এক যূগ আগে দেশে থাকতে বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানী কতৃক জারের ফিল্টার বা মিনারেল ওয়াটার তথা পানিকে অনেকটাই নিরাপদ ভাবতাম। তবে এই ধারণায় কিছুটা হলেও ধাক্কা খাই। এক ফার্মেসীর দোকানে গেলে সেই দোকানীর সাথে আলাপ করতেছিল সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক Novartis ফার্মার একজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ! সেই রিপ্রেজেন্টেটিভের থেকে জানলাম যে বাংলাদেশে এক লিটার সাধারণ পানিকে কথিত পিউর মিনারেল ওয়াটার বা ষ্ট্যান্ডার্ড করতে গেলে খরচ পড়বে ৮০ টাকা/লিটার। সে বলল যে তারচেয়ে বরং বাসাবাড়ীর সাপ্লাইয়ের পানি বেশী ময়লা না হলে তা ছেকে হাড়িতে সিদ্ধ করে পানি পানই অনেক নিরাপদ। তাই তার সাথে আমি ও দোকানী একমত হলাম যে বিভিন্ন কোম্পানীর সাপ্লাইকৃত পানি (বিএসটিআই অনুমোদিত) পরিস্কার ও ক্ষতিকর ব্যাক্টিরিয়া কম তথা নিরাপদ হইলেও সেটা পুরোপুরি মিনারেল ওয়াটার না। আর অনেক কোম্পানী আছে যাদের আদৌ BSTIর অনুমোদনতো নাই বরং এর ধারও ধারে না। পানি একটু পরিস্কার এবং র্দূগন্ধ না থাকলেই সরাসরি ওয়াসার সাপ্লাইয়ের পানি জার বা বোতলজাত করে। এখানে পানিতে কি পরিমাণ ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া বা জীবাণু আছে তার কোনও পরীক্ষাই এই সকল অনুমোদনহীন কোম্পান গুলি করে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা জারের পানি নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে(২০১৭) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) গবেষণা করে;
"সেখানে দেখা যায়, ঢাকার বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা শতকরা ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু ‘কলিফর্ম’ আছে। সংগ্রহ করা নমুনাগুলোয় মোট কলিফর্মের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে যথাক্রমে ১৭ ও ১৬০০ এমপিএন (মোস্ট প্রবাবল নম্বর) এবং ফিকাল কলিফর্মের (মলের জীবাণু) ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল যথাক্রমে ১১ ও ২৪০ এমপিএন।"
জারের পানির কতটা জানি?
http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1454721
পরে র্যাব ও BSTIর অভিযানে মোট ৪৮টি কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হয় যাদের বোতলজাতকৃত পানিতে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক জীবাণুর পরিমাণ বেশী। এর মধ্যে ৪৪টির কোন অনুমোদন ছিল না আর বাকী ৪টা নিবন্ধিত ছিল।
বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরা, রাস্তার টঙ, অস্থায়ী , ভ্রাম্যমাণ দোকান গুলোতে যেন ফিল্টার পানি বিক্রির নামে BSTIর অনুমোদনহীন কোন কোম্পানীর জার বা বোতল না রাখে তার জন্য আইন করা ও দোকানদারদের জানিয়ে দেওয়া। ভবিষ্যতে কোন অনুমোদন পানির জার পাওয়া গেলে দোকানীকে জেল ও অর্থদন্ডের মুখোমুখি হতে হবে। আর বাদবাকী বেসরকারী অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ষ্টাফরা আশা করি সতর্ক থাকবেন। এটা প্রাথমিক উপায় যে যতটা সম্ভব নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি কিনে ঠকে বিপদে পড়তে না হয়।
দ্বিতীয় এবং আরো ভাল উপায় হল সংশ্লিষ্ট বেসরকারী কোম্পানী গুলিকে BSTIর সরবারাহকৃত মানদন্ডতো মানতেই হবে সেই সাথে বোতলের গায়ে একটা কাগজ বা ষ্টীকার জুড়ে দিতে হবে। সেখানে BSTIর মানদন্ড উল্লেখ সহ Optical mark recognition (OMR) বা Barcode সিরিয়াল নাম্বার থাকবে। এই বারকোডেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানীকে পানির উপাদান, বিশুদ্ধ-নিরাপদ হওয়ার নিশ্চয়তা সহ, উৎপাদন ও বোতলজাতের তারিখ, কতদিনের মেয়াদ তা রেকর্ড করতে হবে। যদি BSTIর কম্পিউটার বা সার্ভারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী গুলি তথ্য সরবারাহ করে তাইলে সবচেয়ে ভাল ও কার্যকর ব্যাবস্থা থাকবে। তখন শুধু পুলিশ, র্যাব, BSTI ও ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিষ্ট্রেরাই নন বরং সাধারণ মানুষ যারা পানি পানকারী তারাও স্মার্ট মোবাইল ফোন সেট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে (BSTIর সার্ভারের থেকে) এই বারকোড স্ক্যান করে জারের মধ্যকার পানির বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে পারে। এই বিষয়ে সরকারের ইচ্ছা থাকলে BSTI ও সেই সাথে BUETর যৌথভাবে উদ্যোগ নিলে সার্ভার ও একটি এপ্লিকেশন ভিত্তিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুধু পানিই না বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য ও অন্যান্য ব্যাবহার্য পণ্য সমন্ধেও মানুষ অনেকটাই অবগত থাকতে পারে। এতে করে ফিল্টার পানি সরবারাহ সহ তেল, মসলা, দুধ সহ বিভিন্ন পণ্যের কোম্পানী গুলা আরো সততায় বাধ্য হবে যদিও সময়ে গোপনে বা অভিযানে টেষ্ট করে কোম্পানী গুলোর পণ্যের মানের নিরাপদ ও বিশুদ্ধতা সমন্ধে নিশ্চিত হতে হবে BSTI ও সরকারকে।
এই প্রযুক্তিগত বিষয়ে সরকারী পদক্ষেপ নিলে আর কোন অনিবন্ধিত বা ভুইফোড় কোম্পানীর পক্ষে অনিরাপদ ও খারাপ পানি কিংবা অন্য নিম্নমানের, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য সরবারাহও বন্ধ হয়ে যাবে। বিষয়টা অনেকটা কঠিন ও রাতারাতি প্রবর্তন না করা গেলেও মোটেও অসম্ভব না!
অফটপিক: বৃটিশ ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানী GSK তারা অতি সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের Novartis ফার্মাকে কিনে নিছে;
GSK buys out Novartis in $13 billion consumer healthcare shake-up
https://www.reuters.com/article/us-novartis-gsk/gsk-buys-out-novartis-in-13-billion-consumer-healthcare-shake-up-idUSKBN1H30FK