ধুমপান বর্তমান সমাজের এক নিরব ঘাতক। মদ, গাঁজা, হেরোইন সবার কাছেই যতটা নিন্দনীয় ধুমপান ততটা নয়। কিন্তু কোন অংশেই এর প্রভাব অন্য কোন কিছু থেকে কম নয় বরং বিস্তৃত এবং মারাত্নক। অন্য নেশা দ্রব্যের ইফেক্ট সাথে সাথে দেখা গেলেও এই নেশার ইফেক্ট আসতে লাগে ২০-৩০ বছর। তাই বোধ হয় আমরা বুঝতে পারিনা এর ভয়াবহতা। এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় হবে এই নেশার ভয়াবহ শারীরিক ইফেক্ট গুলা নিয়ে।
আজকাল দেখতে পাচ্ছি জাতে ওঠা বা বন্ধুদের সমমর্যাদা সম্পন্ন হওয়ার জন্য, অনেকে আবার শুধু স্টাইলের জন্য এই মরণ ফাঁদে পা বাঁড়ায়। প্রথমে একটি দুটি পরে ৪-৫ টি শেষে দিনে এক-দু প্যাকেট পর্যন্ত যায় এই নেশা। এবং দিন দিন শারীরিক ভয়াবহ ইফেক্ট তৈরী করে নিজের ভিতরে নিজেই।
একজন মেডিকেল ছাত্র হিসেবে আমার এর ভয়াবহ প্রভাব নিজ চোখে দেখা আছে। এই নেশা দ্রব্যের কোন নির্দিষ্ট টার্গেট অর্গান নেই, শরীরের সব অঙ্গেই এর প্রভাব রয়েছে। সবথেকে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে ফুসফুস, হৃদপিন্ড, রক্তনালী, মস্তিষ্কের উপরে। এছাড়া লিভার, খাদ্য নালী, জরায়ুর উপরেও এর প্রভাব কম নয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অসহায় রোগীদের ভিতরে সব থেকে ভয়াবহ অবস্হা থাকে যেসব রোগীদের তাদের ভিতরে সিওপিডি বা শ্বাস কষ্টের রোগীরা এক নম্বরে। আর এই রোগীদের ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যায় ২০ থেকে ৩০ বছর ধুমপান করেছে এরা। শ্বাসনিতে না পারার কষ্ট যে কতটা ভয়াবহ সেটা এদের না দেখলে বোঝা যাবেনা। এদের চোখে মুখে থাকে ধুমপান করে নিজের জীবনটা নষ্ট করার আফসোস। কিন্তু এই রোগ যে কখনোই সারার নয়। আমাদের এক প্রফেসর বলেন, সব রোগই আল্লাহ দেন শুধু সিওপিডি ছাড়া। এই রোগ মানুষ নিজ হাতে বানায়।
এরপর আসি হার্টের কথায়। প্রতিটা টান দেওয়া সিগারেটের নিঃশ্বাসের সাথে বর্জ্য মিশে যাচ্ছে আমাদের শরীরে। আর এগুলো গিয়ে সরাসরি আঘাত করছে হার্টের রক্তনালীতে। আর ফলশ্রুতিতে তৈরী হচ্ছে প্লাক। সরু হচ্ছে রাস্তা। এবং এরাই হটাৎ আক্রান্ত হয় হার্ট এটাকে।
ব্রেইন আমাদের চালু থাকে গ্লুকোজে। কিন্তু ধুমপায়ীদের মস্তিষ্ক নিকোটিনে চলে। কোন প্রেশারের কাজ করার সময় এরা ধুমপান না করলে সেটা করতে পারেনা। তাছাড়া স্ট্রোকের প্রধান কারণও এই ধুমপান। একবার স্ট্রোক করলে বাকি জীবন প্যারালাইসড হয়ে থাকতে হবে এবং একমাত্র দায়ী হবে এই সিগারেটই।
আরো আছে খাদ্যনালী। অতি দুঃখের বিষয় ধুমপায়ীদের পায়খানা ধুমপান না করলে ক্লিয়ার হয় না। তাছাড়া পাকস্হলি ক্যান্সার, আইবিডি এর প্রধান কারণ এই ধুমপান।
তাছাড়া, মেডিকেলের বই গুলাতে এমন কোন রোগ নেই যার রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে স্মোকিং কে বলা হয়নি। যে কোন ক্যান্সার হতে পারে এর জন্য। এমন কি গর্ভপাত, পুরুষত্বহীনতা, বন্ধ্যাত্বও হতে পারে।
এছাড়া আর্থিক, সামাজিক, পরিবেশগত যে খারাপ ইফেক্টগুলা আছে সেগুলা বর্ণনা করতে গেলে এমন আরো ৪-৫ টি পোষ্ট লেখা হয়ে যাবে।
সিগারেট আপনাকে সাময়িক কাজের ক্ষমতা প্রদান করবে, ভালো লাগার অনুভূতি তৈরী করবে। কিন্তু ফলশ্রুতিতে হয়তোবা আপনার জীবনটাই কেড়েে নিবে। তাই যারা এই নেশার প্রথমিক পর্যায়ে আছেন তারা বের হয়ে আসুন এবং অন্যরা চেষ্টা করুন কমানোর। খুবই কঠিন কাজ তবু নিজের জীবনটাকে ভালোবেসে একটু চেষ্টা করুন।
অন্তত একজনও যদি এই পোষ্ট পড়ে ধুমপান হতে বিরত থাকেন, তাহলেই নিজেকে সুখী ভাববো। কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
আসুন সবাই শপথ করি, "নিজে বাঁচবো, অন্যকে বাঁচাবো।"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৩