সোনার হরিণ নামে খ্যাত বহু কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি নিজের করে নিতে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রত্যেককেই যেতে হয়, তার সর্বশেষ ধাপ হলো- ইন্টারভিউ বা ভাইভা। যদিও ইন্টারভিউকে টপকে চাকরিটা নিজের করে নিতে চান সবাই। ওদিকে ইন্টারভিউ বা ভাইভার নাম শুনলেই পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা। অনেকের তো প্রাণে পানি না থাকারই পরিস্থিতি। তারসঙ্গে আবার চলে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত যত চিন্তা ও ভয়। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ইন্টারভিউয়ের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়তে থাকে স্নায়ুচাপ।
অথচ সহজ কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখলে এবং চর্চা করলে আপনি সহজেই আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তা ও ভয় থেকে নিস্তার পেতে পারেন। নিম্নে সেসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হলো-
ইন্টারভিউয়ে কল বা ডাক পাওয়ার পর
আবেদন করা যেকোনো কোম্পানিতে অথবা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের চাহিদামাফিক লিখিত পরীক্ষার বা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির পরে প্রতিষ্ঠান থেকে সাক্ষাৎকারের ডাক পাওয়ার পর সাথে সাথে যেমন উদ্দীপনা কাজ করে; ঠিক তেমনি ধীরে ধীরে উদ্বিগ্ন হওয়াও বাড়তে থাকে। এসময় যদি সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এগুনো যায়, তাহলে ভাইভা বা সাক্ষাৎকারের দিন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকা অনেকাংশেই সম্ভব।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানাশোনা
সাধারণত আপনি যখন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেন, তখনই সেই কোম্পানি সম্পর্কে বা আপনার পদ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ও জ্ঞান থাকে। তবে সাক্ষাৎকার বা ভাইভায় ডাক পাওয়ার পরে যতটা সম্ভব ওই কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। এজন্য আরেকবার সঠিকভাবে ওই কোম্পানির ওয়েবসাইট দেখা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করে নোট নিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় রপ্ত করে নিন।
কোম্পানির পছন্দ-অপছন্দে নজর দেয়া
কোম্পানির সাম্প্রতিক কার্যকলাপ, অতীতের সাফল্য-ব্যর্থতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা তৈরি করুণ। যদি সম্ভব হয় তবে ওই কোম্পানির হেড বা সাক্ষাৎকার যিনি নিবেন বা মানবসম্পদ বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের জীবনী এবং কোম্পানিতে তাঁর বা তাঁদের কর্মকাণ্ড, চিন্তা-চেতনা-ভাবনা এবং সাফল্য জেনে নেয়া যেতে পারে।
অবশ্য অনেকেই বলতে পারেন, এটা আবার কীভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, এটাও সম্ভব। ইন্টারনেটের যুগে একটু এদিক-ওদিক ঢুঁ মারেন; সুযোগ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি এবং ইউটিউব বা লিঙ্কড ইনে তাঁদের প্রোফাইল চেক করে নিলেই আপনি তাঁদের টেস্ট বুঝতে পারবেন।
আর এসব তথ্য জানতে পারলে, দেখবেন সাক্ষাৎকারের দিন আপনাকে বেশ ফুরফুরে ও আত্মবিশ্বাসী লাগছে। এতে সাক্ষাৎকারের সময় আপনার লব্ধ জ্ঞান দিয়ে চাকরিদাতাদের অভিভূত করা সম্ভব হবে।
কাল্পনিক সাক্ষাৎকার
ভাইভার দিনটি আগেই কল্পনা করলে উদ্বিগ্নতা ও ভয় অনেকটাই কেটে যাবে। ভাবুন- আপনি যদি সাক্ষাৎকার নিতেন, তবে কি ধরনের প্রশ্ন করতেন এবং কীভাবে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রত্যাশা করতেন। এরপর ভাবুন- সেসব প্রশ্ন হলে আপনি কীভাবে চাহিদামত উত্তর দিতেন। এজন্য একবার চাকরিপ্রার্থী আর আরেকবার চাকরিদাতা হিসেবে নিজেকে যাচাই-বাছাই করুন। এতে যেমন স্নায়ু চাপ কমবে; ঠিক তেমনি আপনার ওইদিনে কি ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন, তা আগে থেকেই ধারণা নিয়ে তৈরি হতে পারলেন।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন
ভাইভাতে সাধারণত কিছু প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়ে থাকে। যেমন- ‘আপনার সম্পর্কে বলুন’, ‘আপনি কেন এ কোম্পানিতে কাজ করতে চান’, ‘আপনাকে কেন যোগ্য মনে করেন’, ‘আপনাকে কেন আমরা নেবো’, ‘আপনার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বলুন’- এমন টাইপের কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ভালো। এতে এসব প্রশ্ন করা মাত্রই আপনি চিন্তা ছাড়াই গুছিয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। সেইসাথে আপনি যে পদে আবেদন করেছেন, সে বিষয় সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় পড়াশোনা করে যাওয়া ভালো। অর্থাৎ আপনি যে কাজ করতে চাচ্ছেন, তাতে আপনার যে যোগ্যতা-দক্ষতা রয়েছে বা প্রয়োজন তা কতটুকু পূরণ করতে আপনি সক্ষম, তাও আপনাকে উপস্থাপন করতে হবে।
ভুল-ত্রুটির বাইরে গিয়ে নিজেকে উপস্থাপন
আপনার যদি কোন মুদ্রাদোষ থাকে যেটা দৃষ্টিকটু বা কোনো ধরনের দুর্বলতা, যেটি আপনার চাকরি প্রাপ্তিতে বাধা বা নিজেকে ছোটভাবে উপস্থাপন করবে, সেটি যেন ইন্টারভিউ বোর্ডে চলে না আসে, তা খেয়াল করুন। এজন্য দ্রুতই নিজের খারাপ দিকগুলো চিহ্নিত করে তা পরিত্যাগ করতে হবে। তার মানে- এমনটা কখনোই করা যাবে না যে চাকরিটা আপনার দরকার। বরং আপনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যাতে ওই পদে আপনাকে নিয়োগ দিলে ওই কোম্পানিই বেশি লাভবান হবে, সেটি প্রমাণ করুন।
শেষকথা
যদিও আলোচিত ভাইভা সংশ্লিষ্ট এসব বিষয় একদিনে অর্জন করা সম্ভব নয়। তারপরও প্রতিদিন চর্চায় রাখলে ভাইভার সময় যতটা সুন্দর ও সঠিক হবে; ততই আপনার ইন্টারভিউ ভালো হবে। যার ফলাফলস্বরূপ চাকরিটাও চলে আসবে আপনার হাতের মুঠোয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:২৪