একবার আমেরিকার এক মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টএর দোকানে অত্যন্ত সাধারণ পোশাক পরা সাদামাটা চেহারার এক বাঙালী ভদ্রলোক ঢুকলেন। বিশাল দোকান , অজস্র বাদ্যযন্ত্র সাজানো আছে।
ভদ্রলোক ঘুরে ঘুরে দেখছেন। দোকানের সেলস গার্ল গুলো তেমন আমল দিলো না। শুধু শুধু টাইম পাস করতে অনেকেই তো আসে। তা , দোকানে ঘুরতে ঘুরতে তাঁর চোখে পড়লো দেওয়ালের অনেকটা ওপরে এক শো কেসের মধ্যে রাখা বিশাল এক সেতারের ওপর।
তিনি কাছে দাঁড়ানো এক সেলস গার্ল কে বললেন তিনি সেটি কিনতে আগ্রহী কিন্তু তার আগে সেটি বাজিয়ে দেখতে চান। সেলস গার্ল প্রথমে রাজী হচ্ছিল না -একে তো বিশাল ওই সেতার শো কেস থেকে নামানো ইত্যাদির ঝামেলা এবং সে নিশ্চিত ছিল ভদ্রলোক ওটি বাজাতে পারবেন না এবং কিনবেন না -শুধু শুধু সময় নষ্ট।
কিন্তু ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা -তাঁর অনুরোধ -উপরোধ শুনে দোকানের মালিক স্বয়ং সেখানে ছুটে এলেন। মালিকের কথায় সেতারটা নামানো হলো। লস -এঞ্জেলেসের সেই বিশাল দোকানে অত্যন্ত সাধারণ পোশাক পড়া সেই মানুষটি সেই বিশাল সেতার বাজাতে শুরু করলেন।
পরবর্তী আধ-ঘন্টা পুরো দোকানের সমস্ত কর্মচারী এবং ক্রেতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো বিহ্বল হয়ে সেই সেতার বাজানো শুনলেন। বাজানো শেষ হলে সেলস গার্ল মেয়েটি তাঁর কাছে ছুটে এলো ,তার চোখে তখন জল। দোকানের মালিক ডেভিড বললো -আমি কিছু সংগীত বুঝি , এই বিশাল সেতার খুব কম লোকই এভাবে বাজাতে পারে --আমার কাছে এটা এক ঐশ্বরীয় অনুভূতি।
সেই ভদ্রলোক বললেন বাংলায় এই সেতারটাকে বলে সুর বাহার --আমি এটা কিনতে চাই , এর মূল্য কত ?
দোকানের মালিক বললেন এখন থেকে এই সেতার আপনার , কিন্তু এটা আপনাকে বিক্রী করবো না , এটা আমি আপনাকে উপহার দিলাম।
ভদ্রলোক পরে সেই সেতার নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। দুটো গান কম্পোজ করলেন আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা সেতারটা দিয়ে।
একটা হিন্দী , অন্যটা বাংলা।
হিন্দীটা হলো : ও সজনা বরখা বাহার আয়ি , রস কি পুহার লায়ি ,আঁখিয়ো মে পেয়ার লায়ি ......
বাংলাটা :না যেও না....... রজনী এখনও বাকী..আরও কিছু দিতে বাকী বলে রাত জাগা পাখি .. না যেও না...আমি যে তোমারি শুধু জীবনে মরণে ......
লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে চিরকালীন হয়ে রইলো এই দুটো গান।
ওহ , হ্যাঁ , অত্যন্ত সাধারণ চেহারার সেই ভদ্রলোক হলেন বাংলা আধুনিক গানের অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক , গীতিকার এবং সুরকার সলিল চৌধুরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৯