প্রেক্ষাপটঃ সামহ্যোয়ার ইন ব্লগ
ভূমিকাঃ১- গল্পটি লেখা হয়েছে ২০২০ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। গল্পের সব চরিত্রই নিরেট বাস্তব, ব্লগ থেকেই নেয়া। কারো সাথে মিলে গেলে তা ইচ্ছাকৃত বলেই গন্য করবেন পিটানী দিতে চাইলেও দিতে পারবেন।
২- আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কারন যাদের নিয়ে এই লেখা তারা হয়তো মাইন্ডাইতে পারেন। ফান হিসেবে নিলে খুশি হবো।
৩. কিছুদিন বিরতির পর আবার সিরিজটা চালু করলাম। সবার ভালো লাগলে চালাবো।
ব্লগার্স মেন্টাল হসপিটাল-২
ব্লগার্স মেন্টাল হসপিটাল-১
বিডি আইডলের কক্ষ পরিদর্শনের পর শান্ত-শিষ্ট, সৌম্য কিন্তু অভিজাত চেহারার এক মধ্যবয়সী লোকের সেলে প্রবেশ করিলেন তাহারা। লোকটাকে দেখিয়াই প্রেসিডেন্টের মনে হইলো..এই লোক সম্ভ্রান্ত ঘরের এবং উচ্চ বংশীয় হইতে বাধ্য।
''কি নাম ইহার?"
''জ্বি মহোদয় ইনার নাম ফিউশন ফাইভ।''
''মনে হইতেছে এই লোক ব্লগে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখিতো? নামের মধ্যে কেমন যেন বিজ্ঞান বিজ্ঞান গন্ধ পাইতেছি।''
''জ্বিনা মহোদয়। ইনি ব্লগে স্যাটায়ার লিখিতেন। হেন বিষয় নাই যাহা লইয়া এই জ্ঞানী ব্লগার লিখিতেন না। একদিনে একাধিক পোস্টও তিনি দিতেন। সর্বোপরি ইনি ব্লগের মাথা বললেও কম বলা হয়। চব্বিশ ঘটিকার মধ্যে অন্তত ১৬ ঘন্টা ইনি ব্লগে কাটাইতেন। ফলশ্রুতিতে ব্লগীয় যাবতীয় ঘটন-অঘটন, ঝগড়া, মারামারি সব তাহার ঝুলিতে বন্দি হইয়া যায়। আচমকাই সেসবের প্রমানাদি হাজির করিয়া তিনি সবাইকে তাক লাগাইয়া দেন। দুর্মুখেরা তাহাকে গৃহপালিত বলিতো। তবে তাহাতে তিনি মোটেও বিচলিত বোধ করিতেন বলিয়া মনে হইতোনা। তাহাকে নিক ফ্যাক্টরির মালিক রুপেও চেনে অনেকে। লোকালটক নামে একেবারে শুরুর দিকে একটি নিক ছিলো তাহার। কালক্রমে ওহা বিবর্তিত হইয়া লোকালঠগে পরিনত হয়।''
''মনে হইতেছে এই লোক অনেক মেধাসম্পন্ন?"
''মেধাসম্পন্ন তো বটেই। কিন্তু আত্মম্ভরীতাও ব্যপক পরিমানে ইনার মগজে বিদ্যমান ছিলো। মেধা আর অহম যোগ হইলে যাহা হয়, ইহার বেলায়ও তাহাই হইলো।''
''ইহাকেই বোধকরি গুড ফর নাথিং বলা হয়..চুক চুক চুক।''
পরের কক্ষে প্রবেশ করিতেই কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচ্যাকা খাইলেন প্রেসিডেন্ট। কারন, কক্ষের মধ্যে সুশ্রী চেহারার গাট্টাগোট্টা ধরনের লোকটা মেঝেতে হামাগুড়ি দিতেছে। তার হামাগুড়ি দেবার ভঙ্গি অনেকটা কচ্ছপের মতো।
''কি সমস্যা ইহার?''
''মহোদয় ইহার নাম সাইফুর।''
''বেশ বেশ, অনেক পর একটা নাম পাওয়া গেলো, যাহা মানব জাতির নাম বলিয়াই মনে হয়।''
''হে হে। মহোদয় আসল নাম সাইফুর হইলেও লোকে ইহাকে কিন্তু কাছিম নামেই চিনিতো।''
''কেন কেন?''
''এর প্রোফাইল পিকটা ছিলো কাছিমের। কালক্রমে প্রোফাইল পিকটা কেমন করিয়া যেনো ইহার নামকেও গ্রাস করিয়া লয়। এবং অতিব পরিতাপের বিষয়, নাম গ্রাস করিবার পর কাছিমের ভূত ইহার মস্তিষ্কেও প্রবেশ করে। একদিন সাইফুরের আম্মা কক্ষে ঢুকিয়া দেখিতে পান, বেচারা কচ্ছপের মতো হামাগুড়ি দিতেছে। ভড়কে গিয়া তিনি ডাক্তার ডাকেন। কোন রোগ খুঁজিয়া না পাইয়া পরিশেষে এই পাগলখানায় ভর্তি করাইতে বাধ্য হন।''
''চুক চুক চুক।''
পরবর্তী কক্ষের লোকটাও মধ্যবয়স্ক। চেহারার মধ্যে শীতল একখানা ভাব বিদ্যমান। চোখের দৃষ্টি যেন অন্তর্ভেদী। প্রেসিডেন্ট ইহার সম্মুখে কেমন যেন অপ্রস্তুত বোধ করিলেন।
''ইনার নাম হামা।''
''কি?????!!!!''
''জ্বি মহোদয়। আসল নাম হাসান মাহবুব। লোকে কাটছাঁট করিয়া হামা নামে ডাকিতো। ইহার সমস্যাও তথৈবচ। ব্লগিংকে জীবনের সাথে গুলায়া ফেলিয়াছেন এই ভদ্রলোক। লোকে ইনাকে হার্ডকোর ব্লগার নামে জানিতো।''
''আজব!! হার্ডকোর পর্ন শুনিয়াছি আগে। হার্ডকোর ব্লগার শুনিলাম জীবনে প্রথম।'
''সর্বভূক পাঠক এই লোক। অখাদ্য কুখাদ্য সব গলাধঃকরনে ইহার জুড়ি মেলা ভার। কোনো পোস্টে মন্তব্য যদি একটাও থাকে, তবে সেই মন্তব্যখানা ইনার। এইভাবে ব্লগিং করিতে করিতে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ব্লগের নাড়ি-নক্ষত্র জানিয়া যান। তবে মহোদয় পড়িতে ওস্তাদ যিনি, সেই হামা কিন্তু লিখিতেনও বেশ। এইভাবে পড়া আর লেখা মেইনটেইন করিতে গিয়া বেচারার অবস্থা লেজেগোবড়ে হইয়া যায়। ফলশ্রুতিতে পাগলাগারদ।''
''চুক চুক চুক।''
পরবর্তী কক্ষে প্রবেশ করিয়া খানিক থমকে গেলেন প্রেসিডেন্ট। তাহার পর অট্টহাসিতে ফাটিয়া পড়িলেন। বিচলিত বোধ করিলেন ডিন। পাগলাগারদ পরিদর্শনে আসিয়া তিনি নিজেই কি.....!!!
কিন্তু ক্ষনিক পরেই সন্দেহ দূর করিলেন প্রেসিডেন্ট। আঙ্গুল দিয়ে কক্ষে দন্ডায়মান লোকটির দিকে ইঙ্গিত করিলেন তিনি। মানে ওনাকে দেখিয়াই হাসি পাইতেছে তাহার। বুঝিতে পারিয়া ডিনও হাসিতে যোগ দিলেন।
ছাগলের ঠ্যাঙ এর মতো দুইখানা লিকলিকে পায়ের উপর নিজের আনুমানিক ২০ কেজি ওজনের শরীরখানাকে অতি কষ্টে ধারন করিয়া দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে ভিন গ্রহের প্রানী বলিয়া ভ্রম হইতে পারে অনেকেরই।
কি নাম ইহার?" হাসির দমকে বারবার কাঁপতে থাকা প্রেসিডেন্ট কোন রকমে জিজ্ঞেস করলেন।
''মহোদয় ইহার নাম চিকন মিঞা।''
''বেশ বেশ। যথার্থ নাম।'' বলিয়াই আবার অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়িলেন তিনি।
''ভদ্রতারে দূর্বলতা ভাবিস নারে। মাইনাচেই কাত কইরা দিমু।'' ক্রোধে চিকন মিঞার আঁখিযুগল লালআকার ধারন করিলো।
দেখিয়া খানিকটা ভয় পাইয়া গেলেন প্রেসিডেন্ট।
''ইহার নাম চিকনমিয়া। নাম, প্রোফাইল পিক এবং অন্যধারার বাচনভঙ্গি চিকনাকে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ আসনে বসাইয়া দেয়। কিংবদন্তী ব্লগার যাহাকে বলা হয়, ইহা তাই। তবে ইহার এক বদঅভ্যাস, কারনে অকারনে মাইনাসের বন্যা বইয়ে দেয়া। অথচ দেখুন, লোকে তাহার মাইনাস পাবার জন্যও লালায়িত থাকিতো। জ্যাডা, চিকনা ইত্যাদি নামে লোকজন তাহাকে বিশেষিত করিতো। ব্লগিঙ জীবনে মাত্র দশটি লেখা পোস্ট করিয়াছে সে। কিন্তু দশ জনমের জনপ্রিয়তা এই দশটি লেখার মধ্যেই পাইয়া গিয়াছে সে।''
''পাগল হইলো কি করিয়া??''
''আগেই বলিয়াছি ইহার বদঅভ্যাসের কথা। মাইনাস। ব্লগে সবাইকে মাইনাস বিলাইতে বিলাইতে নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে এই ঋণাত্বক চিহ্নটি ঢুকিয়া যায়। বাড়িতে, বন্ধুদের মধ্যেও ইহার প্রয়োগ ঘটাইতে থাকে সে।''
''যেমন?''
''অনেক চেষ্টার পর একটা প্রেমিকা জুটাইয়াচিলো চিকনা। চিকনা ভাবিয়াছিলো মেয়েটা তাহার মন বুঝিবে, চেহারা নয়। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক। আদতে মেয়েটা ছিলো লোভী প্রকৃতির। চিকনা রোগা হইলে কি হইবে, তাহার পার্স কিন্ত স্বাস্থ্যবানই ছিলো। কিন্তু বালিকার চক্করে পড়িয়া সেইটাও পাতলা হইয়া গেলো। চিকনা বুঝিতে পারিলো, তাহার নসিবে প্রেম লিখেননাই বিধাতা। একদিন মেয়েটাকে ডাকিয়া চিকনা বলিলো- তুমার পতে তুমি যাও, আমার পতে আমি যাই, তুমারে মাইনাচ।''
সেই দিন হইতে চিকনা মানসিকভাবে ভাঙ্গিয়া পড়ে। পরবর্তীতে তাহার ঠাঁই হয় এইখানে।
প্রেসিডেন্ট হাসি লুকাইতে চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হইলেন। ফিক করিয়া হাসিয়া দিলেন তিনি। ফল হইলো ভয়াবহ। চিকনা ভয়ংকর রাগে গড়গড় করিয়া বলিয়া উঠিলো- তোরে মাইনাচ, তোর চৌদ্দগুস্টিরে মাইনাচ.....''
প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্বেও লিখলাম। ভবিষ্যতে যদি লিখতে মন চায় লিখবো। সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১০ ভোর ৪:০৩