somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাশিয়ার আক্রমণ শত্রুদের শেষ তীর

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-জাওলানী হাফিযাহুল্লাহ
আমীর
জাবহাতুন নুসরা [তানজীম আল কা’য়িদাতুল জিহাদ ফী বিলাদ আশ শাম ]
শামে মুজাহিদিনগণের অভূতপূর্ব বিজয়ের ফলে সিরিয়ান
শাসকগোষ্ঠী পতনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়। তাদের সকল
প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং বাহিনীগুলোর অগ্রসর হবার
সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। আজ সিরিয়ান আর্মির অবস্থা সেই সব
ভাড়াটে দলের মতোই হয়েছে, ইতিপূর্বে সাহায্যের জন্য যাদের
কাছে তারা (সিরিয়ান আর্মি) দ্বারস্থ হয়েছিলো। আজ
সিরিয়ান আর্মি জয়লাভে অক্ষম একটি বিশৃঙ্খল, নিয়মহীন
গুণ্ডাদলে পরিণত হয়েছে। মুজাহিদনগণ একের পর এক বিজয়ের
মাধ্যমে নুসাইরি শাসকগোষ্ঠীর প্রাণকেন্দ্রের কাছাকাছি
পৌঁছে গেছেন।ইরান ও ‘হিযবুল্লাহ’-র কাছে এখন এই সত্য পরিষ্কার
হয়ে গেছে যে, সিরিয়ান শাসকগোষ্ঠীকে দেয়া তাদের সব
সাহায্য ও সমর্থন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। দিগন্তে পরাজয়ের
কালো মেঘ দেখতে পেয়ে- শাসকগোষ্ঠী পুরো সিরিয়ার উপর
নিয়ন্ত্রন রাখার আশা সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করে। তারা নতুন এক
পরিকল্পনা গ্রহণ করে- যেসব অঞ্চল ইতোমধ্যেই মুজাহিদিনের
দখলে রয়েছে, সেগুলোর আশা বাদ দিয়ে দামেশক থেকে উত্তর
লাটাকিয়া পর্যন্ত নুসাইরী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে, তারা
নিজেদের জন্য তারা একটি আলাদা রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখার
চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু,মুজাহিদিনগণের বজ্রাঘাতে সেই চেস্টাও
ব্যর্থ হয়। আজ তাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই। নতুন বা
পুরোনো কোনো পরিকল্পনাই আর তাদের কাজে আসছে না।
মুজাহিদনগণের সুপরিকল্পিত ও কৌশলী আক্রমণের ফলে
নুসাইরিদের নতুন পরিকল্পনাও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। নতুন যে
রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ওরা গ্রহণ করেছিলো- এর ভিত নড়বড়ে হয়ে
পড়েছে। দামেশক আর লাটাকিয়া- এ দুজায়গাতেই নুসাইরিদের
অবস্থান আজ হুমকির সম্মুখীন। এমন অবস্থায় নুসাইরি শাসকগোষ্ঠী
নিজেদের বাঁচানোর জন্য তেহরানে একের পর এক প্রতিনিধি
পাঠাতে থাকে।
আর এখানেই রাশিয়া নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের একটি সুবর্ণ
সুযোগ দেখতে পায়। তারা সিরিয়াকে ব্যবহার করে ইউক্রেনের
ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলোর উপর চাপসৃষ্টির একটি সু্যোগ খুঁজে
পায়। সিরিয়া রাশিয়ার জন্য পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এক তুরুপের
তাস হিসেবে আবির্ভূত হয়। সিরিয়াকে ব্যবহার করে তারা
ইউক্রেন-সমস্যার একটি অনুকূল সমাধান পাবার স্বপ্নদেখা শুরু করে।
এটা পরিষ্কার, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ত্রিশ বছর আগে
হারানো প্রভাব ও অবস্থান ফিরে পেতে রাশিয়া বদ্ধপরিকর-
বিশেষ করে, আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকার প্রভাব কমে
যাবার কারনে। তবে আমেরিকার প্রভাব ক্ষুণ্ণ হবার মূল কারণ
ছিলো আফগানিস্তান ও ইরাকে মুজাহিদিনগণকে দেয়া মহান
আল্লাহর বিজয়, অথচ এ সত্য রাশিয়া ভুলে গেছে।
তাই বাশার আল-আসাদকে পতন থেকে রক্ষা করার জন্য রাশিয়া
সিরিয়াতে তাদের আগ্রাসন শুরু করলো। তারা জনসম্মুখে প্রচার
করলো তাদের এই অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে আইসিসকে ধ্বংস
করা। এই মিথ্যার মাধ্যমে পূর্বসূরীদের মতো করে তারাও
নিজেদের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে গোপন করতে চাইলো। কিন্তু রাশিয়া
ভালোভাবেই জানে,আইসিস সিরিয়ান শাসকগোষ্ঠীর জন্য
কোনো হুমকি বহন করে না। আইসিসের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো
নুসাইরিদের প্রাণকেন্দ্রগুলোর ধারে-কাছেও না। তাই, জাইশ-
আলফাতেহসহ নুসাইরিদের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধরত দলগুলোর ওপর
বোমা হামলার মাধ্যমে রাশিয়া সিরিয়াতে তাদের অভিযান
শুরু করাতে অবাক হবার কিছু নেই। আর নুসাইরি শাসকগোষ্ঠীর মতো
তারাও (রাশিয়া) মুজাহিদিনগণের হাতে মুক্ত ও তাঁদের
নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোর নারী ও শিশুদের উপর বোমা বর্ষণ করা শুরু
করে।
এভাবেই শুরু হয় সিরিয়াতে রাশিয়ার আগ্রাসন। আর শত কষ্টের
মাঝেও এটা আমাদের কাছে একটি সুসংবাদ হিসেবে আবির্ভূত
হয়। কারণ রাশিয়ার আগ্রাসন সিরিয়াতে ইরান ও ‘হিযবুল্লাহ’-র
ব্যর্থতার প্রমাণ এবং নিজ আয়ুর শেষ মুহূর্তে পৌছে যাওয়া
নুসাইরি শাসকগোষ্ঠীর পতনের পূর্বাভাস। একইসাথে রাশিয়ার
আগ্রাসন হলো, শামের মাটিতে পশ্চিমা ক্রুসেডারদের
(আমেরিকা ও তাদের মিত্র) পর পূর্বের ক্রুসেডারদের আগমনের
ঘোষণা। পশ্চিমাদের সব শক্তি, পরিকল্পনা ও রাজনীতি ব্যর্থ হবার
পর পূর্বের ক্রুসেডার রাশিয়া এখন শামে আগমন করেছে। বস্তাপচা
রাজনৈতিক সমাধানের ধোঁয়া তুলে জিহাদকে কলুষিত ও
বিপথে পরিচালিত করার জন্য পশ্চিমাদের করা সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ
হয়েছে। তাদের এসব কূটচালের উদ্দেশ্য ছিলো, শামের উপর
পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায়
তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
আমরা রাশিয়াকে প্রশ্ন করতে চাই, তারা কি আসলেই মনে করছে
যে, কিছু প্লেন আর কামান দিয়ে বাশার আর সিরিয়ান আর্মিকে
রক্ষা করা যাবে? নিজেদের বাঁচানো জন্য কি বাশার ও তার
বাহিনীর প্লেন আর কামানের অভাব ছিলো? নিঃসন্দেহে
রাশিয়ার এই আগ্রাসনের পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে- যার
সবগুলো এখনও প্রকাশ পায় নি। আজ আমরা যা জানি না সময়ের
আবর্তনে কাল তা আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে। তবে
নিশ্চিতভাবে আমরা যা জানি তা হলো, সবসময় এ ধরণের
ভিনদেশি আগ্রাসনকারীদের অবস্থা ওই গাছের মতো হয়, যেটা
নিজের মাটি ছাড়া বাঁচতে পারে না। আজ পূর্বের
ক্রুসেডারেরা শামে এসেছে। ওরা পূর্ব ও পশ্চিমের সকল
মুসলিমকে আজ বলছে “আমরা এসেছি তোমাদের শেকড়সহ উপড়ে
ফেলতে এবং তোমাদের হাজার বছরের ইতিহাসের সবচে
অন্ধকার অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি করতে।” যারা আহলুস সুন্নাহর প্রতি
সবচেয়ে বেশী ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করে – ইরান, ইরাক আর
লেবাননের শিয়া এবং সিরিয়ার নুসাইরি – রাশিয়া তাদের
সাথে মৈত্রী করেছে।
আজ শিয়ারা তাদের কলুষিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন
দেখছে। ওরা ওদের পূর্বপুরুষ ইবন আল-আলকামির পদচিহ্ন অনুসরণ করে
কাফিরদের হাতে আহলুস-সুন্নাহর পরাজয়ের পথ প্রশস্ত করছে। ইবন
আল-আলকামি তাতারদের বাগদাদে ঢোকার রাস্তা করে
দিয়েছিলো। তাতারেরা বাগদাদে ঢুকে ১০ লক্ষ সুন্নিকে হত্যা
করে। একইভাবে ইরানের নেতারা আহলুস-সুন্নাহকে অপমানিত
করার জন্য আফগানিস্তানে আমেরিকাকে সাহায্য করেছে। আর
ইরান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ইরাকের শিয়াদের কীভাবে সাহায্য
করেছে তা সবাই জানে। এই শিয়ারাই ইরাকে দখলদার
আমেরিকার সহযোগী হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত আমেরিকা
স্বর্ণপাত্রে সাজিয়ে ইরাককে ইরানের হাতে তুলে দিয়েছে।
ইরান, ইরাক আর লেবাননের শিয়ারা নুসাইরিদের সাথে এক হয়ে
আজ মুসলিমদের ভূমি শামের দরজা পূর্বের ক্রুসেডার রাশিয়ার জন্য
উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তারা তালি দিয়ে,নেচে গেয়ে, গর্বের
সাথে এই কাজ করছে। আর দাবি করছে তারা আত্মরক্ষার জন্যেই এই
কাজ করছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ সত্য উচ্চারণ করেছিলেন,
যখন তিনি ﷺ বলেছিলেনঃ “যদি তুমি কোনো লজ্জা
না অনুভব কর, তবে যা ইচ্ছা করো।” ইনশাআল্লাহ শামে রাশিয়া
যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সম্মুখীন হবে, এর ভয়াবহতা তাদেরকে
আফগানিস্তানে ফেলা চোখের-জলের কথাও ভুলিয়ে দেবে।
রাশিয়ার আগ্রাসন হলো শাম ও ইসলামের শত্রুদের তূণীরের শেষ
তীর ও শেষ অস্ত্র, ইনশাআল্লাহ। আর ইতিমধ্যেই দিগন্তে তাদের
ব্যর্থতার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তাদের হামলা আর
শাসকগোষ্ঠীর হামলার মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য আমরা
দেখিনি। হামলার নিশানা নির্ধারণ আর লক্ষ্যভেদে ব্যর্থতা- এই
দুক্ষেত্রেও তাদের অবস্থা নুসাইরিদেরমতোই। ইনশাআল্লাহ
শামের দ্বারপ্রান্তেই আমরা তাদের বিধ্বস্ত করবো, আর সাফল্য
দেয়ার মালিকতো একমাত্র আল্লাহ।
প্রিয় শামের প্রাণপ্রিয় ভাইয়েরা! রাশিয়ার হামলা আমাদের
বিন্দুমাত্র বিস্মিত করেনি, বরং যারা পশ্চিমা ও আঞ্চলিক
শক্তিগুলোকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায় তাদের পরামর্শ
আমাদের যারপরনাই বিস্মিত করেছে! যারা এসব রাষ্ট্র ও
শক্তিগুলোর সাথে সময় নষ্ট করতে চায়, তারা শামের বিরুদ্ধে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংঘটিত সকল অপরাধের ভাগীদার-
তারা এটা উপলব্ধি করুক আর নাইবা করুক। আর যদি সবাই তাদের
মতো এইসব রাষ্ট্র ও শক্তির উপর ভরসা করে বসে থাকে, তাহলে
শামের আর্তিও ঠিক ওইভাবে উপেক্ষিত ও বিস্মৃত হয়ে যাবে,
যেভাবে ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে হয়েছে। বাস্তবতা হলো
শামের এই যুদ্ধ হচ্ছে, কাফির যালিম, কলুষিত শাসকগোষ্ঠীকে
অপসারণের পর, শুরার মাধ্যমে ইসলাম ও আর-রাহমান আল্লাহর
শারিয়াহ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। এই জন্য উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান হাজারো
মুজাহিদিন ও কয়েক লাখ সাধারণ মুসলিম জীবন দিয়েছেন। যারা
পশ্চিম আর মধ্য প্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলোর আঁচলের নিচে
থাকতে আগ্রহী, তারা এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে চায়,
তারা চায় এই বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে। আহলুস-সুন্নাহর নগরী ও
শহরগুলোর মধ্যে অর্ধেকই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আহলুস-সুন্নাহ
তাদের বাসস্থান ও জন্মস্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং
পালাতে বাধ্য হয়েছে। তবুও কিছু দল এই অসামান্য ত্যাগের কথা
ভুলে গিয়ে পশ্চিমের প্রেস্ক্রিপশান অনুযায়ী ‘রাজনৈতিক
সমাধানের’ গোলকধাঁধায় ঢুকতে চায়। অথচ গালভরা বুলির
আড়ালে এসব তথাকথিত’রাজনৈতিক সমাধানের’ উদ্দেশ্য হলো,
পশ্চিম থেকে কিছু চরকে এনে শামে বসানো, যাদের কাজ হবে
নুসাইরিগোষ্ঠীর সাথে মিলে আহলুস-সুন্নাহর সামরিক শক্তিকে
গুঁড়িয়ে দেয়া। এসব’ সমাধান’-এর মাধ্যমে পশ্চিমাদের
স্বার্থসিদ্ধি হবে, ইহুদিরা নিরাপত্তা পাবে এবং আহলুস সুন্নাহ
হবে ক্ষতিগ্রস্থ, দুর্বল ও অসহায়। আর এই প্রতারণাকে পূর্ণতা দিতে
তারা শামের সুন্নিদের জান-মাল ও সম্মানের বিনিময়ে, কিছু
আজ্ঞাবাহী রাজনীতিককে সাময়িকভাবে আলঙ্কারিক,
নামসর্বস্ব কিছু পদে বসাবে।
বোঝার সক্ষমতা সম্পন্ন সকলের কাছে এটা পরিষ্কার যে, শামে
এখন পর্যন্ত মুজাহিদনগণ যতো বিজয় পেয়েছেন তা অর্জিত হয়েছে
আল্লাহর উপর ভরসা করার পর নিজেদের উপর ভরসা করার মাধ্যমে।
আর কেউ, আর কোনো কিছু মুজাহিদিনের কাজে আসেনি। এই
যুদ্ধক্ষেত্র এ কথার সত্যতার সাক্ষী। বিজয়ের সমীকরণ খুবই সরল। আর
আল্লাহ আমাদের তা জানিয়ে দিয়েছেনঃ “হে বিশ্বাসীগণ!
যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে
সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।” [সূরা
মুহাম্মাদ]। এই হলো বিজয় অর্জনের একমাত্র পথ। আর যারা পশ্চিমা
আর আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কাছে ভিক্ষা করে বেড়ায়, তারা শুধু
নিজেদের যিল্লতি, লাঞ্ছনা আর লজ্জাই বৃদ্ধি করবে। এই
রাষ্ট্রগুলো শুধু তাদেরকেই শ্রদ্ধা করে যারা তাদের প্রতি কঠোর
ও দৃঢ়সংকল্প। “আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না, নতুবা
তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে।“ [সূরা হুদ]। ভিক্ষাবৃত্তি ব্যক্তির
দ্বীন,লজ্জা, সম্ভ্রম, মর্যাদা ও আত্মসম্মান ধ্বংস করে ফেলে। আর
সম্মান চলে গেলে জীবনে আর কী-বা বাকি থাকে?
একটি কথা আছেঃ যে তোমাকে তুচ্ছ মনে করে, তাকে খুশি করার
জন্য ব্যস্ত হয়ো না, কারণ তখন সে তোমাকে আরও বেশী তাচ্ছিল্য
করবে। বরং তোমার আত্মসম্মানকে তার গর্বের সমান করে
তোলো। আর ব্যক্তির আত্মসম্মান তাঁকে রাজা-বাদশাহদের
মর্যাদার সমান করে তুলতে পারে। সত্যের পথ শুধু একটিই, কিন্তু
মিথ্যার পথ হয় অনেক।
হে পশ্চিম ও শামের পার্শ্ববর্তী দেশের শাসকদের বাহবা পেতে
ব্যস্ত ব্যক্তিরা! দেখুন আজকে ফিলিস্তিনের কী অবস্থা। তাদের
দিকে তাকিয়ে দেখুন, যারা দাবি করে যে, তারা
ফিলিস্তিনের জন্য সংগ্রাম করে। লাঞ্ছিত, ক্রীতদাসসুলভ, এক
মরীচিকার পেছনে ছুটন্ত পরাজিত মাহমুদ আব্বাসের দিকে
তাকিয়ে দেখুন- শিক্ষা নিন তার দৃষ্টান্ত থেকে- এক হাসির
পাত্র। একটা ত্যানা, যা তারা পতাকা বলে খেয়াল খুশি মতো
উত্তোলন করতে পারে, আর উপহাস ভরে তালি দিতে পারে। এই
হলো তার অবস্থা। আর অন্যদিকে মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে,
লুটপাট চালানো হচ্ছে আর আল-আকসা ইহুদিদের দ্বারা প্রতিনিয়ত
আক্রান্ত হচ্ছে। আপনারা কি শামের মুসলিমদেরকে এই একই
ভাগ্যবরণ করে নিতে আহবান করছেন?
নিঃসন্দেহে মাসজিদুল-আকসার সামনে পাথর নিয়ে টহল দেয়া
হাতে গোনা কয়েকজন, শত শত কনফারেন্স আর হাজার হাজার
রাজনীতিবিদের চাইতে উম্মাহর জন্য বেশি কল্যাণকর। যারা
চায় শামকে সাহায্য করতে, শামকে ও শামের মুসলিমদের
গৌরবান্বিত করতে, অবশ্যই তাদেরকে পশ্চিমা ও আঞ্চলিক
রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।কারণ সে ব্যক্তি
নিজেকে মুক্ত করতে ও নিজের সম্মান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে,
যে ফিতনার উৎস থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।
নিঃসন্দেহে অর্থ আর ক্ষমতা একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু ঈমান
ও আল্লাহর ভয় রয়ে যাবে। দুনিয়ার আমলের মাধ্যমে জান্নাতে
যাবার চেষ্টা করার পরিবর্তে আজ কিছু মানুষ দ্বীনকে ব্যবহার
করে দুনিয়াতেই ‘জান্নাত’ পেতে চাচ্ছে। এই এই ধোঁকা সম্পর্কে
সবাইকে সতর্ক করছি- বাস্তবিকই আপনারা যখন এর মুখোমুখি হবেন,
তখন যেন আপনারা বিস্মিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হয়ে পড়েন- আর
যাতে করে শত্রুর কূটচালের কারণে আপনারা এই মহান পথ (জিহাদ
ও শারিয়াহ) থেকে বিচ্যুত না হন। আমি একজন সমব্যথী
পরামর্শদাতার অবস্থান থেকে বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য এই
কথাগুলো বলছি। তবে আমি আশঙ্কা করছি, ইতোমধ্য অনেক দেরি
হয়ে গেছে। কারো অবদানকে ছোটো করা বা প্রচেষ্টাকে তুচ্ছ
করার জন্য আমি এই কথাগুলো বলছি না, বরং মুসলিমদের জান
মালের প্রতি আমার ভালোবাসার কারণে বলছি; যেন আল্লাহ
ছাড়া আর কারো রাস্তায় মুসলিমদের জান ও মাল নষ্ট না হয়- এজন্য
বলছি। আপনারা কাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছেন- আল্লাহর পর
কাকে সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করছেন- এই ব্যাপারে
সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রতারণা স্পর্শ করতে পারবে না- এমন বন্ধুত্ব
গ্রহণ করুন । এমন বন্ধু নির্ধারণ করুন, যে আপনাকে বিপদের মুহূর্তে
ত্যাগ করবে না। মুসলিমরা কখনো তাদের শত্রুদের শক্তির কারণে
পরাজিত হয়নি বরং তারা পরাজিত হয়েছে তাদের নিজেদের
ভুল ও অনৈক্যের কারণে।
আজ শামের যুদ্ধ এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এটিই হবে
বিজয়ের আগে এই জিহাদের চূড়ান্ত পর্যায়, ইনশাআল্লাহ। চূড়ান্ত
এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ আবশ্যক, যাতে করে এতোদিন ধরে
প্রবাহিত আহলুস-সুন্নাহর রক্ত বৃথা না যায়। সব মুজাহিদিনের
দায়িত্ব হলো, এখন ফ্রন্টলাইনে ছুটে আসা। এখনই সময় আল কুনাইত্রা,
দারা আর হাররানের মুজাহিদিণগণের গর্জে ওঠবার। এখন সময় পূর্ব,
উত্তর আর দক্ষিণ গুতাহ, হোমস, হামা, লাটাকিয়া আর আলেপ্পোর
বীর যোদ্ধাদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বার। শাসকগোষ্ঠীর
নিয়ন্ত্রণাধীন সবচে স্পর্শকাতর জায়গাগুলোকে আপনারা
নিশানা বানান। লাটাকিয়াতে নুসাইরিদের গ্রামগুলোকে
নিশানা বানানো এবং তাদের বিরুদ্ধে হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি
করা আবশ্যক। যুদ্ধরত সব দলকে আমি আহবান করছি যে, নুসাইরিদের
গ্রামগুলোকে আপনারা আপনাদের সব মিসাইলের নিশানা
বানান। তাদের আকাশে মিসাইলের বৃষ্টি তৈরি করুন। প্রতিদিন
যেন একশটি মিসাইল নুসাইরিদের গ্রামে গ্রামে আঘাত হানে,
ঠিক যেভাবে এই পশুদের হাতে আহলুস-সুন্নাহর নগর ও শহরগুলো
আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। যে কষ্ট আহলুস-সুন্নাহ এতোদিন ভোগ
করেছে, সময় এসেছে নুসাইরিদের তার স্বাদ নেবার। আর যদি ওরা
আমাদের শহর ও নগরের উপর ওদের সীমালঙ্ঘন বন্ধ করে তবে আমরাও
বন্ধ করবো এবং আমরা সীমালঙ্ঘন করবো না। কারণ, যে আগ্রাসনের
জবাবে সমপরিমাণ আগ্রাসন চালায় সে সীমালঙ্ঘনকারী নয়।
এক ক্ষমতালোভী উন্মাদের জন্য আর কতোদিন মুসলিমরা তাঁদের
অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? আর কতোদিন সুন্নিদের রক্ত
প্রবাহিত হবে? এক রাষ্ট্র ঘোষণা করছে এই শাসককে (বাশার)
ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। আরেক রাষ্ট্র বলছে তাকে ক্ষমতা
থেকে অপসারণ করতে হবে, আর তৃতীয় আরেক পক্ষ এসে বলছে
কিছুদিন সে (বাশার) থাকুক, তারপর তাকে অপসারণ করা হবে। না,
বরং এই শাসককে হত্যা করা হোক। সাপের মাথায় তার বিষের
উৎস। আমরা এই মাথাকেই কেটে ফেলতে চাই।
আমি বাশার আল আসাদের মাথার জন্য ৩ মিলিয়ন ডলারের
পুরস্কার ঘোষণা করছি। যে তাকে হত্যা করবে, তাকে ও তার
পরিবারকে আমি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সে যদি
বাশারের পরিবারের সদস্য কিংবা তার অধীনস্ত কোনো
ব্যক্তিও হয় তাও। যে বাশার আল-আসাদকে হত্যা করবে, তাকে ও
তার পরিবারকে তাদের পছন্দমতো যেকোনো জায়গায়
নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে আসা হবে, ইনশাআল্লাহ। আর আমি
ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব নিচ্ছি। একইভাবে আমি
হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করার জন্য ২ মিলিয়ন ইউরো পুরস্কার
ঘোষণা করছি। হাসান নাসরুল্লাহকে যে হত্যা করবে, তাকে ও
তার পরিবারকে নিরাপদে তাদের পছন্দমতো যেকোনো
জায়গায় পৌঁছে দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ, যদি সে ব্যক্তি হাসান
নাসরুল্লাহ-র দলভুক্ত বা পরিবারের সদস্যও হয় তবুও। আমি
ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব নিচ্ছি।
একই সাথে আমি শিশানের বীর মুজাহিদগণকে আহবান করছি
শামের মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য। রাশিয়াকে তার নিজ
ঘরে আক্রমন করতে আপনারা সাধ্যমতো চেষ্টা করুন, যাতে করে
সে শাম থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। যদি রাশিয়ান আর্মি শামের
বেসামরিক মুসলিমদের হত্যা করে, তবে তাদের বেসামরিক
জনগণকে হত্যা করুন। আর যদি তারা মুসলিম সেনাদের হত্যা করে
তবে আপনারা তাদের সেনাদের হত্যা করুন। আমরা তাদের সাথে
সেভাবেই আচরণ করবো, যেভাবে তারা আমাদের সাথে আচরণ
করে থাকে। আর আমরা সীমালঙ্ঘনকারী হবো না। আল্লাহ যেন
আপনাদেরকে সাহায্য করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
এই মুহূর্তে নিজেদের মধ্যেকার সব মতবিরোধ ও সহিংসতা বন্ধ
করতে শামে যুদ্ধরত সব দলকে আমি আহবান করছি। আমাদের
মধ্যেকার যতো মতপার্থক্য ও বিরোধ আছে তা শামে রাশিয়ান ও
পশ্চিমা ক্রুসেডারদের আগ্রাসন শেষ হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখুন।
আমি মুজাহিদিন এর তালওয়া ও মুসলিমদের বর্তমান অবস্থার
ভিত্তিতে আপনাদেরকে এই আহবান করছি। আল্লাহ যেন আমাদের
সবাইকে ক্ষমা করেন। আর দুর্বলতার ব্যাপারে আমরা কোনো
অভিযোগ করি না, না আমরা দারিদ্রকে ভয় পাই।
“এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মতো অন্তর
রয়েছে। অথবা যে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।“
[সূরা কাফ]
একইভাবে আমি এই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) সব মুসলিম ও জনগণকে
বর্তমান অবস্থা ও বিপদের গুরুত্ব অনুধাবন করার আহবান জানাচ্ছি।
এটা এমন এক বিপদ যা আপনাদের ও আপনাদের ভূমির জন্যও হুমকিস্বরূপ।
এই ক্রুসেডার-শিয়া জোট যদি শামে সফল হয়, তবে তারা এই সম্পূর্ণ
অঞ্চলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাবে, সবার
উপর হামলা করবে। আজ আহলুস-সুন্নাহ এক মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
আজ আহলুস-সুন্নাহর দ্বীন, রক্ত, সম্মান ও পবিত্র মাসজিদগুলো ঝুঁকির
সম্মুখীন। ক্রুসেডার-শিয়া জোট শুধু শাম নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে না,
বরং তারা চায় মক্কা, মাদিনা আর জেরুসালেমের উপর নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা করতে। তারা চায় সুন্নিদের সব জায়গা দখল করে নিতে।
তাদের উদ্দেশ্য হলো, মুসলিমদের ও তাদের সালাফ-
সালেহিনদের অপমান করা। শিয়াদের মুখগুলোই দিন রাত সাক্ষ্য
দেয় যে, ওরা আহলুস-সুন্নাহর প্রতি কতোটা তীব্র ঘৃণা লালন করে
থাকে! যদি আল্লাহ শামের দোরগোড়াতে তাদের ধ্বংস করেন,
চূর্ণবিচূর্ণ করেন, তবে তা হবে সমগ্র উম্মাহর জন্য বিজয় এবং
ইতিহাসের এক মহান নব অধ্যায়ের সূচনা। দামেশকের বিজয় হবে
আল-আকসা বিজয়ের সূচনা, ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ দামেশকের
বিজয় হবে সব মুসলিম-ভূমির স্বাধীনতার সূচনা।
যুদ্ধ করতে সক্ষম এমন প্রত্যকে পুরুষের উপর এখন যুদ্ধ ফরয। নিজেদের ভূমি
ও পরিবারকে জিহাদের মাধ্যমে সমর্থন করা এখন তাদের জন্য
অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের দায়িত্ব
হলো, তাঁদের হাতগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়া এবং তাঁদের
সম্পদের দ্বারা মুজাহিদিনদেরকে সমর্থন করা। আর সব আলিম,
লেখক, সাংবাদিক, মিডিয়া কর্মী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে
বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য বাধ্যতামূলক যে, তাঁদের সবটুকু শক্তি
দিয়ে শামের মুজাহিদিনদেরকে তারা সাহায্য করবেন এবং এই
ব্যাপারে যালিম তাগূত শাসকের রক্তচক্ষুকে ভয় করা চলবেনা।
যারা ফিলিস্তিনকে ভুলে গেছে তারা শামকেও ভুলে যাবে।
কিন্তু, ইনশাআল্লাহ, আমরা আমাদের রক্ত আর জীবন দিয়ে শাম
থেকে ক্রুসেডার-শিয়াদের বিতাড়িত করবার দায়িত্ব নিচ্ছি।
আর আল্লাহ-ই একমাত্র সাফল্যদাতা।
হে ইসলামের সৈন্যরা! আল্লাহ আপনাদের যে বিজয় (ফাতহ)
দিয়েছেন এবং ইনশাআল্লাহ সামনে যে বিজয় আসছে, তা
শুধুমাত্র আপনাদের সুদীর্ঘ পরিশ্রম আর প্রচেষ্টার ফল। আজ যেন
শতবছরের প্রচেষ্টার পর শামে মুজাহিদিনদের শক্তি ক্রমান্বয়ে
বৃদ্ধি পেয়ে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছে! শামে ইস্পাতের তৈরি
পুরুষেরা নিখুঁত হয়েছেন আর হাক্ব ও বাতিল পরস্পর পৃথক হয়ে গেছে।
এমন কোনো তরবারির খাপ উন্মোচিত হয়নি, এমন কোনো বুলেট
ছোড়া হয়নি, এমন কোনো রকেট ছোড়া হয়নি আর এমন কোনো
মুহাজির আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করেননি- যে এর পেছনে
শামের নিকটবর্তী হবার বা তা মুক্ত করবার ইচ্ছা ক্রিয়াশীল
ছিলোনা। যারা নিহত হয়েছেন, তারা একে পরস্পরকে পরামর্শ
দেয়ার পর আমৃত্যু জিহাদ করবার জন্য শপথবদ্ধ হয়েছিলেন এবং এই
অবস্থায়ই তাঁরা নিহত হয়েছেন। তাঁরা যে দায়িত্ব
নিয়েছিলেন, আজ আল্লাহ আপনাদের হাতে তা ন্যস্ত করেছেন।
আল্লাহর সিদ্ধান্তে আপনারা শামে বিজয় পেয়েছেন। শতবছরের
জিহাদ আর শাহাদাতের ফসল আল্লাহ আপনাদের হাতে তুলে
দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে আপনাদের সম্মানিত করেছেন।
মুসলিমদের অন্তর থেকে শাম কখনোই মুছে যাবে না। প্রজন্মের পর
প্রজন্ম অনিমেষ-দৃষ্টিতে শামকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। আর যখন
চোখের পাতা পড়েছে তখনও শামের স্বপ্ন তাঁদের চোখগুলোকে
ছেড়ে যায়নি। নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাম আপনাদের
উপর একটি গুরুদায়িত্ব। আপনাদের প্রতি এবং যারা আপনাদের
স্থলাভিষিক্ত হবে তাঁদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি একটি
গুরুদায়িত্ব।
“হে ঈমানদারগণ, খেয়ানত করোনা আল্লাহর সাথে ও রসুলের
সাথে এবং খেয়ানত করোনা নিজেদের পারস্পরিক আমানতে
জেনে-শুনে।” (সূরা আনফাল)
যাদের উপর আল্লাহ আজ জিহাদের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন
আপনারা তাঁদের মাঝে অগ্রবর্তী দল। আল্লাহ আপনাদের এর
দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আর এই সম্মানের দাম হলো,
যুদ্ধক্ষেত্রে ও জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে একনিষ্ঠতা
এবং দৃঢ়ভাবে এর মূলনীতিগুলো আঁকড়ে থাকা। স্মরণ করুন, সবচাইতে
পবিত্র রক্তের বিনিময়ে এই ভূমি প্রথমবার বিজিত হয়েছিলো।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু-
আনহুম এর রক্তের বিনিময়ে মুসলিম জাতি প্রথমবার শাম জয়
করেছিলো। তারপর এই ভূমির দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিলো
আমাদের পূর্ববর্তী কল্যাণময় প্রজন্মের কল্যাণময় ব্যক্তিদের উপর। আর
তারপর দখলদারের হাতে শামের পতন হলো এবং তারপর
নুসাইরিদের হাতে শাম লাঞ্ছিত হয়েছিলো। এবার আপনাদের
পালা। আজ শাম ও শামের অধিবাসীদের জন্য মুসলিমদের মর্যাদা
ও গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও পুনরুদ্ধার করার সময় এসেছে। তাই শত্রুর
বিপুল সংখ্যা দেখে ভীত হবেন না। ইয়ারমুকের যুদ্ধের দিন
খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু-আনহুকে বলা হয়েছিলো,
“আপনি কি দেখছেন না, কী বিশাল-সংখ্যক সৈন্য আপনাদের
বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে?”। জবাবে খালিদ রাদিয়াল্লাহু-আনহু
বলেছিলেন, “তাদের এই সংখ্যা তাদের কী কাজে আসবে যদি
আল্লাহ আমাদের পক্ষে থাকেন এবং আমাদের বিজয় দেন?”। হে
শামের মুজাহিদিনগণ! আল্লাহ নব্য ক্রুসেডারদেরকে আপনাদের
কাছে পাঠিয়েছেন। তাই সু্যোগের সদ্ব্যবহার করুন এবং তাদের
পরাজিত করুন; তাদের অস্ত্র ও সম্পদ গানিমাহ হিসেবে গ্রহণ করুন।
“তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়।
আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা
তা অপছন্দ করে।” [সূরা আস-সাফ]
জেনে রাখুন, যে কাফিরদের উপর আল্লাহ আপনাদের বিজয়
দিয়েছেন; ওরা আজ সম্মিলিতভাবে ওদের লোকেদেরকে
আপনাদের বিরুদ্ধে জড়ো করেছে। ওদের সংখ্যা এতোই বেশি
যে, যদি আপনি তাকান তাহলে ওদেরকে সংখ্যায় অগণিত
পিঁপড়ের মতো মনে হবে। ওরা সুসজ্জিত হয়েছে, প্রস্তুতি গ্রহণ
করেছে এবং ওদের হৃদয়ে মানবতার ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু
আল্লাহ আমাদের মাওলা/রক্ষাকারী, আর ওদের কোনো মাওলা/
রক্ষাকারী নেই।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেনঃ
“যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে
মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-
সরঞ্জাম; তাদের ভয় করো। তখন তাদের ইমান আরও দৃঢ়তর হয়ে যায়
এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার
কামিয়াবীদানকারী!” [সূরা আল-ইমরান]
আমরা নিশ্চিত যে, যুদ্ধের তীব্রতা এখন আরও বৃদ্ধি পাবে আর
আপনারাতো বিপুল শক্তি ও কঠোরতার অধিকারী (কাফিরদের
প্রতি) এবং আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা অথবা মৃত্যুবরণ করা
আমাদের চোখগুলোর জন্য শীতলতা স্বরূপ (কুররাতুল আইনুন)। আল্লাহ
আমাদের ও তাদের মধ্যে ফায়সালা নির্ধারণ করে দেয়ার আগে
ইনশাআল্লাহ আমরা নিচেষ্ট হবো না এবং আমরা ধৈর্য হারাবো
না। আর আল্লাহই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। হে ইসলামের
সেনারা! এক আঘাতের পর পুনর্বার আঘাত না করে শত্রুকে
ছাড়বেন না। আর হতাশা ওদের সম্পূর্ণভাবে গ্রাস না করা পর্যন্ত,
একের পর এক ফ্রন্ট খুলে ওদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলুন।
সময়ের (সদ্ব্যবহারের) ব্যাপারে সতর্ক হোন, কারণ শত্রুর মুখোমুখি
হবার আগেই সময় আপনাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। সতর্কতা আর
ভয়ের মধ্যে পার্থক্য করুন। ভীতু ব্যক্তি শত্রুকে হত্যা করার চাইতে
নিজের জীবনকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর তাই পেছনে বসে
থাকা লোকদের সাথে বসে থাকা-ই তার জন্য অধিক মানানসই।
কিন্তু সাহসী ও শক্তিমান ব্যক্তি জানে কখন অগ্রসর হতে হয় আর কখন
পেছাতে হয়। যতোটা ভালোভাবে সে নিজেকে চেনে এরচে
বেশি সে তার শত্রুকে চেনে। যখন তাঁকে কোনো কাজের
দায়িত্ব দেয়া হয়, সে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করে, আর
যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁর কাছে যা আছে তাই নিয়ে
যথাসাধ্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তো
খেজুরের ডাল দিয়েও একটি দলকে প্রস্তুত করেছিলেন। সে হলো
শক্তিমান ব্যক্তি, যে তাঁর শত্রুর প্রতি কঠোর আর তাঁর সঙ্গীদের
প্রতি কোমল। চূড়ান্ত আঘাত হানা ছাড়া আর কোনো কারণে সে
তাঁর তলোয়ার খাপমুক্ত করে না। যখন বিজয়ী হয়, তখন সে প্রতিশোধ
নেয় না এবং কাউকে অপমানিত না করতে সে যথাসাধ্য চেষ্টা
করে। সে বিপদের সময় পিছু হটে না আর লোভের সময় ( গানীমাহ
বিতরণের সময়) অগ্রবর্তী হয় না। সে চিন্তা করে এবং নিজের
চিন্তা প্রকাশ করে, কারণ চিন্তা ছাড়া তরবারি তার নিজ
মালিককেই হত্যা করে।
শত্রু তরবারি দ্বারা যতোটা পরাজিত হয়, তার চাইতে বেশি
পরাজিত হয় সুচিন্তিত কৌশলের কাছে। যে ব্যক্তি সাহসী ও
শক্তিমান সে কখনো বিশ্রাম নেয় না, কারণ সে জানে শত্রু এক
মুহূর্তের জন্য তাদের কাজ বন্ধ রাখছে না। আর তাঁর সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে তাঁর শত্রুর হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে বের করে
এনে তাকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে। সে হলো এমন এক
দুঃসাহসী অভিযাত্রী যে বিপদে ভয় পায় না, বরং আগ বাড়িয়ে
তাতে ঝাপ দেয়। সে হাসিমুখে মুসলিম উম্মাহর জন্য নিজের জীবন
বিলিয়ে দেয়। তবে সে একজন উত্তেজনা অন্বেষী হঠকারী
ব্যক্তি নয়, যে কিনা নিজের উত্তেজনার খাতিরে উম্মাহর
কল্যাণকে বিসর্জন দেয়। সে নিজের শক্তিমত্তাকে নিজের
বিভ্রান্তির কারণ হতে দেয় না এবং সে তাঁর শত্রুকে ছোট করে
দেখে না। সে তাঁর সঙ্গী যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের প্রতি
একজন অকৃত্তিম, আন্তরিক বন্ধু, আর তাঁর শত্রুদের প্রতি রুক্ষ ও অত্যন্ত
কঠোর। শত্রুরা তাদের ইচ্ছেমতো তাঁকে যুদ্ধে টেনে আনতে
পারে না, বরং সে তাঁর সুবিধামতো ও পছন্দনীয় সময়ে তাঁর
শত্রুকে যুদ্ধে টেনে আনে। যখন সে আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন
সে নেকড়ের মতো আরো বেশী শক্তিশালী ও হিংস্র হয়ে ওঠে।
মুসলিমদের সম্মান ও তাঁদের পবিত্র-ভূমির ব্যাপারে সে গভীর
গীরাহ অনুভব করে। যখন মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত হয়, তখন তা তাঁর
মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং সে শোষিতকে শোষকের
বিরুদ্ধে বিজয়ী করতে অগ্রসর হয়। সে প্রত্যেক ব্যক্তির আইনগত
অধিকারকে সম্মান করে। সে কখনো সঠিক শারিয়াহগত
সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে না এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর
শারিয়াহ অনুযায়ী করা ফায়সালা মেনে নিতে রাজি থাকে।
অহংবোধ কখনো শারিয়াহর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে তাঁর জন্য
বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
হে মুজাহিদিন! যদি প্রতিটি বিষয়কে এর উপযুক্ত স্থানে রাখা হয়,
তবে নিশ্চয়ই, কঠোরতা ও শক্তি, দয়াশীলতা আর কোমলতার জন্য
দুর্গস্বরূপ। যদি মুজাহিদগণের হৃদয় থেকে সব দয়া মায়া হারিয়ে
যায়, তবে তারা হিংস্র যালিমে পরিণত হয়। আর যদি তাঁদের
মাঝে কঠোরতা ছাড়া শুধু দয়া থাকে, তবে তারা অসতর্ক ও দুর্বল
হয়ে পড়ে। তাই দয়ার স্থানে কঠোরতা প্রদর্শন হলো ভ্রান্তি ও
কলুষতা এবং কঠোরতার স্থানে দয়া প্রদর্শনও ভ্রান্তি ও কলুষতা।
কোমলতা ও কঠোরতার মাঝে পার্থক্য করার উদাহরণ হলো, আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলার এই আয়াতঃ
“তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি
হবে কঠোর।” [সূরা মায়িদা]
হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের
প্রতি কঠোর বানিয়ে দিন।
হে আল্লাহ! আমাদের শক্তি ও সংহতি বৃদ্ধি করে দিন এবং
আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে দিন।
হে আল্লাহ! হে কিতাব নাযিলকারী, মেঘসমূহ পরিচালনাকারী,
আহযাবের পরাভূতকারী! শত্রুবাহিনীকে পরাভূত করুন এবং তাদের
বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।
ইয়া রাব্ব ! আমাদের গুনাহ সমূহ মাফ করে দিন, আমাদের ত্রুটি ও
সীমালঙ্ঘনগুলো ক্ষমা করে দিন, আমাদের পা গুলোকে দৃঢ় করে
দিন আর কাফিরদের উপর আমাদের বিজয় দান করুন।
সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ
ﷺ এর উপর এবং তাঁর ﷺ পরিবার ও সাহাবা
রাঃ এর উপর। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ-র যিনি জগত সমূহের
একচ্ছত্র অধিপতি।
(সমাপ্ত)
[ইংরেজী থেকে অনূদিত, সূত্র আল মুওয়াহিদীন মিডিয়া:
@almuwmed]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×