"শিশু যৌন নির্যাতনের উপর অনেকে পড়েছেন আবার হয়তো এ বিষয়ে জেনে অবাক ও হয়েছেন কিভাবে নিজেদের মধ্যে ভালো মুখোশের আড়ালে হায়েনা বাস করে যে আপনার কোমল শিশুটিকে ধর্ষন করার জন্য উৎ পেতে থাকে।
কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে পরিমলরা যেমন নামকরা স্কুলের ছাত্রীদের রেহাই দেয় না তেমনি গ্রামের অক্ষাত স্কুলের ছাত্র ও রেহাই পায় না এসব মুখোশধারী শয়তানদের হাত থেকে। আপনারই অগোচরে আপনার আদরের সন্তানটি যে
আপনার খুব বিশ্বাসী বন্ধুর দ্বারা নিগৃহিত হচ্ছে না তার গ্যারান্টি কোথায়!!!!!
আর সে কারনে আমাকে আপনাকেই সাবধান হতে হবে। আমাদের সন্তানকেই আমাদেরই বাচাঁতে হবে। ফেইসবুকে পাওয়া চমৎকার এ লিখাটিতে "কিভাবে আপনার শিশু সন্তানকে সেক্সুয়াল এবিউজ থেকে বাচাঁবেন" তার কিছু টিপস্ দেয়া আছে যা সকল মা/বাবার অবশ্যই পাঠ্য ....... এ লিখাটি অরিজিনাল ভার্সান ইংরেজিতেই ... তবে মূল অর্থ একই রেখে আমাদের সমাজের আঙ্গিকে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা সহকারে আমি বাংলায় অনুবাদ করে শেয়ার করলাম।
১) আপনার সন্তানকে কখনই কারো কোলে বসতে দিবেন না বা তাকে জড়িয়ে ধরে কাউকে আদর করতে দিবেন না। বিশেষ করে বাচ্চা যখন একটু বড় হয়ে যায়। এমন কি সে আপনার যতই নিকট আত্বীয় হোক না কেন। শুনতে খারাপ লাগলেও মনে রাখবেন আপনার ভাইয়ের কাছে ও আপনার সন্তান নিরাপদ নয়। শিশুরা কিন্তু প্রথম নির্যাতিত হয় খুব কাছের কারো দ্বারা যেমন কাজের লোক, আপন মামা/চাচা/খালু/ফুফা।
আরেকটি বিষয়, আমরা মোটামুটি মধ্যবিত্ত বা নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ। আমাদের বাসায় প্রায় আত্বীয় স্বজন বেড়াতে আসে আর আমরা জায়গার অভাবের কারনে আমাদের সন্তানকে তাদের সাথে রাতে থাকতে দেয়। আপনি কখনই তা করতে দেবেন না। আপনার অগোচরে সেই হয়তো আপনার সন্তানকে নির্যাতন করছে রাতের পর রাত। আপনার শিশু তার উপস্থিতিতে আপনাকে কিছুই শেয়ার করতে পারছে না।
২. আপনার শিশু সন্তানকে কখনই কারো সামনে কাপড় পাল্টাবেন না এমন কি নিজেও পাল্টাবেন না। ওদেরকে শিক্ষা দিন যে কাপড় পাল্টাতে হয় ঘরের দরজা বন্ধ করে কখনই কারো সামনে নয়।
মার্জিত ড্রেস পরার শিক্ষা দিন.... হট/সেক্সি লাগছে তাকে এ ধরনের কথা কাউকে বলার সুযোগ দিবেন না বা উৎসাহ দিবেন না। বয়সের সাথে সাথে ড্রেসকোড তাকে শেখান বিশেষ করে মেয়ে বাচ্চাদের।
৩. অনেকেই আপনার শিশু সন্তানকে আদর করে আমার বউ বা আমার ছেলের বউ বা আমার ডার্লিং বলে ডাকে। কখনই তা প্রশ্রই দিবেন না। আপনি হয়তো জানেন না এ ডাকের পিছনে ভিন্ন কোন উদ্যেশ্য থাকলে ও থাকতে পারে।
৪. আপনার শিশু সন্তান যখন কোথাও খেলতে যায় তখন অবশ্যই নজরেও রাখবেন, সে কি ধরনের খেলা খেলছে বা কাদের সাথে খেলছে কারন দেখা যায় খেলার ছলে ইয়ং ছেলেদের দ্বারাই বেশী যৌন হয়রানির শিকার হয় বাচ্চারা অথবা সে বাসার বড় কারো দ্বারা সে নির্যাতিত হচ্ছে আপনার অজান্তে।
এছাড়া ও নিরব সময় যেমন দুপুর বেলা যখন আপনি ঘুমে থাকেন তখন অবশ্যই বাচ্চাদের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিবেন না।
৫. এমন কোন আত্বীয় বা বন্ধুদের বাসায় আপনার শিশু সন্তানকে জোর করে পাঠাবেন না যেখানে সে কমফোর্ট ফিল করে না বা সে সেখানে যেতে চায় না অথবা এমন কোন আত্বীয়র কাছে পাঠাবেন না যেখানে সে আগে খুব পছন্দ করতো যেতে এখন সেখানে যেতে চায় না। এক্ষেত্রে খতিয়ে দেখুন কোন সমস্যা নিশ্চয় আছে!!!!
অথবা কোথায় সে খুব উৎসাহ নিয়ে এখন যেতে চায় যা সে আগে চাইতো না তা ও দেখবেন খতিয়ে।
৬. আপনি হঠাৎ খেয়াল করলে আপনার উছ্ছল প্রানবন্ত শিশু সন্তানটি খুব চুপচাপ হয়ে গেছে.... আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে কেন সে এমন আচরন করছে। ওকে অবজার্ভ করুন। তারপর ধীরে ধীরে কৌশলে তা জানার চেস্টা করুন কারনটি। মনে রাখবেন শিশুটির আচরন বদলে যাওয়ার পিছনে অবশ্যই কিছু আছে..... আপনিই ওর সবচেয়ে আপন, আপনি যদি তার সমস্যার সমাধান না করেন তাহলে কেউই করতে পারবে না।
৭. যৌন শিক্ষা বিষয়ে আপনি হবেন ওর আসল শিক্ষক। যৌন শিক্ষা দিতে আপনাকেই সাবধানভাবে এগিয়ে আসতে হবে কারন আপনিই একমাত্র তাকে এ গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে সঠিক পথে শিক্ষা দিতে পারবেন। আপনি তাকে যৌন বিষয়ে শিক্ষা না দিলে সমাজই তাকে শিখাবে তবে তা সম্পূন্য ভুল ভাবে।
৮. টিভি বা যেকোন শো/কার্টুন/সিনেমা বাচ্চাদের দেখানের অাগে নিজে দেখে নিবেন এতে আপত্তিকর কিছু আছে কিনা। যদি থেকে থাকে তবে তাকে বুঝিয়ে তা দেখা থেকে বিরত রাখুন (অবশ্যই জোর করে নয়)।
আমার বাচ্চা ডিসকোভারী চ্যানেল খুব পছন্দ করে তবে আমিই তাকে বেছে দিয়েছি কোন কোন শো সে দেখবে ... এডাল্ট শোগুলো আমি তাকে দেখতে বারন করেছি, তাকে বুঝিয়েছি কেন তা দেখা উচিত নয়। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় কারন অনেক এ্যনিমেল শো তে ও পশুর সেক্স দেখায় যা তাকে বিব্রত করতে পারে। সুযোগ থাকলে নিজে পাশে থাকেন এ ধরনের টিভি শো দেখার সময়।
আর দয়া করে জি বাংলা বা স্টার প্লাসের মতো চ্যানেলগুলো থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখেন। আপনি জানেন না আপনার অজান্তে তাকে কতটা নিচে নামাচ্ছেন.... অসুস্থ পরিবেশ, প্রেম, পরকীয়া, কুটনামী, অতি সাজগোজ, সেিক্সি ড্রেস, ঝগড়া, কুটকৈাশলী বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন তাকে দিনের পর দিন।
৯. অনেক আপত্তিকর চ্যানেল আছে যা চালু থাকলে আপনার সন্তান কৌতুহলী হয়ে তা দেখতে চাইবে। অবশ্যই তা বন্ধ রাখুন। নিজেও দেখবেন না ওকে দেখাবেন না। কারন শিশুদের কৌতুহল অনেক বেশী আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি সবারই কৌতুহল আরো বেশী থাকে।
তবে অনেক বেশী সাবধান হবেন ইন্টারনেট এর পর্ন সাইটগুলোর ব্যাপারে। ব্লগার জিসান এর পর্ন সাইট ব্লক করার পরামর্শ আমার ভালো লেগেছে। আপনার সন্তান কি ধরনের সাইট ভিজিট করে নজরে রাখুন। ওকে নৈতিক শিক্ষা দিতে চেস্টা করুন। একদিনে তা সম্ভব নয় তা ধীরে ধীরে করুন।
১০. আপনার শিশুকে বলুন কখনই কাউকে যেন এলাউ না করে যৌনাঙ্গ হাত দিতে। আর এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই আপনাকে যেন জানায়।
তার যৌনাঙ্গ কিভাবে পরিস্কার রাখতে হবে আপনি নিজেই তা শিখান। তাকে যৌনাঙ্গ নিজে পরিস্কার রাখার প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা দিন। তবে মনে রাখবেন ৩ বছরের পর থেকে আপনিও তার অঙ্গে হাত দিবেন না।
১১. আপনার শিশুকে সব ধরনের পর্ণ উপাদান থেকে দূরে রাখবেন, তাকে বোঝান এর খারাপ দিক। মিউজিক, ভিডিও, ছবি, মুভি এমন কি কোন নিকট আত্বীয় যাকে আপনার কোন কারনে সন্দেহ হয়, তার থেকে দূরে রাখেন। খেলার ছলে বা কোথাও বেড়াতে গেলে কারো হাতেই শিশুকে দিবেন না।
শিশু লুকিয়ে কিছু করছে কিনা ডিটেকটিভ হিসেবে নয় মা/বাবা হিসেবে জানতে চান। ওর বন্ধু হোন শত্রু নয় কিছুতেই। আপনার অতি খবরদারী কিন্তু শিশুকে ওই খারাপ পথেই ঠেলে দিবে তাই বেশী শাসন নয, পরিমিত বিহেব করুন এ বিষয়ে। কেয়ারফুল্লি কেয়ারলেস হোন সবসময়।
১২. অনেক ভিড়ের মাঝে অস্বস্তিকর স্পর্শকে চিনতে সাহায্য করনি। এ ধরনের স্পর্শ থেকে ওরা কিভাবে রক্ষা করবে নিজেকে তা বলুন। অযথা বকা বা পাহারা নয় ... ওদের বুঝিয়ে বলুন। ওদেরকে নিজেকেই বাচাঁর কৈাশল শেখান।
১৩. যদি আপনার শিশু কারো সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে বা কম্লেইন করে অবশ্যই তা গুরুত্ব সহকারে নিবেন, কোনভাবেই অবহেলা করবেন না হোক না আপনার খুব কাছের মানুষ। সে আত্বীয়কে হয়তো আপনি কিছু বলতে পারবেন না তবে নিজের সন্তানকে তো অন্তত বাচাঁতে পারবেন।
আমি চাইল্ড এবিউজ এর উপর কিছু কাজ করেছিলাম এক সময় এবং এক ট্রেনিং এ বিশ্বের নাম করা জেন্ডার স্পেশিয়ালিস্ট কামলা ভাসিন বলেছিলেন, "তুমি তোমার সন্তানের ব্যপারে কাউকেই বিশ্বাস করবে না"।
আমরা সে ট্রেনিং এ এমন কিছু সহকর্মীকে পেয়েছি যারা কিনা তার চাচা/কাজিন/দুলাভাই/কাজের লোক দ্বারা দিনের পর দিন এবিউজ হয়েছিল কিন্তু কাউকে বলতে পারেনি। কারন কেউ তাকে বিশ্বাস করেনি বা গুরুত্ব দেয়নি। অনেকদিন পর আমাদের মাঝে মানসিক আর শারিরিক নির্যাতনে কথা বলতে পেরে অঝরে কেঁদেছিল।
আপনি কি বুঝতে পারেন এ ধরনের ঘটনার ভিতর দিয়ে গেলে শিশুটির স্বাভাবিক ভাবে বড় হতে কতটা বাধাঁর সৃষ্টি হয় তার মনযোগতে।
অনেক অনেক ভালো থাকুন।"
আমার কথাঃ এরপরও যদি দূর্ঘটনা ঘটেই যায়, সত্বর চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন। বিশ্বাসযোগ্য কারো সাথে আলাপ করুন। প্রয়োজনে থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলার কারো সাথে যোগাযোগ করুন, যাতে করে এ "ট্রমা" কাটানো যায়।
কৃতজ্ঞতাঃ সোহানী
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৬