২০০৯ সালে Tier-4 ষ্টাডি ভিসায় প্রায় বিনা ইন্টারভিউতেই ৯৯% ছাত্রই বৃটেনে আসতে পেরেছিল। এই খুশী শুরু হয় যেদিন ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিনোভায় যক্ষা মূক্ত থাকার সার্টিফিকেট নিতে যায়। মূলত এটার জন্যই অনেককে মাসাধিককাল অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তারপর যেদিন এই সার্টিফিকেট আনতে যাই তরুণ বয়সের ছাত্ররা সেকি আনন্দ, মেডিনোভা লাউঞ্জে চেয়ারে বসে বন্ধুরা একে অপরের সাথে খুশীতে কিলাকিলি ধস্তাধস্তি করছে। কারণ বৃটেন যাওয়ার অর্ধেকেরও বেশী ভিসাতো এখানেই। মাসটা ছিল সেপ্টেম্বর মাস ২০০৯। ইতিমধ্যেই খবর যে লন্ডনে চাকুরী না পেয়ে অনেকে মসজিদ, পার্কে আশ্রয় নিয়েছে। পূর্বে যেখানে দৈনিক ৫-১০ জন বৃটেনে ষ্টুডেন্ট ভিসা পেত সেখানে টিয়ার ফোর চালু হলে একদিনেই শতাধিকেরও বেশী ছাত্র ভিসা পেয়ে যাচ্ছিল। স্রেফ একাডেমিক কাগজপত্র, যক্ষা মুক্তর সার্টিফিকেট ও ব্যাংক সলভেন্সি ঠিক থাকলেই হল, TOEFLবা IELTSএরও দরকার নাই। তাই ঐদিন মেডিনোভায় পোলাপানের আনন্দ দেখে ভাবছিলাম যে আমাদের লন্ডনে পৌছলে কি হবে, এই খুশী থাকবে কি? অনেকে সায়মন সেন্টার গুলশান-১ এ ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার জন্য সেই আগের দিন রাত ১১টা হতে মানুষ লাইন দিয়ে রাখত ভাই, আত্নীয় বা বন্ধুর মাধ্যমে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এত গণহারে ও সহজে পশ্চিমা কোন দেশে ষ্টুডেন্ট ভিসা কেউ পায় নি তাও আবার ভীষণ ভাবে দূর্বল ইংরেজীতে। ভিসা পেয়ে আমরা বেশীর ভাগই বাংলাদেশ বিমানে না যেয়ে অন্যান্য এয়ারলাইন্সে বৃটেন আসি। আমি যদিও বা.বিতেই আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু কনসালটেন্সি এডুকেশন ফার্ম বলল সময় বেশী নেই ক্লাস শুরুর তাই হয় কাতার, ইতিহাদ, গালফ, কুয়েত, এমিরাটসে যান। শেষমেশ তাই হল। ঢাকা এয়ারপোর্টে কারোই কোন সমস্যা হল না। কিন্তু যেই ট্রানজিট রুটে যারা দোহা, আবুধাবী, মানামা, দুবাই পৌছায় তখনি যারা জীবনে কোনদিন বিদেশে পা রাখেনি তখনই শুরু হয় বিপত্তি। না জানে ইংরেজী, না আরবি না হিন্দি-উর্দূ। ফলে ট্রানজিট রুটে লন্ডনগামী প্লেন ধরতে কোন টার্মিনালের ও গেট তা খুজে পেতে তাদেরকে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়। তার উপর কড়া চেকিং। আলগা ধাতব কোন পদার্থতো বটেই পড়নের বেল্ট এমনকি জুতায়ও কোন ধাতব কিছু থাকলেও তা স্ক্যানারে দিয়ে পার হতে হয়েছে। এতেই পোলাপানের সহ্য হয় না সবাই কখন লন্ডনের প্লেনে উঠবে তার জন্য উদগ্রীব। আরবী গার্ডরা বলে ওয়েট ওয়েট হ্যাভ প্যাসেন্স কিছুই বুঝে না তারা তারপর রাগে বলে উঠল সাবর, আমি চেকিং গেট পার হয়ে পিছনে ওদেরকে বললাম আপনারা সবুর করা কথাটাও কি বুঝেন না? এরপর যেন একটু হুশ হল। তারপর লন্ডনের হিথ্রো পৌছে তো আসল চেহাড়া বেড়িয়ে পরল। ইমিগ্রেশন অফিসাররা বেশীর ভাগই যেন উগ্র রাগ চটা। আরকি যখন ইংরেজী জিজ্ঞাসা করল Why did you want to study in the UK? ব্যাস তাদের বেশীর ভাগেরই দাত ভেঙে ডায়রিয়া হওয়ার অবস্থা। ব্যা...উহ হা করে উঠলে ইমিগ্রেশন অফিসাররা আরো রেগে যায়। তখন তারা বলে এই ধরণের দূর্বল ইংরেজী জ্ঞান নিয়ে এ দেশে এসেছ? কয়েকজন কে এন্ট্রি সিল না দিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেছিল। তবে আমার ক্ষেত্রে মাত্র ৩মিনিটে ৪টি প্রশ্ন করেই ই.অফিসার আমাকে এন্ট্রি করালেন। দোহা হতে প্লেনে কথা হয়েছিল মোট আমরা ৪ জন এক সাথে লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে যাব টিউব দিয়ে। কিন্তু এক মগা এতই ইংরেজীতে দূর্বল তার জন্য হিথ্রোতে ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করেও কাজ হল না। ই. অফিসাররা তাকে বসিয়েই রাখল। তারপর যথারীতি ক্লাস শুরু হল ইংরেজী ফাউন্ডেশন কোর্সের। ক্লাসে ২৫-৩০ জন ছাত্রের মধ্যে হাতে গণা আমরা কয়েকজনই একটু ভাল ইংরেজী জানি। পোলিশ, চেক, হাঙ্গেরিয়ান শিক্ষকই বেশী। বেশীর ভাগ সময়ই আমরা তাদেরকে ম্যাডামরা কিছু ইংরেজী বললে ইন্টারপ্রিটারের কাজ করতাম। এরই মধ্যে ঢাকার শনি আখড়ার এক ছেলের নাম টুটুল বয়স ২৩-২৪। স্থানীয় ভাবে তুখোড় ক্রিকেটার হলে কি হবে ইংরেজী বলতেই পারে না। তবুও কিভাবে যেন ফাষ্টফুডের দোকানে কাজ পেয়ে গেল। সপ্তাহে ৬দিন তাও সন্ধ্যায় ৬টা হতে ডিউটি শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত দোকানে কাজ করতে হত। আমাদের ক্লাস সোম-মঙ্গল দুইদিন ১৮ ঘন্টা হত। সে সোমবার দিন সকাল ৯টা বা সাড়ে ৯টায় এসে ক্লাশের পিছনে ঘুমিয়ে থাকলে ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করত কি ব্যাপার ও ঘুমাচ্ছে কেন? আমরা বলতাম সারা রাত ডিউটি করে কিনা। ম্যাডাম বলল ঠিক আছে থাক কারণ লন্ডনের বর্তমান অবস্থা তার জানা আছে। আর কলেজ কর্তৃপক্ষও বাংলাদেশী হওয়ায় তারাও কিছু বলত না। আবার মঙ্গলবারে ক্লাস বিকাল ৫:৩০টায় শেষ হলেও সে চালাকি করে ৪টার সময়েই ভাগত কারণ তার চাকুরী। তো প্রথম ২/৩ মাস সে ইংরেজী ঐ ব্যা.আহ..উহই করত। কিন্তু যেভাবেই হৌক লন্ডন শহড়, পরিবেশ এবং ফাষ্টফুডের দোকানে ক্রেতা ইংরেজদের সাথে লেনদেন করতে করতে সে অনেকটাই ইংরেজী আয়ত্ব করল। শুধু তাই নয় আগের ৬ দিন ডিউটির বদলে ৫দিন ডিউটি হল কিন্তু বেতন সমান থাকল কারণ সে ভাল কাজ শিখেছে। তো এখন সে আর রোববার রাতে ডিউটি করে না এবং সোমবারে এসে ঘুমায়ও না। এমনই ভাবে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাস একদিন সে সিদ্ধান্ত নিল যে আজকে পোলিশ ম্যাডামের সামনে থাকার জন্য ক্লাসের পেছনের সারিতে না বসে সামনে বসবে। তো ম্যাডাম যা বাসায় পড়তে দিয়েছিল আগের ক্লাশে সে প্রায় সবই পারল। এতদিন সবাই আমরা ওর দূর্বলতার জন্য হাসাহাসিও করেছি কারণ অর্ধেক ইংলিশ ও অর্ধেক বাংলা মিলে পাচমেশালী কথাবার্তায় না হেসে উপায় ছিল না। এমনও হয়েছে হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। তো আজকে যখন ও কিছুটা উন্নতি তাতেও আমাদের সবারই ওর অতীত স্মৃতি মনে করে হাসাহাসি করছিলাম। হঠাৎ ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করল বইয়ের বাইরে তুমি কনভারসেশন আরকি কিছু ইংরেজীতে বলত। এই যখন বলল তো ওর পাশে লোপা নামে একটি মেয়ে বসেছিল। ওর চেয়ে কয়েক বছরের বড়ই হবে। লোপা সহ আমরা সবাই ম্যাডামের এ কথা শুনে টুটুলের দিকে চেয়ে হাসছিলাম যে দেখি ব্যাটা আজকে কি বলে। তো টুটুল লোপার গলার মাঝখানে একটু দূর থেকেই তর্জনী দিয়ে তার দাতের দিকে নির্দেশ করে বলল ম্যাডাম! ম্যাডাম She got very big teeths...আসলে হবে teeth। আমরা সব ছাত্র-ছাত্রী এটা বুঝলেও ম্যাডাম বুঝলো অন্যাটা। ম্যাডাম ওর কথাটা শুনে সাথে সাথে বলে উঠল Oh! Lopa Smack him! মানে ঘুসি মারো ওকে। যদিও কৃত্রিম রাগে এবং দুষ্টুমি হাসি হেসে। ম্যাডাম মনে করেছিল যে সে দন্ত সমূহ teeth না বলে লোপার স্তন সমূহ tits বুঝিয়েছিল । আমি এই বিষয়টা বুঝলেও লোপা ও টুটুল সহ সবাই একটু অবাক হল। আর আমি এর জন্য আরো জোরে হাসতে লাগলাম। তখন লোপা ও টুটুল সহ সবাই জিজ্ঞাসা করল ভাইয়া ব্যাপারটা কি? তখন আমি বললাম এটা স্রেফ ছাত্রদের বলব ছাত্রীদের নয় । পরে সব পোলাপানরে ঘটনা খুলে বললে তারা হাসতে হাসতে দম বেড়িয়ে যাবার অবস্থা। তাদের এও বললাম এই ইউরোপীয়দের কাছে এমন খোলামেলা কথাবার্তা তারা ফান তথা মজা হিসেবেই নেয়
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১১ দুপুর ২:৪৪