somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আগাচৌ সমাচার বা আমার দেখা বুদ্ধিজীবী!!

১৩ ই মে, ২০০৮ ভোর ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৫ সালের জুন মাসে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে ততকালীন সরকার নিয়ন্ত্রনের ৪টি পত্রিকার প্রধান, বর্ষীয়ান লেখক, সাংবাদিক, কবি ও বুদ্ধিজীবী জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এসেছিলেন ভেসিনের বাংলাদেশীদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে। এয়ারপোর্টে স্বাগত জানাতে আয়োজকদের সাথে আমিও গিয়েছিলাম। জনাব চৌধুরী খুব ধীর পায়ে বেরিয়ে এলেন ইমিগ্রেশন পেরিয়ে। বয়সের ভার সামলাতে হাতে লাঠি। খুব যত্ন করে বুদ্ধিজীবীর কোমর পেঁচিয়ে হাটছেন চল্লিশোর্ধ এক বাঙালী রমনী। আয়োজকরা নিজেদের মধ্যে এক পশরা চোখাচোখী করে নিল। কবির সাথে কোন নারী আসবে তারা আগে থেকে জানে না। নারীর জন্য আলাদা থাকার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। মেয়ের বয়সী মহিলার প্রতি বুদ্ধিজীবীর কেয়ারীং এবং মহিলার মুখে 'গাফ্ফার ভাই' ডাকটা উপস্থিত অনেকের কাছেই অসস্তি লাগছিল।
মহিলার নাম পারভীন সুলতানা। পলাশী থেকে ধানমন্ডি নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের অভিনেত্রী তিনি। স্বামী নেই। একা থাকেন লন্ডনে। লেখকের সফর সংগী হতে পছন্দ করেন। বয়সী সাংবাদিক লন্ডনের বাইরে সফর করলে তিনি সাথে থাকেন। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, লেখকের সেবায় নিজেকে কোরবান করতেও রাজী আছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বুদ্ধিজীবী গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করলেন। ৩৮ মিনিটের বক্তৃতা শুনলাম মন্ত্রমুগ্ধের মতো। পরদিন সকালে আবারো দেখা করতে গেলাম। ইচ্ছে ছিল লেখকের সাথে ভেনিস ঘুরব। গোনদলায় (ভেনিসের নৌকা বিশেষ) চড়ব। মাঝিদের গলায় ভেনিসের আনচলিক গান শুনব। কিন্তু কে জানতো এক মহা বিব্রতকর অবস্থা অপেক্ষা করছে!
রাগে ফুসে ফুসে উঠছেন বুদ্ধিজীবী। গলার বয়সী রগগুলো ফুলে উঠেছে। চোখে মুখে জমা হয়েছে রক্ত। হুমকির সুরে বললেন, তোমাদের বিরুদ্ধে আমি পত্রিকায় লিখব।
তার রাগের কারন জানতে পারলাম দুটি! প্রথমত অনুষ্ঠানে পারভিন সুলতানাকে বক্তৃতা করতে দেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত রাতে বুদ্ধিজীবী তার রুমে একবোতল রেড'লেবেল ও একজোড়া গ্লাস পাঠাতে বলেছিলেন। আয়োজকরা পাঠিয়েছে রেড'ওয়াইন!
আয়োজকরা বার বার ক্ষমা চাচ্ছে ওইতিহাসিক একুশের গানের লেখকের কাছে। তারা বলছে, পারভীন আপা আসবেন আগে থেকে জানা না থাকার কারনে তার নাম বক্তৃতার খাতায় রাখা সম্ভব হয়নি। আর যাকে বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী রেড লেবেলের কথা বলেছেলেন সে ভুল শুনেছে। ফলে রেড লেবেলের পরিবর্তে পাঠিয়েছে রেড ওয়াইন!
বুদ্ধিজীবী তাদেরকে ক্ষমা করতে পারলেন না। লন্ডনে ফিরে ভেনিস সফরের কথা লিখলেন ঢাকার একটি দৈনিকে। একটি লিখার মধ্যে যতটা সত্য বিকৃত করা যায়, নিজেকে বিসর্জন দেয়া যায়- তার সব চেষ্টাই তিনি করেছেন যত্ন করে। যাদের পকেটে সওয়ার হয়ে স'বান্ধব ভেনিস ভ্রমন করলেন তাদের নামটুকু উল্লেখ করার মতো সামান্য উদারতা তিনি দেখাতে পারেননি। কার সুন্দরী বউ তার পা ছুঁয়েছে, বাড়িতে ডেকে শুটকি ভর্তা নিজ হাতে থালায় তুলে দিয়েছে, যুবতী কন্যা সঙ্গযুগিয়েছে তা লিখেছেন বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে। অনুষ্ঠানে নাচতে দেখে এক সুন্দরী শোড়ষীকে বড্ড মনে ধরে বুদ্ধিজীবীর। লন্ডন থেকে ফোন করে তার নাম জেনে লিখেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। ধান ভানতে শিবের গানের মতো প্রথম আলো এবং যায়যায়দিন'র বিরুদ্ধে খিস্তি করতে ভোলেননি। বিভ্রান্তি দিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক প্রসঙ্গে। ভেনিসের একমাত্র বাংলা রেডেও 'রেডিও বাজে' নিয়েও দিয়েছেন মনগড়া তথ্য।
কেন তিনি এমন করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আমি তাকে শ্রদ্ধা করতে চাই। নোংরা কিছু বলে মনের দৈন্যতা প্রকাশ করতে চাই না। ছোট করতে চাই না প্রিয় লেখক জনাব চৌধুরীকে। হয়তো বয়সের ভারে অনেক কিছু সাভাবিক ভাবে নেয়ার ক্ষমতা তিনি হারিয়েছেন। কিন্তু আমরা তাকে আরো উদার দেখতে চাই। শেষ বয়সে অন্তত একটি হলেও সঠিক ও সত্য কলাম দেখতে চাই। যা ঘুনে ধরা আমাদের সমাজকে সভ্য হতে শেখাবে।



লিখাটি সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত। লেখকের ইচ্ছায় নাম প্রকাশ করা হলো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০০৮ ভোর ৪:২৩
৫০টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×