সেই ২০১০র দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপফুটবল টুর্নামেন্ট হতে ২০১৪র ব্রাজিল এবং সর্বশেষ ২০১৮র রাশিয়া বিশ্বকাপে একটা দারুণ মিল। যে তিনটা বিশ্বকাপেই শিরোপাধারীরা গ্রূপ পর্ব হতেই বিদায় নিছে। তবে ২০১০ ও ২০১৪তে ইটালী ও স্পেন অনেকটা বাজে ভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দিতাতে বাদ পড়লেও ২০১৪র চ্যাম্পিয়ান জার্মানরা অনেকটা লড়াই করেই বিদায় হয়।
যেকোন ফুটবল দলে গোলকিপার, রক্ষণভাগ, মধ্যমাঠ ও উইং যতই ভাল হউক না কেন যদি ফরওয়ার্ড-ষ্ট্রাইকার তথা শীর্ষ আক্রমণ ভাগ ফিনিশিং এ ব্যার্থ হয় তখন সেই দল বিশ্বকাপে সফল হতে পারে না। ২০১৪তে জার্মানীর প্রধান ষ্ট্রাইকার টমাস মুলার বিগত বছর দুই ধরে ভোতা হয়ে গেছে। তার বুন্দেসলিগার ক্লাব বায়ার্নের পক্ষেও সে খুব একটা ভাল করতে পারছে না। এরই ধারাবাহকতায় দেখা গেল ২০১৮র বিশ্বকাপে গোলতো দূর কোন রকম চাপ বা ত্রাস সৃষ্টি করে বিপক্ষ দলকে মুশকিলে ফেলতে পারে নাই। অন্যদিকে পোডলস্কি অবসরে আর মারিও গোমেজ সে বুড়া হয়ে গেছে। ৩২ বছর বয়সে তারপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট খেলা সম্ভব না অন্তত কোচ Joachim Löwর মতে । আর নতুন সেনশেসন টিমো ভেরনার পুরাই হতাশ করছে। গ্রূপের তিনটা ম্যাচে বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়েও সে একটাও গোল করতে পারে নাই। বরং কিছু সহজ সুযোগ পেয়েও সে অফ টার্গেটে শট করে। সেই তুলনায় মারিও গোমেজ বরাবরই তার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করছে। তার দীর্ঘ দেহ ও অভিজ্ঞতা যেকোন দলের জন্যই আতংকের। প্রথম খেলায় মেক্সিকোর সাথে তাকে ৬০ মিনিটের সময় তথা দ্বিতীয়ার্ধে নামায় কোচ Joachim Löw। ততক্ষণে ম্যাচ পুরোপুরি মেক্সিকোর নিয়ন্ত্রণে। আবার সুইডেনের সাথেও গোমেজ প্রথমার্ধে খেলে নাই। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর আগেই তাকে নামালে এক গোলে পিছিয়ে থাকা জার্মানী সুইডেনের সাথে সমতা আনে। সুইডরা দীর্ঘ দেহী হলেও যেই মারিও গোমেজ নামে তাকে দুই দুইজন সুইডিশ রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা মার্কিং করে রাখাতে সুইডেনের ডিফেন্স নড়বড়ে হয়ে পরে। ব্যাস এই সুযোগে ৪৮ মিনিটেই গোল শোধ করে মার্কো রয়েস। বস্তুত ঐ ম্যাচেই জার্মানী কিছুটা হলেও আত্নবিশ্বাস ফিরে পায়। ফলে তাদের তেজদীপ্ত ও বুদ্ধিমত্তার জোরে সুইডেনের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জেতে। কিন্তু গ্রূপের সর্বশেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে গোমেজকে শুরু থেকে নামাল না ইওয়াচিম লোয়ে। এটাই গোমেজের শেষ বিশ্বকাপ। এখন এক ব্যাক্তির বয়সের কথা চিন্তায় দলকে একটা ডু অর ডাই ম্যাচে এভাবে একটা ফুটবল পরাশক্তির দেশকে বিপর্যয়ে কেন ঠেল দিল কোচ সেটা ভেবে পাই না। জার্মানী যতই আক্রমণ করুক না কেন কাঙ্খিত গোল না পেলে আত্নবিশ্বাসে চিড় ধরে ও মনোবল দূর্বল হয়ে যায়। আর দক্ষিণ কোরিয়ার হারানোর কোন কিছু ছিল না। কারণ তারা ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ হতে বাদ পড়ছে। কাজেই এতটা মানসিক চাপ ও ভোতা ষ্ট্রাইকারদের শুরু থেকে নিয়ে সাফল্য অত্যন্ত দুরুহ। এবারও সেই মেক্সিকোর মত গোমেজকে ৫৮ মিনিটের সময় নামালে যথারীতি গোল করতে ব্যার্থ। উপরন্ত শেষের দিকে গোলকিপার ম্যানুয়েল নয়ার সহ ১১ জন জার্মান খোলোয়াড় কোরিয়ার অর্ধে তথা জুয়ার মত খেলেও শেষমেশ দুই গোলে হারতে হয়। অথচ যদি গোমেজকে দল ও দেশের স্বার্থে শুরু হতে নামিয়ে ঝুকি নিত তাইলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানো কঠিন ছিল না। জার্মানীর এভাবে বাদ পড়াতে দুঃখ পাইছি।
তারপরেও বলতে হয় জার্মানরা শুধুই মেধাবী নয় বরং অনেক পরিশ্রমী ও লড়াকু জাতি। সেই ১৯৮২ হতে ২০১৪র ফুটবল বিশ্বকাপে কখনই কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বাদ পড়ে নাই। এই হিসেব ধরলে বলতেই হবে ২০১৮র বিশ্বকাপের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে জার্মান জাতীয় দল আবার দারুণ ফুটবল খেলা উপহার দিবে বিশ্বকে!