#স্পয়লার_এলার্ট
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
___________________________
বইঃ আগামেমনন
লেখকঃ এস্কাইলাস
অনুবাদঃ খুররম হোসাইন
মুদ্রিত মূল্যঃ অজ্ঞাত
ক্রয়মূল্যঃ ১৫৳ টাকা মাত্র
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮৭
প্রকাশকঃ ফ্রেন্ডস বুক কর্নার
ধরণঃনাটক/গ্রীক ট্রাজেডি
কিছু কথাঃ গ্রীক ট্রাজেডির সাথে প্রথম পরিচয় সফক্লিসের 'রাজা ইডিপাস" দিয়ে। তারপর "এন্টীগোনি" পড়লাম।সেই থেকে গ্রীক ট্রাজেডি ভালোলাগে।
আগামেমনন হচ্ছে গ্রীকপুরাণের এক চরিত্র। যার অতীত ও বর্তমান নিয়ে এই নাটক।
এস্কাইলাস(৫২৫- ) এর সময়ে কোন বড় ট্রাজেডি কাহিনি নিয়ে মোট তিনটি নাটক(ত্রয়ী বা ট্রিলজি) রচিত হত।
আগামেমনন তার অরেস্ট্রিয়া ট্রিলজির অন্তর্ভুক্ত এবং প্রথম নাটক।
অন্যান্য গ্রীক নাটকের মত এ নাটকেও চরিত্রগুলির পাশাপাশি আছে বৃদ্ধদের কোরাস গায়কদল।যারা গানের সুরে সুরে নাটকের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-ভবিষ্যতবানী-মতামত দিয়ে নাটককে ঘটনাবহ করতে এবং নাটককে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
গ্রীক নাটকে লক্ষণীয় ব্যাপারসমূহের থেকে অন্যতম হল অদৃষ্টতাবাদ।অর্থাৎ সবই পূর্বনির্ধারিত। যা খণ্ডানো মানবের অসাধ্য।সব দেবতারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাদের মতিগতি বোঝার অথবা ইচ্ছে/আদেশএড়ানোর সাধ্যও মানুষের নেই। জিউস,এপোলো, আর্টেমিস প্রভৃতি গ্রীকপুরাণের দেবতাদের ভূমিকা সবসময় উল্লেখযোগ্য।
আরেকটা চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, এক ব্যাপারে হিন্দুপুরাণের সাথে এর কিছুটা মিল আছে। আর তা হল,পূর্বপুরুষের কৃত পাপ পরবর্তী প্রজন্মকে ভোগ করতে হয়। যেমনটা হিন্দু পুরাণে রাজা নহূষপুত্র যযাতিকে ভোগ করতে হয়েছিল।
আরেক উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে, নারীর অমর্যাদা ও পুরুষের অবাধ যৌনতা।
যখন গ্রীকরা ট্রয় পদানত করে জয়ের খবর আলোকসংকেত দ্বারা প্রেরণ করে,তা কেউই বিশ্বাস করেনি। কারণ খবরদাতা ক্লাইমেনেস্ট্রা হচ্ছেন একজন নারী। এমনটা আমরা একাধিকবার দেখতে পাই।
এদিকে রাজা আগামেমনন ট্রয়ে দীর্ঘ দশবছর যুদ্ধকালীন সময়ে একাধিক যুদ্ধবন্দীনিকে অঙ্কশায়িনী করেছেন। জয়ী হয়ে ফেরার সময়েও প্রায়ামকন্যা ক্যাসান্ড্রাকে সাথে নিয়ে এসেছেন।নাটক চূড়ান্ত পরিণতিতে উপনীত হওয়াতে এই অংশের ভূমিকাও নগণ্য নয়।
আগুন,আকাশ,নদী, পাহাড়, ঈগল,শিশির প্রভৃতি রূপকের ব্যবহার এই জেনরের নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এস্কাইলাসের অমর সৃষ্টি "আগামেমনন" এর ব্যতিক্রম নয়।
অন্যান্য গ্রীক ট্রাজ্যেডির মত এই নাটকের মূল থিম হচ্ছে,মানবমনের চরমদশা বা অবস্থা। যখন মানুষ ভাগ্যের ফেরে অথবা কর্ম্মদোষে দুর্দশায় পতিত হয়,তার হাতে কিছুই করার থাকেনা।শুধুমাত্র ঘটনাকে এগিয়ে নেয়।
প্রধান চরিত্র পরিচিতিঃ
রাজা আগামেমনন,আর্গসের পূর্ব্বতন অধিশ্বর আট্রিউসের প্রথমপুত্র এবং মেনেলাউসের সহোদর।তিনি ট্রয়যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম বীর সেনানায়ক এবং আর্গসের মুকুটধারীও।
ক্লাইমেনেস্ট্রা,আগামেমননের পত্নী।
এজিসথাস,আগামেমননের খুড়তুতো ভাই এবং রানী ক্লাইমেনেস্ট্রার অবৈধ প্রেমিক।
ক্যাসান্ড্রাঃ ট্রয়রাজকন্যা।
কাহিনীসংক্ষেপ( বইয়ের প্রথমদিক থেকে দেখে লেখা ) ঃ
ট্রয় যুবরাজ প্যারিস স্পার্টান রানী ও মেনেলাউসপত্নী হেলেনকে অপহরণ করে ট্রয়ে নিয়ে যায়। হেলেন ও হৃত সম্মান পুনুরুদ্ধারকল্পে গ্রীস ও তার মিত্ররা সমুদ্রপাড়ি দিয়ে বিশাল সেনাবহরসহ ট্রয় অভিযানে যাত্রা করে।নেতৃত্বে ছিলেন আগামেমনন । বায়ু নিয়ন্ত্রণকারী দেবী আর্টিমিস ছিলেন গ্রিকদের বিপক্ষে। তিনি সমুদ্রবায়ু বন্ধ করায় জাহাজগুলি কার্যত অচল হয়ে যায়। গ্রীক সেনা ও ভবিষ্যৎবক্তা কালচাস পরামর্শ দেয় ক্লাইমেনস্ট্রা-আগামেমনন কন্যা ইফিজিনিয়াকে দেবী আর্টিমিসের উদ্দেশ্যে বলি দিলে জাহাজগুলি সচল হবে। নয়তো দেবী সৈন্যসমেত জাহাজ ওখানেই ডুবিয়ে দেবেন। আগামেমনন মেয়ের বিয়ের কথা বলে মেয়েকে তার মায়ের নিকট হতে এনে বলি দেন।জাহাজ পালে হাওয়া লাগে। ১০বছরব্যাপী যুদ্ধে ট্রয় ভস্মীভূত হয়।নিহত হয় দুপক্ষের অসংখ্য যোদ্ধা। এদিকে রাণী যখন জানতে পারেন তার কন্যাকে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে এবং রাজা একাধিক যুদ্ধবন্দিনীর প্রণয়ে মজেছেন, তখন সন্তান হারা বাঘিনীর মত হয়ে ওঠেন তিনি।
প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে তার হৃদয়ে। রানী প্রতিশোধ নিতে আগামেমননের জ্ঞাতিভ্রাতা এজিস্থাসের সাথে প্রণয়ে জড়ান এবং অপেক্ষা করতে থাকেন। বলে রাখা ভালো যে,আগামেমননের পিতা এট্রিউস একদা এজিস্থাসের ভ্রাতাদের হত্যা করে মাংস ঝলসে তাদেরই পিতাকে খেতে দিয়েছিলেন। নিজের পিতা ও ভাইদের প্রতি এমন অবিচারের প্রতিশোধ নিতে ক্লাইমেনেস্ট্রার সাথে যোগ দেয় সে। যুদ্ধফেরত আগামেমনন প্রাসাদে ফেরার পরপরই ক্লাইটেমনেস্ট্রা রাজা ও তার সাথে আসা ট্রয়রাজকুমারী ভবিষ্যৎবক্তা কাসান্ড্রাকে হত্যা করে।
নাটকে কোরাসদল পতিহন্তা রানীর এমন পাপাচারে ভয়ে কম্পিত হলেও রানী বলেন যে তিনি কোন পাপ করেননি। সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন মাত্র। আরো ঘোষণা করেন যে, এজিসথাস ও তিনি আর্গোসের শাসনদণ্ড হাতে নিবেন। জনগণের প্রতিনিধিস্বরূপ উপস্থিত কোরাসদল দুজনকেই অস্বীকার করে। কোরাসদল নেতা এও ভবিষ্যবানী করেন যে, রাজপুত্র অরেস্টস স্বদেশে ফিরে এদের দুজনকেই(মাতাকেও) হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিবেন।
মন্তব্যঃ অনুবাদকের অনুবাদ মধ্যম মানের। গ্রীক নাটকের আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে কোরাসদলের বক্তব্য। যা মূলভাষাতে কাব্যগীত হিসেবে থাকলেও একই রূপে অনুবাদ দুরূহ। উনার অনুবাদ ততটা ভালো লাগেনি।