কিছুদিন আগে আম্মু বলছিল বাংলাদেশে তাজমহলের রেপ্লিকা দেখতে যেতে তাদের সাথে। নকল যেকোন কিছুর উপর আমার চরম অনীহা। আসলটা দেখার ইচ্ছা আছে, কোনদিন সময়/সুযোগ করে উঠতে পারলে দেখতে যাব ইনশাল্লাহ। তো আমি না যেয়ে চিন্তা করলাম বেশ অনেকদিন তো হয়ে গেল জিনিসটা ওপেন হয়েছে, নেটে একটু সার্চ দিয়ে দেখি এর সম্পর্কে মানুষের মতামত কি। অনেক অনেক তথ্য পেলাম, কিন্তু গ্লোবাল ভয়েস এর অপর্না রায়ের এক রিভিউতেই আসলে সব পরিস্কার বুঝা যায়।
----------------------------------------------------------------------------------
"কিছুই না দেখবার মত। শুভ্র তাজমহলের সোকলড রেপ্লিকা বানিয়েছে সাদার মাঝে নানা রঙ্গের টাইলস দিয়ে। সংবাদপত্রে কত কিছুই না পড়লাম। খরচ ৪০০ কোটি টাকা, ইতালি থেকে আনা মুল্যবান পাথর ও টাইলস্, বেলজিয়াম থেকে আনা ১৭২ টি হীরক খন্ড, গম্বুজের উপরে চারমন ওজনের ব্রোঞ্জ, কোথায় এসব??? ৪০০ কোটি টাকা কি পান্তা ভাত নাকি! নরমাল ইট-সিমেন্টের একটা স্ট্রাকচারের উপরে দেশী টাইলস্ (আমার বন্ধু বাড়ির কাজকর্ম ভাল বোঝে, তার মতে টাইলস গুলো দেশী) বসানো। এমন কি টাইলসের কাটাও ঠিক মত হয় নাই, আনাড়ি হাতের কাজ। এখনও ফিনিশিং সম্পূর্ণ হয় নাই। ইতালির পাথর যদি পরে বসাবার ইচ্ছাও থাকে তবে কোথায় বসাবে? দর্শনার্থিরা সবাই বিরক্ত এবং নিজেদের প্রতারিত ভাবছেন…প্রায় ১০ মিনিট দেখবার পরেই বুঝতে পারলাম আমাদের জন্য ভেতরে আর কিছুই নেই। বেরিয়ে হাটা ধরলাম। পথে অনান্য দর্শনার্থিদের সাথে কথা হল, সবার একই উত্তর “ভূয়া”
পাগল হিন্দি সিনেমা নকল করতে করতে, মাথা আওলাইয়া গেছে। দেখছে। ভাল আয় রোজগার। এখন তাজ মহল নির্মান করছে। পাঁজি যে টাকা খরচ করেচে, সেই টাকা যদি দেশের হত-দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে কাজে লাগাত তাহলে হত গরীবের উপকার ।
অবাক লাগল এই যে দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকা গুলো কিভাবে কোন রকম খোজ খবর ছাড়াই ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ, ১৭২ টি হীরক খন্ড, ইতালির টাইলস/পাথরের ভূয়া খবর ছাপালেন। ৪০০ কোটি টাকা কি কম? এত টাকার বিনিয়োগে, একটি বিখ্যাত স্থাপনার রেপ্লিকা তৈরি ব্যাপারে তারা কি সরোজমিনে একবারও ঘুরে দেখে আসবার সময় করতে পারলেননা। ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জের, সোনারগাঁয়ের পেরাবো গ্রামে যেতে বড়জোর এক দেড় ঘন্টাই লাগত!! এই দেশে কি খবরের অভাব আছে? নাকি টাকা দিলেই খবর ছাপানো যায়। খুব বেশী হলে এই স্থাপনাতে ৩/৪ কোটি টাকার মত খরচ হয়েছে।"
----------------------------------------------------------------------------------
আম্মু ও অন্যরা বাসায় আসার পর এইসব কিছু তাদের না বলে তাদের মতামত জানার চেষ্টা করলাম। ছোট ভাইবোন এককথায় ভুয়া বলে চলে গেল যার যার পিসিতে-->ফেসবুকে (হয়ত এই ব্যাপার নিয়া কিছুক্ষন গ্যাজাবে বন্ধুদের সাথে)। কিন্তু আম্মু ভালো/খারাপ এইসবের ধারকাছ দিয়েও না যেয়ে হয় দুষ্টুমি নয়ত ইমোশন থেকে বললেন, "দেখছিস কি বানিয়েছে, তোর আব্বুর কি কখনও এমন কিছু করার চিন্তা আসে?" মেয়েমানুষ সবকিছুতেই হয়ত ইমোশন/রোমান্টিকতা খোজে। আব্বু ব্যাবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি সমাজকর্মীও। কিছুক্ষন চিন্তা করে আব্বুকে নিয়ে আসলে গর্ববোধ করলাম, কারন আসলেই তিনি মানুষের উপকারে আসে না এমন ফাউ কাজে সময়/টাকা কোনটাই নষ্ট করবেন না।
কিন্তু আম্মুকে তা বললাম না। আম্মুকে বললাম, আব্বু করে না তো কি হইছে? আমি তো আছি, বল তোমার জন্য কোনটা বানিয়ে দেব---পিরামিড না আইফেল টাওয়ারের রেপ্লিকা?
হে হে, কইতে কি?