স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ১
ইটালীর প্রত্যেকটা শহরেই ছোট বড় একাধিক পিয়াজ্জা বা স্কোয়ার রয়েছে। এর অনেকগুলিই আবার বিশ্ববিখ্যাত! হেলানো টাওয়ারটাও একটা স্কোয়ারে, নাম ’পিয়াজ্জা দেই মিরাকোলী’। এই পিয়াজ্জাটা ইটালীর অন্যান্য পিয়াজ্জা থেকে একটু ভিন্নধর্মী। পিয়াজ্জার সাধারন বৈশিষ্ট্য হলো, শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একটা পাকা খোলা চত্বর। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাস্তা এসে এখানে মিশে, অনেকটা আমাদের ঢাকার ফার্মগেটের মতো একটা জংশন! এক বা একাধিক মনুমেন্ট থাকে। আর পিয়াজ্জা দেই মিরাকোলী দেয়াল দিয়ে ঘেরা। ভিতরের চত্বরটা বেশিরভাগই ঘাসের। আর মনুমেন্টের বদলে বেশকয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং রয়েছে। যার মধ্যে টাওয়ার একটা।
এটা আসলে একটা বেল টাওয়ার বা ঘন্টাঘর। প্রতিটা ক্যাথেড্রালেই ঘন্টাঘর থাকে, কোনোটা ক্যাথেড্রালের ভিতরে, কোনোটা বাইরে। ১১৭৩ সালে এর কাজ শুরু হয়, আর তিন ধাপে ১৯৯ বছরে এটি সম্পন্ন হয়। মজার ব্যাপার হলো তৈরীর ৫ বছর পরই এটা হেলতে শুরু করে। পরবর্তীতে নীচের মাটির সমস্যার সমাধান করে এর পতন ঠেকানো হয়। ১৯৮৭ সালে এটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব-ইতিহ্যের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, টাওয়ারটা ক্যাথেড্রালের পিছনে অবস্থিত। কিন্তু পর্যটকরা আসে টাওয়ার দেখতে। তারা বেশিরভাগ স্কোয়ারে ঢোকে পিছনদিক দিয়ে, তাই শুরুতেই তারা টাওয়ারটা দেখে! আমিও তাই করেছি। এটা আসলে ক্যাথেড্রাল বা পুরা স্কোয়ারের পেছন দিক! তাই পর্যটকদের তোলা বেশিরভাগ ছবিতেই দেখা যায় টাওয়ার ক্যাথেড্রালের সামনে, কিন্তু হওয়ার কথা উল্টা, তাইনা?
ছবি যেমনটা হওয়া উচিত; ক্যাথেড্রালের পিছনে টাওয়ার
ক্যাথেড্রাল, সামনে থেকে
ক্যাথেড্রালের ভিতরে
স্কোয়ারের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং হলো ব্যাপ্টিস্টারী। সহজ কথায় ব্যাপ্টিজম হলো কাউকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত করা, আর যেখানে এই কাজটি করা হয় সেটাই ব্যাপ্টিস্টারী। ১১৫২ সালে এর তৈরী শুরু হয়, আর ১৩৬৩ সালে এর নির্মান শেষ হয়। বিশ্ববিখ্যাত ইটালীয়ান জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও (উনি একজন পদার্থবিদও ছিলেন) এই পিসা শহরেই জন্মগ্রহন করেন আর এই ব্যাপ্টিস্টারীতেই তাকে ব্যাপ্টাইজ করা হয়।
ব্যাপ্টিস্টারী
পিয়াজ্জা দেই মিরাকোলীতে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হচ্ছে ’ক্যাম্পোসান্তো’। এটাকে প্রতিকীভাবে ’’মৃতদের জন্য কবর আর জীবিতদের জন্য জীবন-যাপনের নির্দেশিকা’’ ভবন হিসাবে দেখা হয়। এখানে এই থীমের উপর ফ্রেসকোর একটা চমৎকার সিরিজ আছে। আর একটা মিউজিয়াম ভবন আছে যার বেশি ডিটেইলস আমি দেখি নাই। এতকিছু দেখার পর একটু বোরিং মনে হয়েছে!
ক্যাম্পোসান্তো এর ভিতরে, দেয়ালে ফ্রেসকো। রক্ষনাবেক্ষন চলতে থাকায় ছবি তুলতে দেয়নি।
মিউজিয়ামে পুরো কমপ্লেক্সের একটা প্রোটোটাইপ
সেই আমলের তেষ্টা মেটানোর ব্যাবস্থা, এখনও পান করা যায়
ফেরার পথে এটা দেখলাম, ওদের ভাষায় একটা সাইনবোর্ড টানানো, কিছুই বুঝলাম না। একজনকে জিজ্ঞেস করাতে বললো, এটা একটা প্রাচীন রোমান বাথের ধ্বংসাবশেষ।
পিসা ভ্রমন শেষ করলাম। পরবর্তী গন্তব্য পম্পেই নগরী। পিসা সেন্ট্রাল ট্রেন স্টেশান থেকে বিকাল ৪:৩২ এ ট্রেন ধরে যাবো ফ্লোরেন্স। সেখানে ট্রেন বদল করে যাবো নেপলস। তারপর আবার ট্রেন বদলে যাবো পম্পেই। পম্পেই পৌছার কথা রাত সাড়ে দশটায়। লম্বা জার্নী, এদিকে সারাদিন হাটাহাটি করে ক্ষুধাও লেগেছে। ঢুকলাম এক পিজ্জারিয়াতে (রেস্টুরেন্ট, যেখানে পিৎজা বিক্রি হয়)। দেখি সারি সারি বিরাট আকারের চারকোনা পিৎজা সাজানো! এত্তোবড় পিৎজা! জিজ্ঞেস করে জানলাম, ইটালীতে পিৎজা বিক্রি হয় সাধারনতঃ কেজি দরে!!! কতোটুকু দরকার দেখিয়ে দিলে কেটে ওজন করে দিবে, সে অনুযায়ী দাম! তো হাফকেজি পিৎজা খেয়ে ফেললাম!
ফ্লোরেন্স থেকে নেপলস, এই ট্রেনে করে
তথ্য কিছু গুগলের, কিছু ওখানকার পরিচিতিমূলক পুস্তিকা এবং বোর্ডের, ছবি আমার ক্যামেরা এবং ফোনের।
চলবে.........
স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৩
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩১