প্রানী কোষের সমস্ত গুরুত্বপূর্ন অনু যেমন DNA, RNA , প্রোটিন ইত্যাদি রসায়নাগারে তৈরী করতে সক্ষম হওয়ার পর ধারনা জন্মালো যে ওপারিন- হ্যালডেন মতবাদ সত্যি হতে যাচ্ছে অর্থাৎ- বিভিন্ন অনুর মিশ্রন তৈরী করে চারপাশে চর্বির (Phospholipid) দেওয়াল তৈরী করে দিলে কোষ তথা প্রান তৈরী করা সম্ভব হবে।বিজ্ঞানী জন সাদারল্যান্ড (John Sutherland) মনে করেন সমস্ত জটিল যৌগিক পদার্থের অনু একই সময়ে তৈরী হয়ে জীবনের সৃস্টি প্রায় অসম্ভব, বরং অনুগুলো তৈরী হয়েছিল ধাপে ধাপে। ফলে “ডিম আগে না মুরগী আগে”র সেই পুরোনো বিতর্কের মত কোন অনু দিয়ে প্রানের যাত্রা শুরু সে সম্পর্কে নতুন বিতর্ক জন্ম নেয়। প্রানের উদ্ভব এবং টিকে থাকার জন্য বংশ বিস্তার অপরিহার্য্য।ডারউইন মতবাদের “Struggle for existence” অনুযায়ী অধিক বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম প্রানীরাই টিকে থেকেছে আর স্বল্প সক্ষমতার প্রানীরা পৃথিবী থেকে লোপ পেয়েছে। DNA,এবং RNA নিজেদেরকে ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের অনুরুপ কপি তৈরী করতে সক্ষম। সুতরাং জীন বহনকারী এই দুই অনুর অন্ততঃ যে কোনো একটি প্রানের উদ্ভবের জন্য অতি আবশ্যক কারন এরা প্রোটিন তৈরী করার জন্য অপরিহার্য্য। মজার ব্যাপার হল প্রোটিন এনজাইম ছাড়া ডি,এন,এ বা আর,এন,এ তাদের কাজ করতে অক্ষম এবং আরো মজার ব্যাপার হল যে এই সমস্ত অনুগুলো যখন চর্বির তৈরী দেওয়াল বা Cell Membrane দিয়ে আবদ্ধ থাকে তখনই শুধুমাত্র তারা কাজ করতে পারে, অন্যথায় নয়। চর্বি তৈরী আবার প্রোটিন এনজাইমের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রানের উদ্ভব একটি গোলক ধাঁধা।
এই গোলক ধাঁধার উত্তর দিতে বৃটিশ রসায়নবিদ Leslie Orgel ১৯৬৮ সালে তার RNA first hypothesis উপস্থাপন করেন। তিনি এক চিঠি লিখে বিজ্ঞানী Francis Crick কে জানান যে ডি,এন এ বা প্রোটিন নয়, আর,এন,(RNA) ই হল প্রথম তৈরী হওয়া জীবনের অনু। প্রানকে টিকিয়ে রাখতে গোড়ায় তৈরী হওয়া এই আর,এন,এ'র বহুমুখী গুনাবলী থাকার প্রয়োজন ছিল। নিজেদের কপি তৈরী করে বংশ বিস্তার করা ছিল প্রথম RNA এর জন্য সবচে' বেশী গুরুত্বপুর্ন। Orgel এর হাইপোথিসিসকে সমর্থন করেন বিজ্ঞানী Crick । RNA first hypothesis জোরালো যুক্তি হলেও তা জন্ম দিল নতুন বিতর্কের যা আজও চলছে। বিজ্ঞানী Orgel তার হাইপোথিসিসে প্রজনন বা Replication কে প্রানের সমস্ত গূনাবলীর মধ্যে প্রথম আবির্ভূত গুন হিসেবে বিবেচনা করেন।
অন্য আরেকদল বিজ্ঞানী পাচন প্রক্রিয়া বা Metabloism কে প্রজননের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন এবং আগে আবির্ভূত প্রানের গুন হিসেবে মনে করেন। এরা হলেন Metabolism first তত্বের সমর্থক। তাদের বক্তব্য হল পাচন প্রক্রিয়া ছাড়া প্রানীর পুস্টি এবং বংশবিস্তার অসম্ভব। Metabolism first এবং RNA first এই দুই শিবিরের দ্বন্দ চলে আসছে সেই উনিশশো ষাটের দশক থেকে যার আজও মীমাংসা হয় নি। তৃতীয় অন্য একদল বিশ্বাস করেন প্রানের শুরুতে সবচে' প্রথম গঠিত হয়েছিল কোষের পর্দা বা Cell Membrane কারন পর্দা ছাড়া কোষের প্রানের গুনাবলী থাকে না । এবং প্রানের অনুগুলোকে যদি একটা নির্দিস্ট স্থানে ঘিরে না রাখা হয় তাহলে অনুগুলো একটা থেকে অন্যটা দূরে চলে গিয়ে প্রানের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তোলে। নির্দিস্ট দেওয়াল ঘেরা স্থানে প্রান তৈরী হওয়ার দাবীদার বিজ্ঞানীরা হলেন “ Compartmentalisation first “ তত্বের সমর্থক।
বিজ্ঞানী সাদারল্যান্ডের মতে প্রাচীরবিহীন মুক্ত পাচন প্রক্রিয়া অর্থহীন। কোন অংশ জীবকোষ শুরু হয়েছিল সে বিতর্ক এখনো চলছে।(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:২২