতা ,ওনার চলে যাওয়া ,দাদার মৃত্যু ,মেজকাকীমার মৃত্যু পরপর ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর আকস্মিক আঘাত আমায় স্তব্দ্ধ করে দিয়ে ছিলো।শরীরও আমার খুব খারাপ হয়েছিল।মনে হচ্ছিল আমারও তো বয়স হয়েছে ।আমিও তো চলে যেতে পারতাম।গেলামনা কেন?মেয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে এসেছে ।জামাই আমায় ওষুধ পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে।ওরা আমায় মরতে দিলনা।আমার মার কথা এখন খুব মনে হয়।আমার মায়ের জীবন বড়ো দুঃখের ছিল।মা আমায় বলতেন ,তুই বড়ো হয়ে আমার জীবনীটা লিখতে পারবি?আমি মনে মনে ভাবতাম ,আমি কি করে লিখবো তোমার জীবনী মা ,আমি কি পারবো ?তবু ভাবলাম লিখবো আমি। আমার দেখা ,আমার শোনা ,আমার দুঃখিনী মায়ের কাহিনী।

৪৫৬ বার পঠিত
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×