somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসতর্কভাবে নিজ সন্তানকে অভিশাপ দিলে কি হতে পারে?

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সন্তারে জন্যে মা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। মায়ের কাছে তার কোলের সন্তানের থেকে প্রিয় কিছু আর নাই। নিজের জীবনকে ত্যাগ করে হলেও মা সব সময় চান তার সন্তান সুস্থ, সবল ও নিরাপদ থাকুক।
দরিদ্র ঘরের মাকে দেখা যায়, নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন অবলীলায়। সন্তানের অসুখে রাত জেগে তার শিয়রে বসে মাথায় পানি দিচ্ছেন। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা যুগে যুগে অনেক রূপকথা ও প্রবাদের জন্ম দিয়েছে, দিয়েই চলেছে।

এই সন্তানকেই তিনি প্রায় একটি বছর অসহ্য কষ্টে গর্ভধারণ করেছেন। এরপরে সন্তান যখন পৃথিবীর আলোতে চোখ মেলে তাকিয়েছে, তখন তিনি সব কষ্ট ভুলে গেছেন। তাকে লালন পালন করেছেন প্রতিটি ঘাম, প্রতি ফোটা অশ্রুবিন্দু বিসর্জন দিয়ে।
কিন্তু শৈশবের বালখিল্যতা কিংবা কৈশরের দুরন্তপনায় অনেক সময়ই সেই মা সন্তানের অধৈর্য হয়ে সন্তানের প্রতি অভিশাপ দিয়ে বসেন। আমাদের গ্রাম-অঞ্চলে প্রায়েই দেখা যায়, মা তার দুরন্ত ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘তোর মুখ আমি যেনো আর না দেখি’, ‘তোর কেনো মরণ হয় না’ ইত্যাদি ধরনের নানা অভিশাপ বাক্য। অথচ তিনি নিজেও হয়তো কখনো সচেতনভাবে তেমনটি কামনা করেন না। অনেক সময় দেখা যায়, সত্যি যদি মায়ের অভিশাপের পরে সন্তান তেমন কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন আর মায়ের অনুশোচনার শেষ থাকে না।
প্রতিটি ছোট থেকে বড় বিষয়ের মতো এ বিষয়টিকেও ইসলাম এড়িয়ে যায় নি। এ ব্যাপারেও ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়। ইসলাম কখনো কারো বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়া বা বদ দোয়া করাকে সমর্থন করে না। আপন সন্তান তো বটেই সামান্য জীবজন্তু বা পোকা-মাকড়, এমনকি জড় পদার্থকে অভিশাপ দেয়াও সমর্থন করে না।
হাদিসে আছে, জাবের বিন আব্দুল্লা [রা] বলেন, ‘বাতনে বুওয়াতের সফরে রাসুল [স] মাজদি ইবন ‘আমর জুহানিকে খুঁজছিলেন। উকবা আনসারি তাঁর উটের পাশ দিয়ে চক্কর দিয়ে তাকে থামায়। তারপর তার পিঠে উঠে আবার তাকে চলতে নির্দেশ দেয়। হঠাৎ উটটি একেবারে নিশ্চয় হয়ে গেলো। তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, তোর ওপর আল্লাহর অভিশাপ। রাসুল [স] একথা শুনে বললেন, কে নিজের উটকে অভিশাপ দিলো ? তিনি বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসুল। রাসুল [স] বললেন, ‘তুমি এই উটের পিঠ থেকে নামো। তুমি আমাদের কোনো অভিশপ্তের সঙ্গী করো না। তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, তোমাদের সন্তান-সন্তুতির এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করো না।’ (মুসলিম)
হাদিস বিশারদগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, হতে পারে যে সময় বদ দোয়া করা হয়েছে, তা দিনের এমন সময়ে কেো হয়েছে, যখন খারাপ বা ভালো সব দোয়াই কবুল করা হয়। (মিরয়াতুল মাফাতিহ)
নি:সন্দেহে বলা যায়, এই হাদিসটি রাগের মাথায় মানুষের তার পরিবার ও সম্পদের বিরুদ্ধে দোয়া করার নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে। তাছাড়া নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে দোয়া করার অর্থ তো নিজেই নিজের বিরুদ্ধে দোয়া করা। প্রকারন্তরে নিজেকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫)
অতএব আমাদের মায়েদের ভেবে রাখতে হবে, যদি তারা তাদের সন্তানদের উদ্দেশ্যে কোনো অভিশাপ দিয়েই ফেলে, হোক সেটা রাগের বশেই, আর সেই বদ দোয়া বা অভিশাপটি এমন মুহূর্তে হয়ে গেলো, যখন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার প্রতিটি দোয়াই কবুল করে নেন, তখন ব্যাপারটা কেমন হবে ? যদি সত্যিই সন্তান ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কি মা তখন সহ্য করতে পারবে। তাই প্রতিটি মায়ের উচিত, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সংযম ও সতর্কতা অবলম্বন করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যোগ্য কে???

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)




(সকল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতান্ত্রিকভাবে লীগকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা যাবে আজীবন।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩



লীগ সদ্য বিতাড়িত কিন্তু তাদের সাংগঠিক কাঠামো এখনো পূর্বের মতই শক্তিশালী শুধু ছোবল দিতে পারছে না, স্থানীয় নেতারা বিএনপির নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করছে তবে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেললেন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১


মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী লম্বা রেইসের ঘোড়া মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া হতে বেডরুমে যার নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে তিনি খুব দ্রুত শিখে গেলেন কিভাবে মানুষের মাথা ঠান্ডা করতে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×