আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগের ঘটনা।
গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস সন্দর্শনে এসেছে এক যুবক। প্রাজ্ঞ সক্রেটিসএর কাছ থেকে সে শিখতে চায় জ্ঞান ,বিদ্যা এবং বিজ্ঞতা। আধুনিক ইংরাজিতে যাকে বলে wisdom ।
২৫০০ বছর আগে অবশ্য আজকের ইংরেজি ভাষা অথবা উইজডম শব্দ আবিষ্কৃত হয় নি। গ্রিক ভাষায় হয়তো এটাকে অন্য কোন ভাবে প্রকাশ করা হত। যাইহোক সক্রেটিস রাজি নন ,কিন্তু যুবক নাছোড়বান্দা। শিক্ষার্থী নির্বাচনের ব্যাপারে সক্রেটিস বড়ই কঠিন নির্বাচক।
প্লেটোর মত ছাত্রের গুরু তিনি। অন্য কোন উপায় না দেখে যুবক কে গাল -গল্পে ভুলিয়ে নিয়ে গেলেন এক জলাশয়ের ধারে । সবলে চুবিয়ে ধরলেন যুবকের মাথা । যুবকটি প্রানপনে চেষ্টা করলো সক্রেটিসএর হাত ছাড়িয়ে মাথা তুলে শ্বাস নেওয়ার। আরো কিছুক্ষন হাঁস -ফাস করার পর অর্ধোন্মৃত যুবকটি নিজেকে সক্রেটিসএর কবল মুক্ত করতে পারল এবং ক্রোধভরে তার প্রতি এই ব্যবহারের কারণ জিজ্ঞাসা করলো।
তাদের কথোপকথন ছিল অনেকটা এই রকম :
--বৎস , আমি যখন তোমার মাথা জলে চুবিয়ে ধরেছিলাম তখন তুমি কোন জিনিসটির সবচেয়ে বেশী প্রত্যাশী ছিলে ?
--বাতাস। শ্বাস গ্রহণ।
--যখন তোমার জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা শ্বাস গ্রহণের ইচ্ছার মত তীব্র হবে তখন তুমি জ্ঞান ,বিদ্যা অর্জন করতে পারবে।
তুমি কি তৈরি আছ ?
যুবকটি মাথা নিচু করলো।
আজ থেকে ২৫ বছর আগের ঘটনা।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের এক অজ গ্রামে অত্যন্ত দরিদ্র ,নিরক্ষর এক কৃষক দম্পতির ঘরে জন্ম নিলো এক শিশু -এক জন্মান্ধ পুত্র সন্তান। কৃষক দম্পতির বাৎসরিক আয় মাত্র ২০,০০০ টাকা। আক্ষরিক অর্থেই নুন জোটে তো পান্তা জোটে না অবস্থা। গরীবের ঘরে জন্মান্ধ সন্তান --কত বড় পাপ!
গ্রামেগঞ্জের অশিক্ষিত নির্দয় আত্মীয় -স্বজন পাড়া -প্রতিবেশীদের ধিৎকারী -টিটকারি সত্ত্বেও অসহায় সেই মা-বাবা সারা দিন হাড়-ভাঙ্গা খাটুনীর মধ্যেও পরম মমতায় বড় করতে থাকে তাদের আদরের দুলালকে। হলেই বা সে জন্মান্ধ। মা-বাবা সাধ করে ছেলের নাম রাখে শ্রীকান্ত।
পাঁচ বছর বয়স হলে তাকে ভর্তি করা হয় গ্রামের একমাত্র প্রাইমারী স্কুলে। দিন যায় --অন্ধ বালক না অন্য বাচ্ছাদের মত পড়তে শেখে ,না তাদের সাথে খেলতে পারে। সহপাঠীরা ছাড়াও শিক্ষকদের কাছেও সে যেন অবজ্ঞার পাত্র। তার জন্য বরাদ্দ স্কুলের লাস্ট বেঞ্চ।
কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নয় তার গরিব মা-বাপ। ঘটি বাটি বিক্রি করেই হোক বা যেকোনো ভাবেই খরচা জোগাড় করে গ্রাম থেকে বালকটিকে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হলো হায়দ্রাবাদের বিশেষ প্রতিবন্ধীদের জন্য স্পেশালাইজড এক স্কুলে।
শুকিয়ে যাওয়া চারাতে যেন জল সিঞ্চন হল।দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় স্কুলে প্রথম হলো ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে। শুধু তাই নয় দাবা এবং ক্রিকেটেও সে অপ্রতিদ্বন্দী।
প্রতিবন্ধীদের সেই স্কুলে একবার ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড: এ পি জে আবদুল কালাম পরিদর্শনে এসেছিলেন। রাষ্ট্রপতি যখন ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেন তোমরা বড় হয়ে কে কি হতে চাও ?
জবাব দেয়ার জন্য নবম -দশম শ্রেনীর ছাত্রদের মধ্যে একটা মাত্র হাত ওপরে উঠেছিল ---আমি বড় হয়ে ভারতের প্রথম অন্ধ রাষ্ট্রপতি ( ব্লাইন্ড প্রেসিডেন্ট !) হতে চাই!
কিছুদিনের জন্য সে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলো প্রেসিডেন্টএর লিড ইন্ডিয়া প্রজেক্টে।
জ্ঞান সাধনার তীব্র আকাঙ্খায় সে পড়তে চায় বিজ্ঞান নিয়ে। অন্ধত্বের কারণে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তাকে দশম শ্রেণীর পর সাইন্স স্ট্রিমে ভর্তি করতে রাজি নয়।শেষ পর্যন্ত আইনের সাহায্য নিতে হয় --আদালতের রায়ে ভর্তি হয় বিজ্ঞান শাখায়। তার জন্য টেক্সট বই কে কনভার্ট করা হয় অডিও বইয়ে ।
৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে সাইন্স স্ট্রিমে দ্বাদশ শ্রেণী পাস করে। আশা আই আই টি তে পড়াশুনা করার।
কিন্তু তার পর ? আই আই টির ভর্তি পরীক্ষায় সে অংশ গ্রহণ করতে পারে না , আই আই টি গুলোর নাকি অন্ধ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার এবং শিক্ষাদানের পরিকাঠামো নেই। তৃতীয় বিশ্বের দেশ তো !
কিন্তু তার উচ্চাশা আকাশ ছোঁয়া। আই আই টি গুলোরও বাপ আছে এম আই টি। রতনে রতন চেনে। সারা বিশ্বের মধ্যে এই প্রথমবার ১৮ বছরের জন্মান্ধ কোন যুবক ফার্স্ট ইন্টারনাশনাল ব্লাইন্ড স্ট্যুডেন্ট হিসাবে ভর্তি হলো আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত MIT তে।
অন্ধ্রপ্রদেশের এক অজ গ্রামের দরিদ্র ,নিরক্ষর এক কৃষক দম্পতির জন্মান্ধ সন্তান --যার অকালে অবহেলায় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ৯৯.৯৯ শতাংশ সে কিনা পড়ছে বিজ্ঞান -প্রযুক্তিতে বিশ্বের এক নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান MIT তে !
MIT- র শিক্ষা সম্পন্ন করে যুবকটি ফিরে আসে তার দেশে। ২৫ বছরের শ্রীকান্ত বল্লা এখন একজন উদ্যোগপতি - ৫০ কোটি রুপী টার্নওভার এর বল্ল্যান্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এর সিইও। সংস্থার কর্মচারীদের ৭০ শতাংশই শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী।
এক ইন্টারভিউতে দেওয়া তার উক্তি : "If the world looks at me and says ," Srikanth , you can do nothing ," I look back at the world and say ,"I can do anything ."
১)
Living-his-dream
২)
Refused by IIT, This Blind Man Went on to Become an MIT Grad and CEO of a Rs 50 Crore Company
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮