ছবিটি সম্ভবত Titanic, Hachi ও Gladiator এর পর আমার সবচেয়ে প্রিয় ট্র্যাজিক মুভি । কিন্তু দুঃখের বিষয় - ছবিটি নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত কম ।
ছবিটি ভ্লাদিমির নভোকভ এর বিখ্যাত উপন্যাস ললিতা'র অ্যাডাপটেশান যা বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিতর্কিত উপন্যাস । পাশাপাশি এটি বহু জরীপে সর্বকালের সেরা ইংরেজি উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে স্থান পেয়েছে।
ঘটনাটি ১৯৪৭ সালের প্রেক্ষাপটে চিত্রায়িত । ছবির মুল চরিত্র প্রফেসর হ্যামবার্ট যিনি একজন মধ্যবয়স্ক সুদর্শন পুরুষ । একটি বই লিখার কাজে তিনি তৎকালীন নিউ ইংল্যান্ডে আসেন এবং ঘটনাক্রমে Charlotte Haze নামক একজন সুন্দরী বিধবার ঘরে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন । প্রফেসরের ব্যক্তিত্বে বিধবা Haze এর তার প্রতি ভাল লাগার তৈরি হয় কিন্তু অন্যদিকে প্রফেসরের ভাল লেগে যায় বিধবার ১৪ বছর বয়সী কন্যা Dolores Haze (Lolita) কে । এখানে বলে রাখা ভাল - প্রফেসর তার বাল্যকালের প্রেমিকার মৃত্যুর পর দীর্ঘসময় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেছেন এবং সবসময় তিনি তার বাল্যকালের প্রেমকেই খুঁজে বেরিয়েছেন । এভাবে তার মধ্যে হয়ত সেই প্রেমিকার বয়সী মেয়েদের প্রতি একটি দুর্বলতা রয়ে যায় যা তার মধ্যবয়স্ক জীবনের জন্য বেমানান হয়ে ওঠে । গল্পকথকের মতে - "The poison was in the wound, you see. And the wound wouldn't heal." যাই হোক, তিনি বিধবার কিশোরী মেয়ে Lolita'র মধ্যে তার সেই বাল্যকালের প্রেমের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান এবং মেয়েটির প্রতি দুর্বলতা অনুভব করেন । অন্যদিকে, মেয়েটিও খেলার ছলে প্রফেসরের সাথে প্রণয় গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাকে অনেকটা উঠতি বয়সী মেয়েদের ছেলেমানুষিকতা বলা যেতে পারে । এভাবে গল্পটি একটি জটিল পরিণতির দিকে এগুতে থাকে । তবে এখানে গল্পের এক পঞ্চমাংশ শেষ হয়েছে মাত্র । বাকিটুকু জানতে হলে ছবিটি দেখে ফেলতে হবে । উল্লেখ্য, দুজন মানুষের অসম প্রেম গল্পটির মুল উপজীব্য বিষয় হলেও একে একতরফা সেকেলে গল্প কিংবা নিষিদ্ধ প্রেম নামক ভাঁড়ামি ভাবলে ভুল হবে । যে আশ্চর্য দক্ষতায় পরিচালক আনন্দ ও ট্র্যাজেডির গল্প তুলে ধরেছেন তা ছবি না দেখলে কিছুতেই বোঝা যাবে না ।
ছবিটি সম্পর্কে আরও কয়েকটি তথ্য জেনে রাখা জরুরী -
১। ছবিটি বিশাল বাজেট নিয়ে নির্মিত হলেও Distribution সঙ্ক্রান্ত কৌশলগত ভুলের কারণে ফ্লপ হয়েছে । তবে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে এটা নভেলের মতনই ক্লাসিক হিসাবে স্থান পেয়েছে এবং অনবদ্য নির্মাণের কারণে প্রশংসিত হয়েছে ।
২। অনেক ক্রিটিকের মতে ছবিটি বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাবার যোগ্য এমনকি অস্কারও পেতে পারতো কিন্তু বিতর্কিত প্লটের কারণে তেমনটা হয়ে উঠেনি ।
৩। সাউন্ডট্র্যাক কম্পোস করেছেন Ennio Morricone যা একবার শুনলে নিঃসন্দেহে আপনার মগজে বারবার বাজতে থাকবে । যারা Morricone কে চেনেন তারা জানেন ভদ্রলোক কি জিনিস ।
৪। একই উপন্যাস নিয়ে কুবরিক ১৯৬২ সালে ছবি বানিয়েছিলেন যা সুপারহিট হয়েছে । তবে আলোচ্য ১৯৯৭ এর ছবিটিই রিকমেন্ডেড ।
৫। ইউরোপে আন্ডার-এজ মেয়েদের প্রতি যৌন-আকর্ষণকে "ললিতা" বলে সম্বোধন করা হয় যা মূলত এসেছে এই উপন্যাসটির হাত ধরেই ।
৬। উপন্যাসটি অনূদিত হয়েছে, রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে । কেউ চাইলে উপন্যাসটিও পড়তে পারেন । ছবি দেখার পরও উপন্যাসটি পড়তে ভাল লাগবে আশা করি কারন ছবি ও উপন্যাসের মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ আছে । উপন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে বলেছিঃ Click This Link
৭। ছবিটির সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে - আপনি বুঝতে পারবেন ছবির প্রোটোগনিস্ট ঠিক কাজটি করছে না কিন্তু আপনি তাকে ঘৃণা করতে পারবেন না ।
৮। ছবিটিতে বেশ কিছু এরোটিক দৃশ্য আছে । একা অথবা ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়ে দেখবেন ।
আরও কিছু প্রশংসা না করলেই নয় - প্রধান চরিত্র দুটির সৌন্দর্য চোখে লাগার মতন, অভিনয়-গল্পবলার ভঙ্গি-সিনেমাটোগ্রাফি-ডিরেকশন-ডাইলগ সবই যেন খাপে খাপ, প্রফেসারের চরিত্রে Jeremy Irons এর অভিনয় দেখে যে কেউ তাকে প্রিয় অভিনেতার লিস্টে নিয়ে নিতে পারেন । সব মিলিয়ে, আমার প্রথম সারির ভাল লাগা একটি ছবি এবং অনেকদিন মনে রাখার মতন একটি গল্প ।
IMDB Rating: 6.9/10
Personal Rating: 8.5/10
আইডিএম দিয়ে ডাউনলোডঃ https://fmovies.is/film/lolita.lk3m/310pk2
আইডিএম ছাড়া ডাউনলোডঃ Click This Link
সাবটাইটেল আবশ্যক, একটি শব্দ না বুঝলে অনেক কিছু মাথার উপর দিয়ে যেতে পারেঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭