বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে পূর্বপরিকল্পিত, যার কিছু প্রমাণ এই লেখায়। ওই দিনের অনুষ্ঠানে হাসিনার প্রধান অতিথি হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে বাতিল। -একটি অনুষ্ঠানে এতোগুলো শীর্ষ সেনা অফিসারদেরকে এক সঙ্গে জড়ো করার পেছনে উদ্দেশ্য অন্যকিছু। -ঘটনার ৩ দিন আগে কিছু র্যা ব কর্মকর্তাকে বদলি করে বিডিআর-এ নিয়ে আসাটা রহস্যজনক। র্যা বের কুকর্ম কারোই অজানা নয়। -বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হলে সেনাবাহিনীকে তলব না করে বরং সময়ক্ষেপণ। -জেনারেল মঈনের ভাষ্য, পাল্টা আক্রমণ করতে চাইলে সরকার তাকে অনুমতি দেয়নি। -বিদ্রোহ দমনের বদলে সময় পার হতে দিয়ে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যাকাণ্ড ঘটতে দেওয়ার পরিস্থিতি বিদ্রোহীদের অনুকূলে রাখা। -বিডিআর মিউটনি এতোই তীব্র ছিলো, যাকে অন্যান্য সেনাবিদ্রোহের মতোই গুরুত্ব দেয়া উচিত কিন্তু প্রতিবারাই হাসিনার সরকার বিষয়টিকে নানান উত্তেজনা ছড়িয়ে হালকা করে। -২৫ ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপ ক্রিকেট কেন? কারণ, দৃষ্টি অন্যদিকে ধাবিত করতে হবে, অন্যথায় ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাধান্য পাবে। শোক দিবসকে আনন্দ দিবসে রূপান্তরের মাধ্যমে, হাসিনার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে।
২
১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি দিবস, ১ মাস যাবৎ মুজিব হত্যা দিবসের সেকি দৃশ্য! কিন্তু এতোগুলো সেরা সেনা অফিসার হত্যার দিনটিকে শোকের বদলে আনন্দের দিন হিসেবে পালনের প্রমাণ এশিয়া কাপ। এই মাসেই ২১ ফেব্রুয়ারি, অথচ ২৫ ফেব্রুয়ারির শহীদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান দেখায়নি রাষ্ট্র?
নিহতদের পরিবারের দাবি, দিনটিকে সেনা হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক কিন্তু সেটা করবেই না কারণ করতে গেলেই ধরা খাবে। ৩টি তদন্ত কমিটি হলেও ১টি তদন্তও প্রকাশ হয়নি। কেন হয়নি, সরকার সেটা ইচ্ছা করেই করেনি। মঈন আহমেদের ভাষ্য, বিদ্রোহের দিন যে কোন সরকার তার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে একা সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে যমুনায় হাসিনার সঙ্গে বিদ্রোহীদের বৈঠকের সময়ে চা-বিস্কিট দিয়ে আপ্যায়ন। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সক্রিয় করার বদলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় নাটক আর হাসিনার তরফ থেকে খুনিদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। সারা দিন্তরাত প্রচণ্ড গুলিগালাজ সত্ত্বেও ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধির বদলে সাহারা খাতুনদের আলোচনা, অস্ত্র সমর্পণ, আত্মসমর্পণ, যুদ্ধবিরতির নামে সময়ক্ষেপণ।
হঠাৎ তিন ঘণ্টা লোডশেডিং-এর কারণ খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। খুনি তৌহিদের মুখে জয়বাংলা এবং শেখ মুজিবের প্রশংসার ভিডিওটি ইউটিউবে। বিডিআর-এর কোন দাবিদাওয়া থাকলে কিংবা কোনঠাসা রাখার অভিযোগ থাকলে, কর্মবিরতিসহ নানান কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারতো। বেতন, ভাতার দাবিদাওয়ার জন্য কেউ এই মাপের বিদ্রোহ করে কিংবা এতোগুলো ব্রিলিয়ান্ট অফিসারদেরকে টার্গেট করে খুন করে, বিশ্বাসযোগ্য?
নিজের দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বদলে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় দিল্লির সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রণব মুখার্জীর হুমকিও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, “হাসিনার সরকারকে কেউ অস্থির করতে চাইলে, দিল্লি সেটা সহ্য করবে না বরং ভেতরে ঢুকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।” বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও প্রণব মুখার্জীর এই স্পর্ধা, ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রমাণ। বাসাভাড়া আর বেশি বেতনের জন্য ক্ষোভ থাকলে, মিউটিনির প্রস'তি কেন?
১ম ঘণ্টায় অস্ত্রাগার থেকে ব্যাপক লুটপাট। সকাল থেকে যেভাবে এগোচ্ছিলো, দরবারহলে সিপাহীদের অস্ত্র ব্যবহার, মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়া টার্গেট হত্যা, দফায় দফায় হত্যা করে পুতে ফেলা, একেকটি গণকবরে কয়েকজন অফিসারকে মাটিচাপা, অফিসারদের শরীরে যে পরিমাণ আঘাত... ১ দিন অথবা ১ সপ্তাহের পরিকল্পনা হতে পারে না।
অস্ত্রাগারে ব্যাপক অস্ত্র সহজলভ্য করা থেকে দরবারহলে এতোগুলো সেনা অফিসারদের একসঙ্গে করার মধ্যে বিদ্রোহের পূর্বপরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। পরিস্থিতি বিবেচনা ছাড়াই খুনিদেরকে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বহু সেনা অফিসার সাক্ষি দিতে চাইলে বরং তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ড শেষে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের জন্য অর্থ অনুদান থেকে ফ্লাট বরাদ্দের ঘোষণা, যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। পরবর্তীতে, খালেদাকে ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর, সেখানে ফ্লাট বানিয়ে এইসব পরিবারকে বিতরণের মানসিকতার সঙ্গে একটি গোষ্ঠির বিরুদ্ধে প্রতিশোধের বিষয়টিও স্পষ্ট।
২৫ ফেব্রুয়ারির মতো ভয়াবহ দিবসে এশিয়া কাপের উত্তেজনা তাৎপর্যপূর্ণ। একবার ভাবুন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৫ আগস্ট এবং ১৪ ডিসেম্বরে আনন্দ-স্ফূর্তি করছে বাংলাদেশিরা। প্রায় প্রত্যেকদিনই চীন মৈত্রি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান, এমনকি মামাবাড়ির আবদারের মতো অপ্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান সত্ত্বেও এইরকম দিনে সরকারের ভয়ানক নিরবতা, হত্যাকাণ্ডের পেছনের মোটিভের প্রমাণ করে। ২৪ তারিখে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের গল্প শোনানো, ২৫ তারিখে বরিশালে রেললাইন বানানোর গল্প... এমনদিনেও কি এসইব বলা যায়? তাহলে বিডিআর হত্যাকাণ্ড কোথায় গেলো? এর মানে হলো, হাসিনার নিয়ন্ত্রণ হাসিনার হাতে নেই।
জুরিসপ্রডেন্স বলে, অপরাধীরা অপরাধ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নানান কাহিনী তৈরি করে, কিন্তু ওইসব কাহিনীর মধ্যেই অপরাধের সূত্র লুকিয়ে থাকে। এইরকম একটি দিবসে, বরিশালে হাসিনার রেললাইন বনাম দিনটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে? আমরা সব বোকার দল, এখন পর্যন্ত বুঝছি না, তলে তলে হচ্ছেটা কি! হাসিনা একজন, আইওয়াশ।
৩
অবৈধ সরকার সব সময় কিছু লুকাতে চায় কিন্তু কেন? আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে বিচারের নামে যে হাস্যস্কর নাটক, প্রমাণ হয়েছে ষড়যন্ত্র। মহাপরিকল্পনাগুলো নিম্নরূপ:-
বিডিআর ঘটনার ১ বছর আগে, মঈন ইউ আহমদকে প্রণব মুখার্জীর দাওয়াত। তারপরেই ১/১১এর সরকারকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা হাসিনার। মঈন ইউ আহমদের অনুষ্ঠানে সদ্য কারামুক্ত হাসিনার অংশগ্রহণ। তখন থেকেই ‘র’ এর অনুপ্রবেশ শুরু। দ্রুতই এরা সেনাবাহিনীর ভেতরে মিশে যেতে শুরু করে। আইনশৃংখলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দখল করে ফেলে। ক্ষমতায় যাওয়ার পরেও ১/১১এর কুশিলবদের সঙ্গে হাসিনার সরকারি এবং বেসরকারি সম্পর্ক। ২৫ ফেব্রুয়ারিতে হাসিনার পাশে প্রণবের দোয়াপ্রাপ্ত মঈন।
২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী বাংলাদেশকে বিডিআর মুক্ত করে, বিজিবির পোশাক পড়ানো হলো। অর্থাৎ সীমান্ত থেকে সেনাবাহিনী, সবকিছুই অন্যদের দখলে। বিডিআর থাকাকালে সীমান্ত রক্ষিত ছিলো, এখন আছে বললে ভুল হবে। অতীতে গুলি ছুড়তো বিডিআর, এখন বাংলাদেশিদেরকে হত্যা করলে সেটাকে হালাল করার চেষ্টা করে বিজিবি। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, বিএসএফ দেখলে ভয়ে দৌড় মারে বিজিবি। বাংলাদেশের ভেতরে কয়েকমাইল জুড়ে বিএসএফ-এর রাজত্ব। বিজিবি-এর কোন ক্ষমতাই নেই ‘না’ বলার। এসবই সম্ভব হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারির মাধ্যমে।
বাতাস, নদী, গাছ... পারলে সবাইকেই ফাঁসি দেয় কিন্তু আজব্দি মঈনু-ফকরুদের বিচারের কথা মুখেও আনলো না হাসিনা। কেন আনলো না? বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে কেউ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে না। ‘র’এর পরিকল্পনা সফল হতে দিয়ে এমন এক সীমান্ত রক্ষিবাহিনীর সৃষ্টি হলো, যাদের পোশাক এবং মেরুদণ্ড দুটোই ‘র’এর নিয়ন্ত্রণে।
৪
বিডিআর হত্যাকাণ্ড = সীমানে-র নিয়ন্ত্রণ হারানো।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড = ভারতের সঙ্গে গ্যাস ষড়যন্ত্রের ভয়াবহ তথ্য গুম।
ছিটমহল বিনিময় = মোদির রাজনৈতিক আইওয়াশ।
তিস্তার পানি বন্ধ করা = আগামীর বিশাল টোপ, এমনকি দুই বাংলার মধ্যে পাসপোর্ট অপ্রয়োজনীয় হতে পারে।
৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘোষণা = ভারতীয় বিলিয়নিয়ারদের হাতে গোটা অর্থনীতি তুলে দেয়ার মহাপরিকল্পনা।
পুঁজিবাজারে অস্থিরতা = দুর্নীতিবাজ ডোনারদের জন্য আইপিও-র ব্যবস'া করে হাজার হাজার কোটি টাকা মার্কেট থেকে তুলে নেয়ার অভিনব রাস্তা।
গার্মেন্টস কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দেয়া = গণভবনের সুইস ব্যাংকে ডোনার ব্যবসায়ীদেরকে স্বসি-তে রাখা।
ইনুদের মুখে দুই দেশের সীমান্ত না থাকার প্রস্তাব = বিজেপির দাবি, দুই বাংলার মধ্যে পাসপোর্টের প্রয়োজন শেষ।
উন্নতির আগ্রাসন = চীন, রাশিয়ার মতো ভেটো শক্তিগুলোকে অর্থনীতিতে অবাধ প্রভাব বিস্তার করতে দিয়ে, ব্রিটিশের মতো দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা।
হলমার্ক, সোহেল রানাদের মতো অপরাধীদের বিচার না করা = গণভবনের সুইস ব্যাংক আরো সম্বৃদ্ধ করা। অন্যথায়, উন্নতির নামে রাষ্ট্রের সকল বিভাগে, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।
আমেরিকা আর ইউনুসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা = বাংলাদেশে চীনের রেডিক্যাল কম্যুনিইজম প্রতিষ্ঠা।
ট্রাইবুন্যাল = দল নিষিদ্ধ করতে পারবে না বিধায় ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে বিরোধিদল বিলুপ্তির উত্তম ব্যবস'া।
গণভবনের ব্যবহার = বিলুপ্ত জমিদারদের প্রত্যাবর্তন।
ইত্যাদি, ইত্যাদি। যে খবরটি কোন পত্রিকাতেই গুরুত্ব পায়নি, পাবেও না, কারণ গণমাধ্যমের কলম এবং বাকযন্ত্র দুটোই গণভবনের কাছে বর্গা। ২৪ তারিখের ভয়ানক খবর, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক না কেনার বিলে ওবামার স্বাক্ষর।
কংগ্রেস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শুনানি শেষে, ওয়াশিংটন বলছে, বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীরাই ৯০ শতাংশ পোষাক তৈরি করে। অথচ ট্রেড ইউনিয়নের সুবিধা মাত্র ৪ শতাংশ নারীর। অর্থাৎ সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্রেড ইউনিয়নগুলো যে লাউ সেই কদু। ফলে শ্রমিক নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সামপ্রতিককালে সচেতন গার্মেন্টস কর্মীরা, ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষে মতামত দেয়ামাত্রই, চাকরি থেকে বরখাস্ত করছে মালিকেরা। ঘুঘু তুমি আর কতোদিন ধান খাবে? এবার খড়গ হস্ত ওয়াশিংটন নাক কেটে দিলো বাংলাদেশের। যে বিলটিতে ওবামা সই করলেন, মার্কিন মিডিয়ায় এইভাবে এলো, “বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীদের হাতে তৈরি পোশাক কিনবে না আমেরিকা।” এবার বলুন, বাংলাদেশের মিডিয়া কার দালাল? আমজনতার উচিত, মিডিয়া বর্জনের পদক্ষেপ নেয়া।
৬
বঙ্গবীর, তোমরা কি বঙ্গছাগল হয়ে গেলে!
৪ খলিফার এক খলিফা- রব, তোমাদের প্যান্ট-শার্ট ছেঁড়া কেন?
নূরে আলম সিদ্দিকিকে প্রশ্ন- ব্যক্তিপূঁজা করেই কি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলে? তাই যদি না হবে, রাষ্ট্রের বদলে দেশ কেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক এক মহাজমিদারবাড়ি!
খালেদাকে উপদেশ, আপনার লেজটা দ্রুত ছেটে ফেলুন। তাহলে লেজ ধরে আর টানাটানি করতে পারবে না। ফলে, জাতি প্রতিদিনকার ক্ষয়রোগ থেকে রক্ষা পাবে।