এক সময় চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর সবচেয়ে সিক্ত (ভেজা ) স্থান হিসাবে ধরা হত । বর্তমানে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় সবচেয়ে সিক্ত স্থান হিসাবে ধরা হয়। বর্তমানে চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি মাওসেনরাম গ্রামটি প্রথম স্থান এর রেকর্ড দখল করেছে।
চেরাপুঞ্জি এখনও এক বছরে সবচেয়ে বেশি বা এক মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এর রেকর্ড এর আধিকারি। চেরাপুঞ্জি তে ১৮৬১ সালের জুলাই তে ৯৩০০ মিলিমিটার বা ৩৬৬ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। এবং ১৮৬০ সালের ১লা আগস্ট থেকে শুরু করে ১৮৬১ সালের ৩১ শে জুলাই পযন্ত এই এক বছরে মোট ২৬৪৬১ মিলিমিটার বা ১০৪১.৭৫ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। যা পৃথিবীর কোথাও কখনো হয়নি । এখানকার গড় তাপমাত্রা ১১-২০ সেন্টিগ্রেড এর ভিতর উঠা নামা করে ।
অনেকেরই এই জায়গাটি সমন্ধে আকর্ষণ আছে। প্রচুর টুরিস্ট এখানে আসে। এখানে বড় কোন হোটেল নাই। কিন্তু স্থানিয় দের দ্বারা পরিচালিত রিসট আছে। টুরিস্ট রা সাধারণত সিলং শহর থেকে এখানে আসে। চেরাপুঞ্জি সিলং শহর থেকে ৫৫ কিঃমিঃ দূর।
চেরাপুঞ্জি কোথায়?; ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর । চেরাপুঞ্জি শহরের জনসংখ্যা হল ১০,০৮৬ জন। বাংলাদেশের সমতল ভুমির ঠিক শেষ মাথায় যেখানে পাহাড় শুরু হয়েছে সেখানে পূর্ব খাসি পাহাড় অবস্তিত।
চেরাপুঞ্জি তে বিখ্যাত?; শহরটি নামকরা যে এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় তাছাড়া- এখানে জীবন্ত ব্রিজ আছে। জীবন্ত ব্রিজ হল ছোট বড় লম্বা নানান ধরনের ব্রিজ যা গাছের শেকড় বা শ্বাসমূল দিয়ে তৈরি। তৈরি বলাটা ভুল। এখানকার অধিবাসী রা শতশত বছর ধরে বিশেষ পদ্ধতি তে গাছের শিকড় বা শ্বাসমূল কে ব্রিজ হিসাবে বেড়ে উঠতে বাধ্য করে। এ জন্য তারা মুলত রাবার গাছের শেকড় বা শ্বাসমূল ব্যাবহার করে। একটি সম্পুন্য ব্রিজ বেড়ে উঠতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। এবং শতশত বছর টিকে থাকে।এবং এগুলো খুবি শক্তও হয়, একসাথে ৫০ জন মানুষের ভার সহজেই নিতে পারে।আর শিকড় বা শ্বাসমূল গুলো যেহেতু জীবন্ত তাই দিনদিন আরও শক্ত হতে থাকে। চেরাপুঞ্জি তে সবচেয়ে পূরানো জীবন্ত ব্রিজটির বয়স ৫০০ বছর। আচ্ছা এ ছাড়া এখানে অসংখ সুন্দর সুন্দর জল প্রপাত আছে। এ ছাড়াও এখানে আরও কিছু টুরিস্ট এট্রাকশন আছে।
চেরাপুঞ্জি তে আরও কিছু যা আমাদের থেকে ভিন্ন?; চেরাপুঞ্জি তে মাতৃতান্তিক পরিবার বাবস্তা বিদ্যমান।পরিবারের ছোট মেয়ের জামাই বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি চলে আসে।
পানি নাই পানি নাইঃ বহু বছর যাবত সারা বছর এত বৃষ্টি হয়া সত্ত্বেও এখানে খাবার পানির অভাব আছে। এখানকার অধিবাসিদের খাবার পানির সন্ধানে অনেক দূর দুরান্ত পযন্ত যেতে হয়। সেচ কাজেও অসুবিধা পোহাতে হয় দুইটি কারনে। এক,অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে মাটির উপর অংশ ধুয়ে যায় ।দুই, জোরে বৃষ্টি হয় যা মাটি শোষণ করতে পারে না।
২৪ ঘণ্টাই বৃষ্টি হতে থাকে কি?; আমার এক ভারতিও বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম চেরাপুঞ্জি সমন্ধে জান? সে বলেছে- হ্যা জানি, ২৪ ঘণ্টাই বৃষ্টি হতে থাকে। এই কথা ঠিক না । সারা বছর বৃষ্টি হয় এটা ঠিক কিন্তু ২৪ ঘণ্টাই বৃষ্টি হতে থাকে এই কথা ঠিক না। ৭-৮ মাস খুব বেশি বৃষ্টি হয় বাকি সময়ও বৃষ্টি হয় কিন্তু কম। নভেম্বার থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময় কম বৃষ্টি হয় তাই একে ড্রাই সিজন বলে ।
এত বৃষ্টি কেন হয়?; এটাই আসল প্রশ্ন এত বৃষ্টি কেন হয়? এর ভাল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। আমি বুঝেছি কিন্তু বুঝাতে মনে হয় পারবো না। তবে এই জায়গাটির ভুত্বাত্বিক অবস্তানের জন্য এমন হয়। আগেই বলেছি বাংলাদেশের সমতল ভুমির ঠিক শেষ মাথায় যেখানে পাহাড় শুরু হয়েছে সেখানে পূর্ব খাসি পাহাড় অবস্তিত। সো, যা হয় সেটা হল বাংলাদেশের সমতলের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে বায়ু এবং মেঘ প্রবাহিত হয়ে ওঁই পাহাড়ে ধাক্কা খায় । পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে হঠাৎ উপরে উঠে যায়- অমরা জানি ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় তত তপমাত্রা কম। তেমনি মেঘ গুলো হঠাৎ উপরে উঠে ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং এর ভিতর যে জলীয়বাষ্প থাকে তা তরলে পরিণত হয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।
সর্ব শেষ মজার বিষয় হল এখানকার বেশিরভাগ বৃষ্টি হয় ভোর বেলা । তার কারন ও এই জায়গা টির অবস্থান এর জন্য।
রেফারেন্সঃ আমি আমার মত সাজিয়েছি কিন্তু সকল তথ্য উকি এবং আরও অন্য কিছু ওয়েব সাইট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:৪৬