গত জুলাই মাসে একটা পোষ্ট দিয়ে ছিলাম
“মাস প্রতি ফিক্সড রেটে বাংলাদেশে আনলিমিটেড মিনিট/টেক্সট ও ন্যূনতম ডেটার মোবাইল ফোন সার্ভিস কবে হবে?”
http://www.somewhereinblog.net/blog/Bangladesh_Zindabad/30248618
কিন্তু ১৩ই আগষ্টের পত্রিকা সমূহে যা দেখি তাতে যেভাবে আশা করছিলাম সেভাবে ব্যাপক হারে বিল কমায় নাই বিটিআরসি;
“চালু হচ্ছে অভিন্ন কলরেট, সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা, সর্বোচ্চ দুই টাকা”
http://www.ittefaq.com.bd/national/2018/08/13/167071.html
এখানে কেবল মাত্র Inter-Operator Tariff আন্ত:অপারেটর মাসুল কিছুটা তথা ১৫ পয়সা/মিনিট করে কমছে। অন্যদিকে একই অপারেটরের গ্রাহকদের মধ্যে এই রেট ২০ পয়সা বৃদ্ধি পাইছে। এতে যদিও একই ও ভিন্ন ভিন্ন অপারেটরদের কলরেট/মিনিট তথা মাসুল সমান হইলেও সামগ্রিক মোবাইল ব্যাবহার খরচ আশাব্যাঞ্জক ভাবে কমল না। ফলে দেখা যাচ্ছে যে পৃথিবীতে রেট কমলেও বাংলাদেশের গ্রাহকদের মোবাইল ফোনের ব্যাবাহারের খরচ বেড়ে গেছে;
“বিশ্বব্যাপী ভয়েস কলের মূল্য কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে”
https://www.amadershomoy.com/bn/2018/08/26/653774.htm
এখানে বিশেষ কিছু অংশ তুলে ধরা হইল:
***************
ডাটাভিত্তিক সেবা চালুর পর ভয়েস কলের মূল্য কমে যায়। টেলিযোগাযোগ সেবায় এটাই আন্তর্জাতিক চর্চা। বাংলাদেশেও থ্রিজি, ফোরজি সেবা চালুর পর ভয়েস কলের ট্যারিফ কমবে বলে ধারণা ছিল সবার। কিন্তু তা না কমে উল্টো বাড়ানো হয়েছে। ভয়েস কলে এতদিন সর্বনিম্ন ট্যারিফ ২৫ পয়সা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে ৪৫ পয়সা পুনর্নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে ভয়েস কলে গ্রাহককে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতির পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেশী ভারতেও থ্রিজি, ফোরজি সেবা চালুর পর ভয়েস কলের মূল্য একেবারে কমে গেছে। কোনো কোনো অপারেটর বিনামূল্যে ভয়েস কলের সুবিধাও দিচ্ছে। এটা শুরু হয়েছে মূলত রিলায়েন্স জিওর হাত ধরে। ২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই গ্রাহক টানতে বিনামূল্যের ভয়েস কল ও ডাটা সুবিধা দেয়া শুরু করে অপারেটরটি। জিওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অন্য অপারেটররা গ্রাহকদের বিনামূল্যের ভয়েস কলের সুযোগ দিচ্ছে। ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও একে টেলিকম আইনবহির্ভূত ও পরিপন্থী নয় বলে মনে করছে। গত বছর সে দেশের কয়েকটি সেলফোন অপারেটর ভয়েস কল সেবায় সর্বনিম্ন কলরেট বেঁধে দেয়ার আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ভয়েস কলের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেয়ার এখতিয়ার নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। প্রতিযোগিতা নিয়মের মধ্যে থেকে হচ্ছে কিনা, সেটা তদারকির জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে। কিন্তু বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের হাস্যাস্পদ অবস্থান তৈরি হয়েছে। সর্বোপরি দেশের বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।
বিশ্বের কোথাও অননেট-অফনেটে আলাদা কল রেট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো একটি অপারেটর বাজারের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। অফনেট-অননেট রাখলে সুবিধা পাবে এ ধরনের বড় অপারেটর। এতে প্রতিযোগিতার অবস্থা কখনই তৈরি হবে না। আমরা এমন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে পারি না, যেখানে প্রতিযোগিতা থাকবে না। ন্যূনতম কলরেট বেঁধে দেয়া না হলে সেটির অপব্যবহার হয়। (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার)।
অপারেটরদের কলপ্রতি ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালে অফনেট কল রেট কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি। ওই সময় তাতে অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। গত বছরের আগস্টে আবারো সেলফোন অপারেটরদের কল ট্যারিফসীমা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করে বিটিআরসি। এটি সংশোধন করে বর্তমান হারে প্রস্তাব করলে মন্ত্রণালয় তাতে অনুমোদন দেয়।
*********************
উপরে দৈনিক আমাদের সময়ের রিপোর্টের প্রথম প্যারায় বুঝা যায় যে বৃদ্ধি পাওয়া মোবাইল কল রেট একটি দেশকে ডিজিটাইজড করার পরিপন্থী।
পরের অংশে যেটা তুলে ধরছি তাতে দেখা গেছে যে ভারেত ৩/৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুতে ভয়েস কলের রেট বহুলাংশে কমে গেছে। কোন কোন মোবাইল কোম্পানী বিনা মূল্যে ভয়েস কল করতে দিচ্ছে। সম্ভবত মাস প্রতি ফিক্সড সাশ্রয়ী বিলে! তাতে ভারতের বাকি মোবাইল অপারেটররা এত কমে বা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে তাদের গ্রাহকদের সেবা দিতে না পারলেও সেটাকে টেলিযোগাযোগ আইনের পরিপন্থী নয় বলে ঘোষণা দিছে ভারতীয় টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (TRAI)। TRAI আরো বলছে যে এতে সকল মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগীতায় ভারতীয় গ্রাহকরা লাভবান হবে।
এরপর মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের কথায় বোঝা যায় যে সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোনের কারণে বাংলাদেশের অপারেটরর মধ্যে সুষ্ঠ তথা গ্রাহকবান্ধব প্রতিযোগীতা হচ্ছে না।
আর টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কোন কারণে ২০১৫ সালে রেট সাশ্রয়ী করার বিটিআরসির প্রস্তাব অনুমোদন করল না সেটা রহস্যজনক। এই বিষয়ে সংসদে বা কোথাও জনগণের কাছে জবাবদিহিতার বিষয়ে টেলিযোগযোগ মন্ত্রী কোন কিছু ব্যাখ্যা করছে বলে জানি না।
বলতেই হয় বহু বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মোবাইল ফোন গ্রাহকরা যতই আশা করুক না কেন সেটা বিশ্বের মানদন্ড অনুযায়ী কল রেট কমছে না। ইইউ ভূক্ত দেশুলোতে যেখানে মোবাইল ফোনের রোমিং চার্জ উঠিয়ে দিছে, একক ভাবে বিশাল দেশ ভারতে যেখানে মোবাইল কলরেট অত্যন্ত কম তখন বাংলাদেশে কল রেট বেশী এটা র্দূভাগ্য ছাড়া আর কি বলতে পারি? আর আমরা গ্রাহকরাও এই মোবাইল কলরেট বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সরকারের কাছে দাবী করব সেটারও কোন আশা সহজে দেখি না।