আর ১০ দিন, ৯ দিন, এক সপ্তাহ ...... কর গুনে গুনে হিশেব করতাম। মাঝখানের সময়টা খুব দীর্ঘ মনে হলেও অপেক্ষার পালা এক সময় শেষ হইত। আর ঐ দিন সকাল থেকে শুধু একটাই চিন্তা, কোন সময় নিয়ে যাবে। কিন্তু আব্বা দুপুরে খাবারের পর একটু রেস্ট নিয়ে পত্রিকা নিয়ে বারান্দায় বসতেন, আর ওঠার কোন নাম গন্ধ নাই। আমার ত অস্থির অবস্থা, একটু পর পর হয় ছোট বোনরে পাঠাইতাম না হয় নিজে গিয়া শুনতাম ''কখন নিয়া যাবা??'' শেষে বিরক্ত হইয়া ধাবাড় দিত, ''আররে, এগো জ়্বালায় শান্তিতে একটু বসতেও পারি না''-- কিন্তু তাতে কি, ঝাড়ি দিলেও একটু পরে ঠিকই নিয়া যাইত। বৈশাখী মেলায়।।
দুই ভাইবোন আব্বার হাত ধরে মেলায় যেতাম, অস্থির আনন্দ, মনে হইত, মেলার মধ্যে যা আছে সব কিছু যদি কিনে দিত। কি আনন্দ। বরগুনার জেলা শহরের ছোট মেলার মাঠ, কিন্তু ছোটবেলায় সেটাই আমার কাছে অনেক বিশাল কিছু মনে হত। অনেক মানুষ, অনেক আয়োজন, অনেক ঘুরে খাওয়া দাওয়া করে একগাদা খেলনা পাতি কিনে তারপর রাতে ফিরতাম। সেই আনন্দের আবেশ কাটতে সপ্তাখানেক লেগে যেত। কি এক ঘোরের মধ্যেই না থাকতাম।
১৪২০ এর বৈশাখের ১ম দিন, আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাই, ক্যাম্পাসে ঘুরি, টি এস সি যাই- কিন্তু বৈশাখের মেলার সেই আবেশ মনে হয় সময়ের চোরাগলিতে হাওয়াই মিঠাই হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে।
ভুভুজেলার আর্তচিতকার ও ধুলোময়লায় একাকার হয়ে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসি।
দিন শেষে আবারো সব কিছু সেই আগের মতই, গতানুগতিক নাগরিক জ়ীবন। পুরোনো রুটিনে ব্যাস্ত হওয়ার পায়তারা।--
তবুও সব ভুলে সকল প্রানে বাজ়ুক- ''মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা''- শুভ নববর্ষ।