আপনাদের কারো এমনটা হয় কিনা জানিনা; তবে আমার ক্ষেত্রে সব সময়ে দেখেছি, সুখের কোন কিছু ঘটলে দুঃখের কিছু ঘটতে একেবারেই সময় নেয় না। এটা আমার জানা, কাজেই এর একটা প্রস্তুতি ভিতরে ভিতরে সবসময় থাকা উচিত। অথচ প্রতিবারই সুখের তোড়ে ভেসে গিয়ে ভাবি, দিনকাল বোধহয় এভাবে দাত কেলিয়েই যাবে। এদিকে দুঃখ যে পিছনে খাপ পেতে আছে, সেটা বেশীরভাগ সময়েই মনে থাকে না। পরপরই অবধারিতভাবে এমন একটা ঝটকা খাই....একেবারে দিশা হারিয়ে ফেলি। কাজেই সুখের দিশা আর বিপদের বেদিশা মোটামুটিভাবে আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে।
গত বুধবারে আমার বউ ম্যান্চেস্টার গেল তার এক ভাই-ভাবীর সাথে ঈদ করতে। আমি খুশী, সেও খুশী। একেবারে উইন উইন সিচ্যুয়েশান। তার খুশীর কারনতো বুঝতেই পারছেন। আমি খুশী, কারন এ'কদিন চুটিয়ে নিরুপদ্রবে ব্লগিং করবো। তো গত বৃহসপতিবার (৮ তারিখ) দৈনন্দিন কাজ আর ব্লগিং করে যথারীতি ঘুমাতে গেলাম। আমি সাধারনতঃ সকালে কাজে যাওয়ার আগে ঘন্টাখানেকের জন্য ল্যাপটপে বসি, কিংবা বলা যায়, বসার চেষ্টা করি। শুক্রবারে সকালে উঠতে দেরী হওয়ায় সেটা আর করতে পারি নাই, তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে পরেছিলাম। অফিসে গিয়েই প্রায় দু'মাস ধরে ঝুলে থাকা একটা ছোট্ট পদোন্নতির সুসংবাদ পেলাম। পেটের মধ্যে গুড়ুগুড়ু খুশীর অনুভূতি নিয়ে বাসায় এসেই ল্যাপটপ অন করলাম। হা কপাল! দেখি আমার সাধের ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করেছে। বউয়ের ল্যাপটপ খুজলাম, সেটা সে নিয়ে গিয়েছে। আমার যে টেকি বন্ধু এসব ব্যাপারে মুশকিল আসানের ভূমিকা পালন করে, সে একমাসের জন্য দেশে গিয়েছে ঈদ করতে। ''অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়'' এর মর্ম হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলাম সেদিন।
গতমাসে সামু'র সার্ভার ডাউন থাকায় মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছিল। এবার মনে হলো, আমার মাথায় যেন পুরোটা ইউনিভার্সই ভেঙ্গে পরলো। আমার ল্যাপটপের সবকিছু খাতরার মধ্যে তো পড়লোই, সেই সাথে সামু'র সমুদয় ব্যাকআপ, ১০/১২টা আধা খাওয়া আপেলের মতো আধা লেখা পোস্ট……., বহু ছবিও যে খাতরায় পরলো তা উপলব্ধি করে একেবারে মাথায় হাত। আমার 'মুশকিল আসান' না আসা পর্যন্ত বিপদের মাত্রা কতোটা তা বুঝতেও পারছি না। সুখের পরে দুঃখ আসুক, অসুবিধা নাই….কিন্তু এতো দ্রুত আসার দরকার কি? সুখটাকে একটু রসিয়ে রসিয়ে উপভোগের সুযোগ তো এ্যটলিস্ট আমি দাবী করতে পারি….নাকি পারি না!!
এবার আপনাদেরকে অল্প খানিকটা পেছনে নিয়ে গিয়ে আরেকটা সুখ-দুঃখের ঘটনা বয়ান করি। কাভা ভাইয়ের সাম্প্রতিককালের ''ব্লগারস' রিভিউঃ সাম্প্রতিক সময়ে যারা বেশ চমৎকার লিখছেন – ২'' শিরোনামের পোস্টে আমার সম্পর্কে উনার মন্তব্য পড়ে মনের মধ্যে কিছুটা উড়ু উড়ু ভাব চলে এসেছিল। কিন্তু অতীতের বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য একটু ইতস্তত করছিলাম আকাশে উড়ার ব্যাপারে। আসলে মনস্থির করতে পারছিলাম না। এই মনস্থির করতে না পারার জন্য একটা প্রবাদ বাক্যও বহুলাংশে দায়ী। আপনারা সবাই জানেন, বলা হয়ে থাকে…. কুত্তার পেটে নাকি ঘি সহ্য হয় না! তাছাড়া, ব্লগার হিসাবে আমি আসলে কেমন কিংবা আসলেই আমি 'ব্লগার' নামক অভিজাত পরিচয়ের যোগ্য কিনা সেটা নিয়েও একটু সন্দেহ ছিল।
সে যা হোক, এই সন্দেহের দোলাচলের মধ্যেই আমার সাম্প্রতিক পোষ্টানো পোষ্টে গেলাম, সন্মানিত মন্তব্যকারীদের প্রত্যুত্তরের জন্য। সেখানে একটা মন্তব্য দেখে আমার মনের মধ্যে থাকা সকল সন্দেহের অবসান ঘটলো। অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য বলে কথা! নিশ্চিত হলাম, আমি আসলে একজন ব্লগার, তবে বালছাল ব্লগিং করা ব্লগার।
এজন্যে মন্তব্যকারীকে আমার আন্তরিক মোবারকবাদ। একজন বালছাল ব্লগার হয়ে খামোখা উর্ধমুখে উড়ার পায়তারা করছিলাম। কি ভুল করতে যাচ্ছিলাম বলেন তো দেখি! উপর থেকে পরে মরেও তো যেতে পারতাম!! একটা বিশাল বিপদের হাত থেকে উনি আমাকে বাচিয়েছেন।
এই 'বালছাল' শব্দটা অবশ্য আমার কাছে তেমন একটা অশালীন কিছু না। আপনারা অনেকেই জানেন আমি পুরানো ঢাকার মানুষ। আর পুরানো ঢাকার লোকজনের 'মুখ খারাপ' অনেকটা কিংবদন্তি পর্যায়ের। বলা হয়ে থাকে, এদের কেউ যখন মুখে ঝড় তোলে, তখন সামনে দাড়ানো মানুষের জামাকাপড়ও জায়গামতো থাকে না। উড়ে যায়! যাই হোক, আমি প্রত্যুত্তরে কোন খারাপ শব্দ কিন্তু উচ্চারন করি নাই। না, একেবারেই না। রগচটা একজন মানুষ হিসাবে একসময় আমার যথেষ্ট বদনাম ছিল। সামু'র কল্যানে আমার ধৈর্য এবং সহনশীলতা এখন ইর্ষা করার মতো। আমার বউ মাঝে মধ্যেই বলে, তোমার আরো আগে ব্লগিং শুরু করা উচিত ছিল। আমিও ভাবি, আরো আগে কেন ব্লগিং শুরু করি নাই; তাহলে জীবনের অনেক অযাচিত বিপর্যয় ঠেকাতে পারতাম! তবে দেরীতে হলেও হয়েছে তো! সামু'র প্রতি এ'জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক ভাষা আমার জানা নাই।
এখন কথা হচ্ছে, জাতীর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অতি মুল্যবান কথা ক্রমাগত বলে বলে যিনি মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন, তার মুখে একি বাণী!! আমাদের যাদের হাড্ডি পেকে তামা তামা হয়ে গিয়েছে, হার্ডডিস্ক ফুল, শেখার দিন শেষ; কিংবা ব্লগে আমরা যারা প্রশ্নফাস জেনারেশানের সদস্য, ম্যাও-প্যাও, থুক্কু বালছাল ব্লগিং করি তাদের কথা বাদ। তাছাড়া ঠিকমতো খোজ করলে হয়তো দেখা যাবে ডোডো পক্ষীই আমাদের প্রকৃত পূর্বপুরুষ ছিল! তাই আমাদের জন্য এই মন্তব্য ঠিক আছে। কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজের যেসব সদস্য অনেক আশা ভরসা নিয়ে ব্লগে আসছে কিছু শেখার জন্যে, তারা এমন একজন অভিজাত ব্লগারের কাছ থেকে কি শিখবে? এধরনের অশালীন শব্দমালা? এসব শিখে তারা তাদের মন্তব্যেও একসময় এসব শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করবে কারন, জ্ঞানীদেরকে অনুসরন করা মানুষের একটা সহজাত বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া, কে না জানে বাশের চেয়ে কন্চি সবসময়েই বড় হয়। তারা কি এইধরনের শব্দেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি এর চেয়েও ভয়াবহ শব্দসমষ্টি ব্যবহার করবে? কিছু উদাহরন সাম্প্রতিককালে সম্ভবত আমরা ব্লগে দেখেছি। চিন্তার বিষয়…...নাকি ভুল বললাম!
আমাদের নতুন জেনারেশানের সামনে বর্ষীয়ান একজন অভিজাত ব্লগারের যদি এমন দৃষ্টান্তই থাকে, তাহলে আমাদের গন্তব্য শেষ পর্যন্ত কোথায়? এই প্রশ্ন এখন আমাকে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে।
সুখের কথা বাদই দিলাম; এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি?
পাদটীকা: ঈদের ছুটিতে বাধ্য হয়েই ব্লগে ভিজিটর হিসাবে ছিলাম। মোবাইলে আমি বাংলা টাইপ করতে পারি না, তাই লগ-ইন করা হয়নি। বন্ধের মধ্যেই এটা কাগজ-কলম ব্যবহার করে লিখেছি। গতকাল বউয়ের 'স্ব-গৃহে প্রত্যাবর্তন দিবস' ছিল। ল্যাপটপ নাগালে আসাতে মনে হলো আকাশের চাদ হাতে পেলাম। বউকে একথা বললাম, কিন্তু ও ঠিকমতো শুনে নাই। শুনেছে, আকাশের চাদের দেখা পেলাম। আমি অবশ্য ওর ভুল ভাঙ্গাই নাই। কি দরকার শুধু শুধু ঘরে সমস্যা তৈরী করার, ক্ষেপে গিয়ে আবার ম্যানচেস্টার চলে যেতে পারে! তবে প্রথম সুযোগেই এটা টাইপ করে ফেললাম। ব্লগে এ'কদিন সক্রিয়ভাবে না আসতে পারার ভার বুক থেকে নেমে গিয়েছে। আপাতত ওম শান্তি!!!
ছবিটা, বলাই বাহুল্য নেট থেকে নামিয়েছি।