মনির হাসান------আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা ভাল, কিন্তু তা আপনি জানার জন্য ব্যবহার না করে অপপ্রচার করার জন্য এবং পরিচিতি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করছেন দেখে খারাপ লাগছে। তারপরও আপনি যে অপ্রাসংগিক কথাবার্তা না বলে আলোচনার দরজা উন্মুক্ত করে রেখেছেন তা দেখে ভাল লাগছে। আমি ধরে নিচ্ছি নিজের ভুল বুঝতে পারলে তা সংশোধনের মনমানসিকতা আপনার আছে, এই ধারনা থেকেই উত্তর দেয়ার প্রয়াস পেয়েছি, নইলে দিতাম না।
মনির হাসানের পোষ্ট-----> তাহলে ইসলামের "প্রানীর ছবি আঁকা হারাম"- নির্দেশটি কতটা যৌক্তিক?
আপনার মুল বক্তব্য হল, ইসলামে যখন কোন প্রানীর ছবি আকা হারাম, তখন কোরআন কেন আরবী ভাষায় লিখা যা আবির্ভুত হয়েছে এই ধরনের ছবি থেকেই, তাই তো?
***"মনির হাসান বলেছেন : "বিবর্তন বা সময়ের আবর্তে সরলীকরণ করে কি হরফ গুলোর মুসলমানী হয়ে গ্যালো নাকি ?
... নাকি অযু করা হয়ে গ্যালো হরফ গুলোর ?"
উত্তর ১ (ধরে নিলাম ইসলামে প্রানীর ছবি আকা হারাম)
কোরআন যখন লিখা হয়েছে তারো বেশ অনেকদিন আগেই আরবী ভাষা তার পুর্নাংগ রুপ পেয়েছে(তার প্রমান কোরআন শরিফ নিজেই, যা অপরিবর্তত বলে মেনে নিয়েছেন অন্য ধর্মাবলম্বনকারীরাও)। এমন যদি হত যে আমরা আজও কুকুর, বিড়ালের ছবি একে কমিউনিকেট করার চেষ্টা করছি তাহলে না হয় আপনার প্রশ্নে যুক্তি থাকত এবং আমরাও প্রতিবাদ জানাতাম আপনার সাথে মিলে। যেখানে আপনি কোন প্রানীর ছবি হিসেবে কোরআনে একটি হরফও দেখছেন না তখন আপনার এই প্রশ্ন অবান্তর মনে হয়।
***মনির হোসেন আরো জানতে চেয়েছেন : সর্বজ্ঞাত এবং সর্বজ্ঞাতর প্রেরীত, তারা উভয়'ই কি হরফ বিবর্তনের ইতিহাস'টি জানতো না ... ? ? যদি জানত, তাহলে কি এমন উলটা পালটা নির্দেশ দিত যে ... প্রানীর ছবি আঁকা হারাম ... ? ? ?"
অবশ্যই জানতেন, আর জানতেন বলেই যতদিন ভাষা পুর্নাংগ রুপ পায়নি ততদিন প্রানীর ছবি আকা নিষিদ্ধ করা হয়নি আর মোহাম্মদ(সঃ) ও কোরআন আবির্ভু্ত হয়নি। অথচ আল্লাহ যদি চাইতেন নবী আদম(আঃ) থেকে ঈসা(আঃ) পর্যন্ত যত নবী এসেছেন তারাও কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারতেন। তারা কেউই মানুষকে বলেননি তোমরা প্রানীর ছবি আকবা না।
আপনার উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ইসলাম ঘাটাঘাটি করতে হয় না। সাধারন লজিকই যথেষ্ট।
যদি আপনি আপনার উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আসুন এবার আমরা দেখি ইসলাম এ ছবি আকার নিষেধাগ্গার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে এবং কেন বলা হয়েছে।(যদিও এ ব্যাপারে আপনি একবারও জানতে চাননি এবং নিজে জানার চেষ্টাও করেননি)
১। স্বয়ং কোরআন শরীফ এ ছবি আকা একটিবারের জন্যও নিষেধ করা হয়নি। শুধু হযরত মুহাম্মদ(সঃ) কে স্মরন করিয়ে দেয়া হয়েছিলো তার বা অন্য নবী রসুলের ছবি একে বা মুর্তি বানিয়ে যাতে মানুষ পুজো না করে।
২। ছবি আকার উপর বিভিন্ন সহি হাদীসে যা পাওয়া গেছে তা হল।
(পুর্ব ব্যাখ্যা)
# ছবি আকিয়েদের সবচে ভয়ংকর শাস্তি প্রদান করা হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন না তারা তাদের সৃষ্টিতে আত্বা/রুহ প্রদান করতে পারে। এবং তারা অবশ্যই রুহ প্রদান করতে পারবে না।
# কোন প্রানীর(মানুষ,পশু-পাখি,মাছ) ছবি আকা যাবে না এই কথা বলা হয়েছে, আর কোনও কিছুর ছবি আকার উপর কোন নিষেধাগ্গা নেই।
# ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ছবি ধারন করার উপরও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। (যদিও কোন ধরনের ছবি ঘরের দেয়ালে টানিয়ে তার সামনে নামাজ পড়া যাবে না এটি সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা আছে)
বিজ্ঞান ও সভ্যতার যত অগ্রগতি হচ্ছে ততই প্রমানিত হচ্ছে ইসলাম কতটা আধুনিক, কোরআন মহাকালের ও সার্বজনীন। কোরআনের ৮০% বৈজ্ঞানিক আয়াতগুলো বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে ১০০% সত্য বলে প্রমানিত হয়েছে। আর ২০% বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট আয়াত এখনো সত্য/মিথ্যা কোনটাই প্রমানিত হয়নি। যেখানে ৮০% আয়াত ১০০% শুদ্ধ বলে প্রমানিত, আশা করা যায় বিজ্ঞানের আরো অগ্রগতির সাথে সাথে বাকি ২০% ও সত্য বলে প্রমানিত হবে। কোরআনে ১৫০০ বছর ধরে আয়াতগুলো আছে, কিন্তু যতদিন বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়নি ততদিন মানুষ কোরআনের সকল আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারেনি, পারবে কিভাবে, এই ব্যাপারে মানুষের ধারনাই তো তার আগে তৈরী হয়নি। আপনি বলুন, এখন পৃথিবীবাসীদের(আমাদের) মহাকাশে অন্য প্রানী ও সভ্যতার অস্তিত্য সম্পর্কে যে ধারনা আছে এবং তাদের উল্লেখ করতে আমরা যেই সকল টার্ম ব্যবহার করি যেমন এলিয়েন, ইউ-এফ-ও, এসব কি ঠিক থাকবে যদি আমরা সত্যি সত্যি কখনো মহাকাশে তাদের সন্ধান পাই? থাকবে না, কারন তাদের ব্যাপারটা এখনো প্রমানিত নয়। আর ধারনায় ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক।
কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক প্রমানিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন হাদীস নিয়েও ব্যাপক পর্যালোচনা হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে ছবি আকার নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোরও নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে আধুনিক যুগের ইসলামিক স্কলারদের কাছ থেকে।
আরবী শব্দ "Sourah" এর অনেকগুলো অর্থ আছে। এর মধ্যে দুটি হল ছবি ও মুর্তি(স্ট্যাচু)। আর হাদিসের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে "সৌরাহ" এর অর্থ এমন প্রানীর মুর্তি যার ছায়া আছে(ত্রিমাত্রিক)। তাই ইসলামে যে কোন প্রানীর মুর্তি নির্মান হারাম। কিন্তু সঠিক ইসলামিক নিয়মের আওতায় ছবি আকা হারাম নয়(মানে নিউডিটি, এবং অন্যসব খাচরামি এলাউড না)।
ইসলামঅনলাইন থেকে উদ্ধৃত:
However, in the Arabic Language, what we call Sourah or commonly translated as 'image' can mean several things, and in the context of the prohibition, it means a statute or a sculpture of a living being that has shade (depth or three dimensional) and not a photographic picture.
Therefore, while statutes are prohibited, pictures in magazines, televisions, newspapers, books, computers, drawings, etc. are allowed. Such pictures can however be prohibited if they depict nudity or other indecent representations. But even being allowed, they should be done when necessary and not to pass time."
বিস্তারিত জানতে চাইলে এইখানে পাবেন -----> Reference
আপনারা জানেন আগে মানুষ মুর্তি, অগ্নি, প্রানী পূজায় লিপ্ত ছিল এবং এখনও কিছু কিছু ধর্মে এটি করা হয়(এই ব্লগে তাদেরই ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ফাল পারতে বেশী দেখা যায় কারন তারা জানে তাদের ধর্মের কোন যৌক্তিকতা ও ঐতিহ্য কোনটাই নেই, শুধু আছে কিছু অন্ধবিশ্বাস ও কিছু পৈরনিক রুপকথা)। মুহাম্মদ(সঃ) এর সময় এই ধরনের কুসংস্কার ছিল ব্যাপক। মানুষ যাতে কোনভাবেই শিরক করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে আল্লাহর নির্দেশে মুহম্মদ(সঃ) উপরিউক্ত হাদীসগুলো দিয়েছিলেন।
আগে না জেনেও যে মুসলিম রাষ্ট্রে ছবি আকা হয়নি তা নয়। আরব রাষ্ট্রগুলোতে আগে অপরাধীদের ছবি আকা হত জনগনের কল্যানের জন্য।
কিছুদিন আগে এক আমেরিকান কনভার্টেড মুসলিম এর ঘটনা শুনি যে
আকাআকি করত, ইসলাম গ্রহন করার পর আকা বন্ধ করে দেয় ১০ বছরের জন্য, তারপর তার প্যারালাইসিস হলে সে ইসলামিক স্কলারদের জিজ্ঞেস করে সে জীবিকা নির্বাহের জন্য কি করতে পারে তার তো এই শরীর নিয়ে ছবি আকাআকি ছাড়া আর কিছুই করা সম্ভব না। স্কলাররা তাকে ফতোয়া দেন যে তিনি ছবি আকার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। সেটা তখনকার কথা যখন ছবি আকা পুরোই নিষিদ্ধ ছিল সব স্কলারদের কাছে। বাই দ্য ওয়ে, ফতোয়া শব্দটি যদি আপনাকে পীড়া দেয় তাহলে জেনে রাখুন ফতোয়া অর্থ হচ্ছে "মতামত"।
বর্তমান যুগের আর সব শিক্ষিত আধুনিক মুসলমান যুবক/যুবতীর মত আমিও আশা রাখি শিগগিরই সকল স্কলাররা সব কনট্রভারসিয়াল হাদীস নিয়ে ঐক্যমতে পৌছুবেন এবং আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবেন।
আমি দাড়ি রাখি না, ফরয নামাজও পড়ি না, জীবনে পুন্যের চেয়ে পাপ অনেক বেশি করেছি। একজন প্র্যাকটিসিং মুসলমানের যেমন হওয়ার দরকার আমি তার ধারেকাছেও নেই। কিন্তু এরপরও অন্তরের গভীরে একটি ইচ্ছা রয়ে গেছে যে কোনদিন আল্লাহ রহম করলে আমিও পরিবর্তিত হব এবং ইসলামের সঠিক নিয়ম মেনে জীবন পরিচালনা করব। আমি পারি আর না পারি যারা সত্যিকারের প্যাকটিসিং মুসলিম, তাদের আমি প্রচন্ড শ্রদ্ধা করি, কারন আমি জানি তারা যা করছেন তা করতে কি পরিমান দৃঢ় মনোবল লাগে আর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। চেষ্টা করি সব ধর্ম সম্পর্কে জানতে, এখন অবসরে বাইবেল পড়ি, সময় সুযোগ পেলে বেদও পড়ব। আমার প্রচুর ভুল ধারনা ছিল যখন আমি কিছু জানার চেষ্টা করতাম না। এখনো যে খুব বেশি জানি তাও না কিন্তু চেষ্টা থাকে পজিটিভ মনোভাব নিয়ে জানার ও শিখার।
আমি রাজাকারদের আপনাদের চেয়ে দুইগুন বেশি ঘৃনা করি এবং তাদের ধিক্কার জানাই যুদ্ধের সময় ইসলামের ভাবমুর্তি নষ্ট করার জন্য। আরো ধিক্কার জানাই সেই সকল শিক্ষিত মুসলিম তরুন/তরুনীদের যারা ইসলামের বিরুদ্ধে এই ব্লগে অপপ্রচার দেখেও প্রতিবাদ করার সাহস রাখে না। আর করুনা করি সেই তরুন সমাজকে যারা ইসলাম সম্পর্কে ভুল শিক্ষা পেয়ে বিপথে পা বাড়াচ্ছে।
একটা কথা না বলে পারছি না মনির হাসান ও সত্যান্বেষীকে, আপনারা যখন জাকির নায়েক কে নিয়ে ফান করেন(জোকার ডেকে) আর চিন্তা করেন তারে এই প্রশ্ন/ঐ প্রশ্ন কইরা ফাস্যাদে ফেলমু তখন চরম হাসি পায়। মনে হয় আজকে "ক" অক্ষর এখনো যেই পুচকির শিখা হয়নি সে রবিঠাকুরকে গাল দিচ্ছে আর তার কবিতার ভুল বের করে দিচ্ছে।
আপনার যদি সত্যই জানার আগ্রহ থাকতো এবং বুঝার ক্ষমতা থাকতো আপনি জাকের নায়েক এর একটি লেকচারও দেখে থাকেন সেখান থেকেই বুঝতে ও জানতে পারতেন। তাকে যেহেতু প্রশ্ন করতে চাইছিলেন তাতে বুঝা যায় তার অসাধারন জ্ঞানকে আপনি একটু হলেও শ্রদ্ধা করেন, তো কখনো কি ভাই তার এত সুন্দর সুন্দর লেকচার থেকে আপনি আপনার সুচিন্তা দিয়ে কি বুঝেছেন তা নিয়ে একটি পোষ্ট করেছেন? করেন নি, কারন আপনি হয়ত বুঝেও বুঝতে চাইছেন না নয়ত আপনার পজিটিভ বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ কেড়ে নিয়েছেন এবং আপনার অন্তরে সিল মেরে দিয়েছেন। সেই কারনে আপনি পজিটিভ দিক বাদ দিয়ে শুধু নেগেটিভ খোজার চেষ্টা করেন আর তা নিজের পরিচিতি লাভের জন্য ব্যবহার করেন(আপনার পোষ্টের কমেন্টে মানুষরে ধইরা ধইরা আইনা পোষ্ট দেখানোর চেষ্টা রীতিমতো পোলাপাইন্যামির পর্যায়ে পড়ে)। আমি দোয়া করি আপনি যেন নিজ ধর্মকে আরো ভালোভাবে জানার সুযোগ পান আর আপনার সুন্দর যুক্তি উপস্থাপন ও লেখনী দ্বারা তা মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন।
(সত্বান্যেষী - আপনারে কিছুই বলবার নাই, আপনে নিজেই নিজেরে জোকার বানায়ে ফেলছেন, সত্য এমনই অন্যেষন করছেন যে এখন আর সত্য মিথ্যার তফাৎ ও বুঝেন না, খালি আজাইরা লাইন ছাড়া পেচাল পারেন, যারা যুক্তি বুঝে না ও ভুল করলে তা শুধরানোর মনমানসিকতা রাখে না তাদের সাথে কখনো তর্কে যেতে হয় না এবং বুঝানোও বৃথা, ইসলাম দুরে থাক আপনে আগে নিজের ধর্ম জানেন, বেদ পড়েন গিয়া, তাইলে না জাকির নায়েক এর সামনে যায়া দাড়াইতে পারবেন)
***আমি এই পোষ্টটিতে মনির হাসানের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি যুক্তি দিয়ে ও মার্জিত ভাষায়, আশা করি সবাই একই ভাবে যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে সুন্দর ভাষায় কমেন্ট করবেন***
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:১৯