১৯৯৮-৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন আমার প্রিয় লেখক। আরো ১০ জন কিশোরের মতো আমিও বহুরাত কাটিয়েছি খালিপায়ে রাস্তায় হিমু হবার প্রত্যাশায়। জনতার মাঝে খুঁজেছি নির্জনতা। অথচ উনার সৃষ্ট 'আতাহার' চরিত্রটাই আমাকে টানতো বেশি। শখের কবিতা লিখা ছেড়ে পুরোপুরি কবি হবার ইচ্ছেটা আমার জাগে 'কবি' উপন্যাসটি পড়ার পর। সেবা প্রকাশনীর থ্রিলার আর ক্লাসিক এর পাশে বাংলা উপন্যাস পড়ার দিক নির্দেশনাও পেয়েছি উনার বই থেকেই। উনি রেফারেন্স দিতেন সব প্রথিতযশা উপন্যাসের, ঔপন্যাসিকের, কবিতা ও কবি'র। তারপর একদিন উনার দেখানো পথ ধরেই সমালোচনা করতে শিখলাম। শিখে প্রথম আঙ্গুল তুলতে শুরু করলাম উনার দিকেই। বহুবার আড্ডার টেবিলে উনার প্রতিভার অপচয় করছেন বলে গাল দিয়ে উঠতাম। অভিযোগে নয়, অভিমানে। নিরন্তর, সৌরভ, ফেরা, ১৯৭১, নন্দিত নরকে, শংখনীল কারাগার, কৃষ্ণপক্ষ, অপেক্ষা, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, দেবী,...কতো লিখবো! হ্যাঁ লিখতে পারবো উনার সস্তা বইয়ের দীর্ঘ তালিকাও। তবে, উনার সবচেয়ে বড় অবদানকে মাথায় রেখে নিজেকে অকৃতজ্ঞ বানানোর মত স্পর্ধা আমার নেই। উনি বাংলা উপন্যাস পড়তে শিখিয়েছেন, দেখিয়েছেন তারাশংকর, বিভূতিভূষন, মানিক কিংবা নীহাররঞ্জনকে। বলে দিয়েছেন choice is yours. তিনি পাঠক তৈরীর কারিগর ছিলেন; যে পাঠক তার উপন্যাসেরও সমালোচনা করতে শিখে বোদ্ধা হয়ে গেছে এতোদিনে।
বর্ণ পরিচয়ের অলীক উপমা দিয়ে আমাদের শিক্ষাজীবন শুরু। তাতে বর্ণ পরিচয়ের সাহিত্যমূল্যকে বিচারের মাপকাঠিতে এনে অস্বীকার করার উপায় আছে?
ভালো থাকুন স্যার। আপনার পুরোনো বইয়ের সমালোচনা করার কিছুই বাকী নেই। লিখবেন না আর নতুন বইও। এবার নিশ্চয়ই আপনার ভালো বইগুলোর মূল্যায়ন শুরু হবে-যা জীবিত অবস্থায় আপনার প্রাপ্য ছিল। জানেন তো, এদেশে জীবিতদের চেয়ে মৃতরাই সবসময় প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। আপনিও তার বাইরে কেন থাকবেন? তবু এটা সত্য, সৈয়দ হক এর ভাষায় আপনি ছিলেন 'ছ-আঙ্গুলী' মানুষ। আপনার ষষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে আপনি গত চল্লিশ বছরে যে আঁচড় কেটেছেন, বাঙ্গালির বুকশেলফ থেকে সেই আঁচড় কোনদিন মুছে যাবেনা।
চান্নিপসর রাইতে মরতে চেয়েও আপনার মৃত্যু হলো অমাবস্যায়; কারণ আমাদের অনুভূতির চান্নি আপনি পূর্ণিমা দিয়ে ভরে দিয়ে গেছেন।
হায়! শেষ জোছনাটাও নিজের জন্য রাখলেন না!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:১৩