বর্তমান মহাজোট সরকারের অনেকেই বার বার বলছে যে টিপাই বাধ নিয়ে নাকি বিএনপি কোন সময় আপত্তি জানায় নি। যা চরম মিথ্যা কথা। আসল সত্য হল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার সময়ই ১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম টিপাই বাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষ হতে সরকারী ভাবে আপত্তি জানানো হয়। এর পর ২০০৩ ভারতের কেন্দ্র সরকার মণিপুর রাজ্য সরকারের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষর করে টিপাই বাধ প্রকল্পের জন্য। ঐ সময়ে ভারত বাংলাদেশ কে পুনরায় টিপাই মুখ বাধের ব্যাপারে জানালে সে বারও বাংলাদেশ সরকার আপত্তি জানায়। যার জবাবে ভারত বলে টিপাই মুখ বাধ নির্মিত হলেও বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না তা মৌখিক ভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়। ঠিক যেমন ন্যাম সম্মেলন-২০০৯ এ কায়রো তে মানমোহন সিং হাসিনা কে আশ্বাস দেন। ২০০৩ সালে টিপাই বাধের বিভিন্ন পরিবেশ প্রতিক্রিয়া সমীক্ষা (ইআইএ) চালালেও ভারত বিষয় টি সম্পূর্ণ গোপন রাখে তথা বাংলাদেশ কে কিছুই জানায় নি। আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে বাংলাদেশ কে বিষয় টি জানানো ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভারত সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। এখন মহাজোট সরকার টিপাই বাধের ব্যাপারে সঠিক পরিবেশ ভিত্তিক এবং পানি প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত দাবী করবে কি উল্টো বিএনপি কে গাল মন্দ করছে। ইতিমধ্যে আলীগের সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, খালেদা জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলন কে বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন। শুধু রাজ্জাক কেন ১৯৭২ সাল থেকেই মুজিব সরকার বলে আসছে যে টিপাই বাধ বাংলাদেশের উপকারে আসবে। ঐ সময় হতেই আলীগ টিপাই বাধ নির্মাণ কে বৈধতা দিয়ে আসছে। তাই ভারত যেন নির্বিঘ্নে টিপাই বাধ নির্মাণ করতে পারে সে জন্য তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে কোন পানি-নদী বিশেষজ্ঞ রাখে নি। তাদের নীতি হচ্ছে অফেন্স ইজ দ্যা বেষ্ট ডিফেন্স। তারা আসলে বৈধতা দেওয়ার জন্যেই উল্টো বিএনপি কে দোষারোপ করছে। দৈনিক সমকালের ২৯শে জুলাই ২০০৯ এর "ভারত আন্তর্জাতিক রীতি লঙ্ঘন করছে বাংলাদেশে চলছে রাজনীতি" নামক শিরোণামে টিপাই বাধ নিয়ে এক রিপোর্টের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হল;
{টিপাইমুখ ড্যামের ইতিহাস : আসামের কাছার অঞ্চলের মৌসুমি বন্যা প্রতিরোধের জন্য ১৯৫৫ সালে বরাক নদীর ওপর ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভারত সরকার। তবে আসামের কাছারে বন্যা প্রতিরোধের নামে মণিপুরের ১৬টি গ্রাম পুরোপুরি ডুবিয়ে দেওয়া আরও ৫১টি গ্রামকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিকল্পনা মেনে নেয়নি মণিপুরের মানুষ। এ কারণে বরাকের ওপর বাঁধ নির্মাণের স্থান বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৫৫ সালে ময়নাধর, ১৯৬৪ সালে নারায়ণধর, তারপর ভুবন্দর, ১৯৮০ সালের দশকে তুইভাই এবং বরাক নদীর সঙ্গমস্থলের পাঁচশ' মিটার ভাটিতে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র ফ্লাড কন্ট্রোল বোর্ড বা বিএফসিবির আওতায় থাকলেও ১৯৮৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ১৯৯৯ সালে সেটি নর্থ ইস্টার্ন ইলেক্ট্রিক পাওয়ার করপোরেশন বা নেপকোর হাতে দিয়ে দেওয়া হয়। তখন ড্যামটির নাম টিপাইমুখ হাই ড্যাম থেকে পরিবর্তন করে টিপাইমুখ পাওয়ার প্রজেক্ট করা হয়।
নেপকো ড্যাম নির্মাণের আগে স্থানীয়ভাবে সামাজিক প্রতিক্রিয়া সমীক্ষা (এসআইএ) ও পরিবেশ প্রতিক্রিয়া সমীক্ষা (ইআইএ), ভূমিকম্প ঝুঁকিসহ সব ধরনের সমীক্ষা শেষ করে। তবে ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা এ মাসের মাঝামাঝি জানায়, নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশনের পরিবর্তে এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন বা এনএইচপিসিকে। প্রকল্পটি এখন এনএইচপিসি (৬৯ শতাংশ), শিমলাভিত্তিক সাতলুজ জলবিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড (২৬ শতাংশ) ও মণিপুর সরকার (৫ শতাংশ) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
ড্যাম নিয়ে আলোচনা : যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশনের প্রথম বৈঠকেই এই ড্যামের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যৌথ নদী কমিশনের ১৩টি বৈঠকের প্রতিটিতেই ড্যামের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে। ওই সময় উজান থেকে বরাক নদীর পানি ধেয়ে আসার ফলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় প্রতি বছর আমন ফসলের ক্ষতি হতো। আমন রক্ষার কথা চিন্তা করে ওই সময় সরকার বরাক নদীতে ড্যাম দেওয়ার বিষয়ে বিরোধিতা করেনি।
সূত্র জানায়, ১৯৭৮ সালে প্রথম এই প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়। এরপর থেকে বারবার দুই দেশের বিশেষজ্ঞকে দিয়ে যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও ভারত তাতে রাজি হয়নি। ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির দুই মেয়াদের শাসনামলে টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। এর জবাবে ভারত সরকার বলেছে বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করবে না। সম্প্রতি মিসরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বৈঠকেও এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।}
Click This Link
স্পষ্টতই এখানে আওয়ামী-বাকশালী গং নিজেদের দোষ লুকিয়ে বিএনপির বাংলাদেশের স্বার্থের পদক্ষেপ কে অপবাদ দিচ্ছে। আজকে সমকালের এই রিপোর্ট তাদের দালালী-জুচ্চুরি-জালিয়াতি ফাস করে দিয়েছে। এখন যানা গেল যে আলীগের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশ কে চির জীবন ভারতের তাবেদার রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত করা। বিএনপি বাংলাদেশের স্বার্থে কোন পদক্ষেপ যেন নিতে না পারে সে জন্যেই ষড়যন্ত্র করে তাকে এবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয় নি। কারণ আমরা বাংলাদেশের সিংভাগ জনগণ যতই টিপাই বাধের বিরোধীতা করি না কেন তা আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্ব পাবে না বরং মহাজোট সরকারের দালালী করে টিপাই বাধের বৈধতা দিলে সেটাই আন্তর্জাতিক মহলেও বৈধতা পাবে। কারণ ভারত তো বটেই সারা বিশ্ব বলবে যে মহাজোট সরকারের কথা মানে সমগ্র বাংলাদেশের কথা। এটাই হল রুড় বাস্তবতা।