কিছু মানুষ আছে যারা স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে ভোগেন। তাদের সাথে বসবাস বিশেষকরে ঘুমানো যে কী কঠিন! আমার এক খালু আছেন। রাতে ঘুমিয়ে নাক ডাকান। খালা ভীষণ বিরক্ত হন, খালু বেশিরভাগ সময় আলাদা ঘুমান। কিন্তু কোনও গেস্ট চলে এলে তখন তাদের একসাথেই ঘুমাতে হয়। কিন্তু এতো বড় জ্বালা কী করে সইবেন খালা? তাই তিনি বুদ্ধি করলেন খালুকে দিয়ে কিছু কষ্ট করিয়ে নেবেন। যেমন মশারি টাঙিয়ে নেওয়া, বিছানা ঝারা, লাইট বন্ধ করা, ফ্যান বাড়ানো, মশা মারা ইত্যাদি.....
ইদানীং একটা ঝামেলা হয়েগেছে। খালার শ্বাশুড়ী অসুস্থ, এসছেন ছেলের কাছে থাকতে। একটা রুম, মানে গেস্ট রুমটা চলেগেলো দখলে! এটা নিয়েও খালার খেদ কম নয়। তবে এবারও তাকে কিছু বাড়তি সুবিধার বিনিময়ে সব মেনে নিতে হলো। আসলে মেয়ে হয়ে জন্মানোর এই এক জ্বালা! সবকিছুই মেনে নিতে হয়।....
এবার তিনি খালুর কাছ থেকে যে ফ্যাসিলিটিটা নিলেন সেটি হলো বাসার কাপড়-চোপরগুলো খালু কেচে দেবে। মায়ের সব খেদমত খালাই করবেন শুধু তার ইউরিনের ক্যানটা আর মায়ের নোংড়া করা কাথা-কাপড়গুলো খালু নিজে ধুবেন। অবশ্য বাসায় গিয়ে আমরা এও দেখলাম যে মায়ের পানটাও খালু ধুইয়ে দিচ্ছেন।....
মাতৃভক্ত এই মানুষটার এই একটি দিক ছাড়া আর কোনও দিক ভালো খুঁজে পাওয়া কঠিন। লুকিয়ে বিড়িফুকানো থেকে শুরু করে একআধটু ঘুষ খাওয়ার অভ্যেসও আছে। ওস্ বখশিশ না নিলে নাকি চাকরিই থাকে না। ব্যাংকের নিয়ম পার্টির সাথে ভালো ব্যবহার করা। তাদেরকে নিরাশ করলে রেপুটেশন বা আইসিআর খারাপ হয়ে যায়। খালা যখন এসব বলে আমাদের সাথে তখন মনে হয় যে চাকরিটা সে নিজেই করছে। অফিসের আরও কতো জটিল বিষয় নিয়ে তার ভাবনা!....
খালুর আরেকটি ভালোমন্দ দিক হলো তিনি তার সন্তানদেরকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন কিন্ত অন্য কারও সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা নেই। এমনকি এমনও হয়েছে খালু কলা আপেল এনে ফ্রিজে রাখছেন, লুকিয়ে বেরকরে ছেলেমেয়েকে খাওয়াচ্ছেন অন্য কাউকে দিতে তার মন টলে না।...খালা যদি বলে তুমি কেমন অমুককে দিলে না?
আরে ওরাতো সবসবময় খায়, এখন খাবে না।
তুমি দিছিলা?
দিলে দিবো...তুমি তোমার কাজ শেষ করো।
একবার আমরা তখন খুব ছোট। খালু আবার আর যার সাথেই যা করুক আমাদের সঙ্গে বেশ ভালো ব্যবহার করে। আমরা যাওয়াতে খালু খুব খুশি। সেদিন ধরেই রাখলো। রাতে ঘটলো আসল ঘটনা। খালু আমাদের তাড়া করে ঘুমাতে পাঠালেন। নিজেই মশারী টাঙিয়ে দিলেন, লেপ গায় দিয়ে দিলেন, লাইট বন্ধকরে দিয়ে গেলেন।.....
কিন্তু ঘুম আমাদের পাচ্ছিল না। আরও কিছুক্ষণ টি.ভি দেখতে পারলে ভালো হতো। বেড়াতে এসে শাসন ভাললাগে না। খালুর ভয়ে লাইট জ্বালাতে পারছিলাম না। খাটের নীচে একটা হ্যারিকেন টিমটিম করে জ্বলে, যদি রাতে কারেন্ট চলে যায় তখন কাজে লাগবে।
ওইটাকে একটু বাড়িয়ে আমরা লুডু খেলতে বসলাম। এ্যানি আমার খালাতবোন বড়টা ওর বাবার এসব আচরণে খুবই বিরক্ত। আমাদের খেলা যখন জমে গেছে তখন একটা কান্নার শব্দ শুনলাম! খুব অবাক হয়ে তাকালাম বোনটার দিকে ও বলে কিছু না। এটা ঘুমানোর আগে আবহ সঙ্গীত বাজে।
প্রতি রাতে?
প্রায় প্রতি রাতে
কেন?
আব্বু রাতে নাক ডাকে, আম্মু ঘুমাতে না পেরে তখন বসে বসে কাঁদে.....
সামান্য স্লিপঅ্যাপনিয়া রোগটার জন্য এভাবে একটা সংসার অশান্তিতে জ্বলছে?
খালুকে অনেকে বলেছে ডাক্তার দেখাতে, কিন্তু সে যাবে না। যদি অপারেশন করে!
যদি অনেক টাকা খরচ হয়।.......
গত এপ্রিলে আমার সেই খালু ......
(সমাপ্ত)