সেন্ট্রাল পার্কের সামান্য দূরে কিউবার বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত একনায়ক বাতিস্তার প্রাসাদ। এ প্রাসাদ এখন বিপ্লবের যাদুঘর Museo de la revolucion। নন্দনীয় এ প্রাসাদে কিউবান বিপ্লবের অনেক স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শনীর ব্যাবস্থা আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সেই ছোট জাহাজটি যাতে করে চে গুয়েভারা এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রো মেক্সিকো থেকে কিউবায় পাড়ি জমিয়েছিলেন(Granma yacht)। যে ট্যাঙ্কে করে তারা হাভানা শহরে ঢুকে ছিলেন সে ট্যাঙ্কটি রাখা আছে পাশেই। চে গুয়েভারার ব্যবহৃত সেই বিখ্যাত রাইফেলটি যেটি তিনি হাতে গুলি লাগা অবস্থায় ফার্স্ট এইড বক্সের পরিবর্তে তুলে নিয়ে পালিয়েছিলান।
যাদুঘর ছেড়ে এগিয়ে গেলে পড়বে গ্রান্ড ন্যাশনাল থিয়েটার এবং তার উল্টো দিকে ১৯২৯ সালে নির্মিত ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিল এর অনুকরনে তৈরী El Capitalio Nacional ।এটি ছিল পার্লামেন্ট বিল্ডিং। বেশ বড় আকারের এ বিল্ডিং এখন যাদুঘর।(Museum of Natural History and Science Museum)। ১৯২০ সালে নির্মিত গ্রান্ড ন্যাশনাল থিয়েটারে আজও অনুষ্ঠিত হয় কিউবার বিখ্যাত ব্যালে ডান্স।
হাভানার ভ্রমনসূচীতে আমাদের সর্বশেষ দর্শনীয় স্থান ছিল Revolution square।এ স্কোয়ারের নির্মান শুরু হয়েছিলো ১৯৫২ সালে জেনারেল বাতিস্তার আমলে।এখানকার বস্তি বাসীদের উৎখাত করে নির্মিত এ স্কোয়ারের নাম ছিল Civic Centre।বস্তিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে বাতিস্তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন যে আইনজীবি তিনিই হলেন পরবর্তী কালের কিউবান বিপ্লবের নায়ক ফিডেল ক্যাস্ট্রো। সে স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় গুরুত্বপূর্ন সভা সমাবেশ। ৩৮৫ ফুট উচু স্তম্ভের সামনে আছে হোসে মার্টি মেমোরিয়াল।স্তম্ভের পাদদেশে স্থাপিত আছে হোসে মার্টির ৬০ ফুট উচু পাথরের মূর্তি। দশ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে ক্যাস্ত্রো এখানে ভাষন দিতেন জতীয় গুরুত্বপূর্ন দিনগুলো যেমন ১লা মে বা ২৯ শে জুনে।স্কোয়ারের উলটো দিকে দূরে কিউবান বিপ্লবের তিন সেনাধক্ষ্যের স্মরনে নির্মিত তিন মিনিস্ট্রিয়াল বিল্ডিং। চে' গুয়েভারার প্রতিকৃতি সম্বলিত মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেরিওর বিল্ডিং এ খচিত আছে চে'র সেই বিখ্যাত শ্লোগান "Hasta la Victoria Siempre" (Until the Everlasting Victory, Always)। আধ ঘন্টারও বেশী অপেক্ষা করেও মুষলধারের বৃস্টির কারনে বাস থেকে নামা সম্ভব হয় নি। বাসের ভেতর থেকেই রেভোল্যুশান স্কোয়ারের ছবি তুলে ফিরতে হল। হাভানাতে আরো কিছুক্ষন সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকলেও থাকা সম্ভব হয় নি। গাইডেড ট্যুরে নিজের ইচ্ছে মত চলা সম্ভব নয়। ততক্ষনে দিনের আলো শেষ হয়ে সন্ধ্যা নামছে। বাস ফিরে চলল ভারাডেরোর দিকে।
পরদিন টোরোন্টো ফেরার ফ্লাইট সন্ধ্যা সাড়ে স্তটায়। ফলে হাতে তখনো শেষ সারাদিন। সকাল বেলার চনমনে রদ্দুরে বেরিয়ে পড়লাম সমুদ্র সৈকতে। নাস্তা সেরে আবার চড়ে বসলাম ট্যুরিস্ট বাসে। ভারাডেরোর দিনগুলোতে প্রতিদিনই ট্যুরিস্ট বাসে ঘুরেছি সারাদিন কিন্তু কখনই ক্লান্ত মনে হয় নি। মনে হয়েছে বার বার ঘুরে ফিরে দেখি। শেষদিনের মত কেনাকাটা করলাম হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে। লাঞ্চ খেয়ে হো্টেল রুমে ফিরে মালপত্র গুছিয়ে নিলাম । হাতে আরো কিছুক্ষন সময় থাকায় এক গ্লাস মোহিতো নিয়ে গিয়ে বসলাম পুলপাড়ে। পুলপাড়ের বার এর পাশে এদিন দুজন মানুষের প্রায় শুন্যে ভেসে থাকার প্রদর্শনী। একজন শুয়ে আছে মাটির সমান্তরালে প্রায় দুতিন ফুট উপরে। কিভাবে শুন্যে ভেসে থাকে তা অবাক করার মত ব্যাপার।
হোতেল রিসিপশানে ফিরে রুমের চাবি ফিরিয়ে দিলাম। একটু পরেই সানউইং এয়ার লাইন্সের টুয়রিস্ট বাস এসে হাজির হল। বিদায় হোটেল ক্লাব কাওয়ামা। সন্ধ্যায় ভারাডেরো বিমান বন্দর থেকে আমাদের বিমান উড়াল দিল টোরোন্টোর উদ্দেশ্যে। বিদায় ভারাডেরো , বিদায় কিউবা।(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৩৯