১৯৭০ সালের বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের পর বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র সীমায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ জেগে ওঠে। উঠছে। ক্রমেই দ্বীপটির আয়তন বৃদ্ধিও পাচ্ছে। তখন অনেকে আশা করেছিলেন, দ্বীপটি একসময় বিশালাকার ধারণ করবে এবংবাংলাদেশের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে ওঠবে। বাস্তবে দেখাও গিয়েছিলো সেটা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হাঁড়ি ভাঙ্গা নদীর মোহনায় একেবারে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার অভ্যন্তরে জেগে ওঠা এ দ্বীপটির নাম দক্ষিণ তালপট্টি। দক্ষিণ তালপট্টি দ্বিপ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার অন্তর্গত একটি উপকূলবর্তী দ্বীপ। বাংলাদেশিদের কাছে দক্ষিণ তালপট্টি ও ভারতীয়দের কাছে নিউ মুর দ্বীপ হিসেবে পরিচিত।
১৯৭৪ সালে একটি আমেরিকান স্যাটেলাইটে ২৫০০ বর্গমিটার আয়তনের একটা দ্বীপের অস্তিত্ব ধরা পড়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায়। রিমোট সেন্সিং সার্ভে চালিয়ে দেখা যায়,দ্বীপটির আয়তন ক্রমেই বাড়ছে এবং একপর্যায়ে এরআয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটারে দাঁড়ায়। তারপর থেকেই বাংলাদেশ এবং ভারত, উভয় দেশের সরকারই দ্বীপটিতে তাদের মালিকানাদাবি করে থাকে। ভারত জোর করে দ্বীপটির মালিকানা দাবি করায়১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে যৌথ আলোচনার আহ্বান জানানো হয়। ওই আহ্বান ব্যর্থ হলে ১৯৭৯ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হয়। কিন্তু ভারত মনের গভীরেলুকিয়ে ছিল লোভ , ১৯৮০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী) রাজ্য সভায় ঘোষণা করেন,দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভারতের। এর জবাবে বাংলাদেশেরতৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে বলেন,দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ বাংলাদেশের। পরে ১৯৮০ সালে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয় :স্টাডি ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়।
১৭ জানুয়ারি, ১৯৮১ইং “হিজবুল বাহার” চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে সিংগাপুর-ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এসএসসি থেকে স্নাকোত্তরপর্যন্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে তিনবার সমুদ্র ভ্রমনে গিয়েছিলেন।১৯৮১ সালের এই ভ্রমণই ছিল শেষ ভ্রমণ । এই বহরে ছিল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েরছাত্র-ছাত্রী, সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদও ছিলেন। সন্ধ্যা ৭ টাজাহাজের ৩য় তলায় সবাই জমায়েত হয়েছেন। সেখানেই রাষ্ট্রপতি জিয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরসাক্ষাৎ দেবেন। মাইক্রোফোন হাতেনিয়ে চিরাচরিত কালো গ্লাসের ভিতর দিয়ে সবাইকে পরক করে বলতে শুরু করলেন সন্মোহনি কণ্ঠে …
“আমি তোমাদের কাছে এখন যে কথা বলবো তাআমাদের জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক তাগিদ। এই তাগিদকে স্মরণীয় করার জন্য আমি একটা পরিবেশ খুঁজছিলাম। আমরা এখন বঙ্গপসাগরের মাঝে। এই উপসাগরেই রয়েছে দশ কোটি মানুষেরউদরপূর্তির প্রয়োজনেরও অতিরিক্ত আহার্য ও মূল ভূমি ভেঙ্গে আসা বিপুল পলিমাটিরবিশাল দ্বীপদেশ যা আগামী দু-তিন প্রজন্মান্তরে মধ্যেই ভেসে উঠবে। যা বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন বিন্দুসংযোজনের তাগিদ দেবে। মনে রেখো, আমাদেরবর্তমান দারিদ্র, ক্ষুধা ওঅসহায়তা আমাদের উদ্যমহীনতারই আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তিমাত্র। এর জন্য অন্যের চেয়ে আমরাই দায়ী বেশী।“
“আমাদের ভিটা ভাঙা পলি যেখানেই জমুক তা তালপট্টি কিংবা নিঝুমদ্বীপ এই মাটি আমাদের। দশ কোটি মানুষ সাহসী হলে আমাদের মাটি ও সমুদ্র-তরঙ্গে কোনষড়যন্তকারী নিশান উড়িয়ে পাড়ি জমাতে জাহাজ ভাসাবে না।““মনে রেখো, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত চলছে। আমরা দশ কোটি মানুষ একতাবদ্ধ নই বলেশত্রুরা, পররাজ্য লোলুপ রাক্ষসেরা আমাদের পর্বপুরুষদের এই স্বাধীন জলাধিকারে আনাগোনা শুরু করেছে। এদেশেই জন্ম নিয়েছেন ঈশা খা, তীতুমীর,হাজী শরিয়তউল্ল্যাদেরমত সাহসী সন্তান। সন্দেহ নেই আমাদের সেসব পর্বপুরুষগণ ছিলেন যথার্থই শৌর্যবীর্যের অধিকারী। তখন আমাদের সেসব পর্বপুরুষ ছিলেন সংখ্যায় নগণ্য। কিন্তু আমরা সারাটা উপমহাদেশ আর অসমুদ্রহিমাচল শাসন করেছি। বলো, করিনি কি?”
“আমি তোমাদের কাছে আরও একটি গুরুত্বপর্ণতথ্য ব্যক্ত করতে চাই-মনোযোগ দিয়ে শোনো” “আমাদের রয়েছে দুনিয়ার সব থেকে উর্বরা জমি। একটু পরিশ্রমেই ফসলে ঘর ভরে যেতে পারে। কিন্তু অর্থের অভাবে কোনো বৈজ্ঞানিক চাষেরউদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। কে আমাদের বিনা স্বার্থে এই উদ্যোগে সহায়তা করবে? কেউ করবে না। অথচ যে সম্পদের বিনিময়ে অর্থের প্রাচুর্য ঘটে তা আমাদের দেশেরভেতরেই জমা আছে। আমরা তা তুলতে পারছিনা।”
“কি সেই সম্পদ যা আমরা তুলতে পারছি না? তোমরা কি জানো সেই লুক্কায়িত সাতরাজার ধন কি? কোথায় সেগুলো আছে? সেই সাতরাজার ধন হল তেল, গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর আরও অনেক কিছু।“ হাতে কলমে বুঝানোর জন্য রাষ্ট্রপতি তাঁরপাশে সিকিউরিটি অফিসার কর্নেল মাহাফুজের দিকে তাকালেন কর্নেলমাহফুজ দ্রুত তাঁর হাতে থাকা ব্যাগ খুলে একটা বোতলবের করে রাষ্ট্রপতির হাতে দিলেন। রাষ্ট্রপতি বোতলটা হাতে নিয়ে একটা ঝাঁকুনি দিলেন। বোতলে ফেনায়িত হলুদ তরল পদার্থ ঝলকাচ্ছে।
“এই বোতলেই আছে বাংলাদেশের পেটের ভেতরে লুক্কায়িত সাতরাজার ধন, পেট্রোল। বিশুদ্ধ পেট্রোল। যা পুড়িয়ে বিমান, গাড়ি, অসংখ্য ভারীযানবাহন, সমুদ্রে জাহাজ অনায়াসে চলাচল করতে পারবে। শক্তির ধাত্রী এই তেল। আল্লাহ্র সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তোমরা ভালো করে দেখে রেখো ছেলেমেয়েরা, আমার হাতের মুঠোয় রয়েছে সেই মহার্ঘ নিয়ামত যা বাংলাদেশেরসীমানার ভেতরে, মাটির উদরে তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। যা ক্রমাগত বাঁধার ফলে আমি শত চেষ্টাসত্ত্বেও তোমাদের ভাগ্য ফেরাতে তুলে আনতে পারছিনা।“
, “আমার জীবৎকালে সম্ভবপর না হলে তোমরা, আমার ছেলেমেয়েরা, এই তেল তুলবে।“
এক ঐতিহাসিক সফর শেষে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২২ শে জানুয়ারি ১৯৮১ সালে “হিজবুল বাহার” চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরে আসে ।
কিন্তু ১৯৮১ সালের ১১ মে ভারত সরকার তাদের নৌবাহিনীর “আইএসএন সন্ধাক” নামেরএকটি জাহাজ পাঠিয়ে দ্বীপটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করে। ১৩ মে এই দখলদারদের প্রতিরোধকরতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানরে নির্দেশে পাল্টা নৌবাহিনী পাঠানো হয়। রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীখানের (তারেক রহমানের শ্বশুর) নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ভারত সেখান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহারকরে নেয়। ।
প্রেসিডেন্ট জিয়া তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিষ্কারভাবে প্রমান করেন এই দ্বীপটি বাংলাদেশের এবং তা ভারতকে জানিয়ে দেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১২ মে বিদেশ সফরেও চলে যান। পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে ২৩ মে তিনি বিএনপি’র জাতীয় কমিটির বর্ধিত সভায় বলেছিলেন, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ভারতকে জানানোর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে খুন হন প্রেসিডেন্ট জিয়া।
যার ফলে দক্ষিন তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা আজ পর্যন্তএদেশের হাতে আসেনি।তৎকালীন দেশি বেদেশি অনেক পত্রিকায় আসে , প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই মর্মান্তিক মির্তুতে ভারতের হাত ছিল এবং এই সুমুদ্রসীমা এবং “তালপট্টি দ্বীপ” এইরকম এক খবর দেয় বিখ্যাত পত্রিকা “http://bryantimes.com/ “ ৩০শে মে ১৯৮১ সালের সংখ্যয় । (http://news.google.com/newspapers…)