কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কান্ডারী হুঁশিয়ার কবিতায় আক্ষেপ করে ছিলেন
-- তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
১৭৫০ সালে বিশ্বের ম্যানুফ্যাকচারিং আউটপুটের ২৪% ভারতবর্ষে উৎপন্ন হত। বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের অংশ ছিল ২৭%।
১৭৫৭ সালে গঙ্গা কিনারে পলাশীর প্রান্তরে দাঁড়িয়ে ক্লাইভের স্বগতোক্তি : মাই গড দিস প্লেস ইস রিচার দ্যান লন্ডন !
ভারত বলতে এখানে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী অবিভক্ত ভারতের কথা বলা হচ্ছে।
অতীতের ভারত কখনোই গরীব দেশ ছিল না , গরীব দেশে কেউ সম্পদ লুট করতে আসে না , তা সে বাইরের দেশের মুসলমান ইনভেডাররাই হোক অথবা ইংরেজ /পর্তুগিজ /ফরাসীরা।
২০০ বছর শোষণের পর ১৯৪৭ সালে ভূখা -নাঙ্গা ভারতীয়দের ধর্মের নামে বিভক্ত করে ইংরেজ যখন ভারত ছেড়ে যায় তখন বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের অংশ দাঁড়ায় ২% আর ব্রিটেনের ২৭% ।
তথ্য গুলো বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইয়েল -অধ্যাপক পল কেনেডীর 'The Rise and Fall of the Great Powers' বইয়ে উল্লেখিত আছে।
২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের লুট ভারতকে গরীব তৃতীয় বিশ্বের দেশ বানিয়ে ছেড়েছিলো , ব্রিটেন হয়েছিল প্রথম বিশ্বের ধনী দেশ।
২০০ বছরের এই লুটের প্রতিদান দিতেই হয়তো ইংরেজরা সংস্কৃত শব্দ লুঠ অথবা হিন্দি /বাংলা শব্দ লুট কে মর্যাদা দিয়ে Loot হিসাবে অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে ইংরাজি শব্দ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের বাংলার দুর্ভিক্ষে সরকারী হিসাবমতে ৫০ লক্ষ লোক মারা যায় কারণ ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী চার্চিল নেটিভ ইন্ডিয়ানদের খাবার কেড়ে সেই সম্পদ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের জন্য খরচ করেছিলেন।
চার্চিল কে যখন লিখিত ভাবে জানানো হয় লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দুর্ভিক্ষের কারণে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে তখন ফাইলের মার্জিনে তাঁর নোটিং ছিল : অর্ধ -উলঙ্গ গান্ধী এখনো মরেনি কেন?
এগুলো রেকর্ডেড ফ্যাক্টস।
কথিত আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেতনা ,হয়তো রাতের অন্ধকারে ঈশ্বর পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিশ্বাস করতে পারত না।
ডিসেম্বর ২০১৬
১৬ই ডিসেম্বরের ফোর্বস ম্যাগাজিন জানাচ্ছে গত ১৫০ বছরে এই প্রথমবার ভারতের অর্থনীতি (জিডিপি) আকার -আয়তনে গ্রেট -ব্রিটেন কে অতিক্রম করেছে। ইউএস ডলার এর মানদন্ডে ভারতের GDP ২.৩১ ট্রিলিয়ন ডলার , ব্রিটেনের ২.৩০ ট্রিলিয়ন ডলার।
ভারতীয় রুপী এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতার হিসাবে ভারতের জিডিপি অবশ্য কয়েকবছর আগেই ব্রিটেনকে পিছনে ফেলেছে : পারচেসিং পাওয়ার প্যারিটি অর্থাৎ PPP টার্মস এ ভারতের বর্তমান GDP ৮ ট্রিলিয়ন ডলার --বিশ্বে তৃতীয় ( আমেরিকা এবং চীনের পরে ) এবং ব্রিটেনের ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার , বিশ্বে দশম।
অবশ্য এভারেজ পার-ক্যাপিটা ইনকাম অথবা গড় মাথা -পিছু আয়ের নিরিখে ভারত ব্রিটেন থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে আছে। কারণ ভারতের অত্যধিক জনসংখ্যা । অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছেন , দুটো দেশের বর্তমান জিডিপি বৃদ্ধির গতি যদি আরও ৩০-৩২ বছর জারী থাকে তাহলে ভারত মাথা-পিছু আয়ে ব্রিটেনের সমকক্ষ হতে পারবে কারণ এই জিডিপি বৃদ্ধির গতিতে ভারত অনেক এগিয়ে। হয়তো বছরটা হতে পারে ২০৪৭ । ব্যাপারটা হয়তো প্রতীকী --১৭৫৭--১৯৪৭-২০৪৭--ইতিহাসে ১০০/২০০ বছর হয়তো খুব একটা বড় সময় নয়।
রেফারেন্স :
১) An Era of Darkness : The British Empire in India by Shashi Tharoor
২) Inglorious Empire :What the British did to India by Shashi Tharoor
৩) The Rise and Fall of the Great Powers by Paul Kenedy
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬