বইঃজননী
লেখকঃশওকত ওসমান
প্রথম প্রকাশঃজুন ১৯৬৮
পঞ্চম মুদ্রনঃবৈশাখ ১৪০৩
প্রকাশকঃস্টুডেন্ট ওয়েজ
মুদ্রিত মূল্যঃ১০০৳
ISBN-984-406-051-5
ঐতিহাসিক গ্রান্ডট্রাঙ্ক রোডের পার্শ্ববর্তী মহেশডাঙা মানুষ আলী আজহার খাঁ।ব্রিটিশবিরোধী ওহাবীআন্দোলনের নেতা পূর্বপুরুষদের এক গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকলেও তার বর্তমান সীমাবদ্ধ মাঠের দিগন্তে।
একজন সাধারণ চাষী আজহার খাঁ।ধর্মভীরু, সৎ,নীতিবান।দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে নিষ্পেষিত খাঁ পরিবার,গ্রাম,তৎকালীন সমাজকে(তৎকালীন ব্রিটিশসূচিত নব্য পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বৈষম্যচিত্র) শওকত ওসমান এক নিখুঁত কথাশিল্পীর মতই ষ্পষ্ট তুলে ধরেছেন।
পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন কোটাল,চন্দ্রকোটালের সাথে।সদাহাস্য স্ফূর্তিবাজ মানুষটা অন্তরের দুঃখ এক মিছে আবরণে ঢেকে নির্মম ভাগ্যকে হাজারোবার পরিহাস করেছেন।
উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে শৈরমী,হাসুবৌ, সাকেরের মত অতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা-অপ্রাপ্তি,সংগ্রামী জীবনযুদ্ধ।
অবুঝ শিশুরাও যে দারিদ্র্যের মত নির্মম বাস্তবতা বুঝতে পারে,সেটা চোখে আঙুল দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন।
এছাড়া পয়সাওয়ালারা সবসময় নিজ স্বার্থরক্ষায় ধর্মের দোহাই দিয়ে জালিয়াতি করে,নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মানুরাগকে ব্যবহার করে তার সরস বর্ণনা রয়েছে এ উপন্যাসে।
লেখকের কলমে মহেশডাঙা হয়ে উঠেছে ব্রিটিশশাসিত বাংলার হাজারো গ্রামের একটি কার্বনকপি।
সর্বোপরি লেখক তুলে ধরেছেন এক চিরায়ত পল্লীজননীর প্রতিচ্ছায়াকে।
এখানেই উপন্যাসের নামের সার্থকতা, ঔপন্যাসিকের সার্থকতা।
এই জননী নিজে অভুক্ত থেকে, নিজের ন্যূনতম সুখানুভূতি বিসর্জন দিয়ে সংসার-সন্তানের কথা ভাবতে পারেন।স্বামীর হঠাৎ অন্তর্ধানে হুশিয়ার কর্ণধারের মত টেনে ধরেন সংসারের হাল।
অশিক্ষিতা এই পল্লীমাতা হৃদয়ে অনুভব করতে পারেন এক অমোঘ সত্য,"হৃদয়ের ঐশ্বর্য জাতিধর্মের বালাই লুকাইয়া রাখে। "
পড়ে না থাকলে, পড়ে ফেলুন।হৃদয়ঙ্গম হবে এক পল্লীজননীর মহত্ত্ব।