মেয়েটি প্রতিদিনের মতো একটি হাসির ইমো দিয়ে অফলাইন এ চলে যায়। প্রায় এক বছর হলো দুজনের পরিচয়। প্রথম প্রথম কেউ কাউকে চিনতো না, জানতো না। ধীরে ধীরে দুজনের পরিচয় দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হতে থাকে। একমাত্র ফেসবুক এর দ্বারাই এই আশ্চর্যজনক কাজটি সম্ভব। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এতদিন পেড়িয়ে গেলো। কিন্তু দুজনের কথোপকথনের মাত্রা বিন্দুমাত্র ও কমেনি। বরংচ দিন কে দিন বেড়েই যাচ্ছে। যা এর আগে কখনো তাদের সাথে হয়নি।
রিস্টওয়াচ এ সময় দেখে নিলো ছেলেটি। ঠিক রাত ১ টা বাজছে। এক মিনিট কম ও নয়। আবার এক মিনিট বেশি ও নয়। সকালে আবার তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। কিছুক্ষন এদিক সেদিক ফিরে একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে পড়ে ছেলেটি। রাত ৩ টা ৩৩। হঠাৎই হুড়মুড় করে ঘুম হতে উঠে পড়ে ছেলেটি। এই শীতের রাতেও দর দর করে ঘামতে থাকে সে। কে যেনো বলে ছিল স্বপ্ন খুব বেশি সময় মানুষের মস্তিষ্কে স্থায়ী হয় না। ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসে কুয়াশা ভেজা উইন্ডো গ্লাস এর মতো। ছেলেটির সাথেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। ক্রমশ সব কিছু ফিকে হয়ে আসছে মনের ক্যানভাস হতে। তবে এটুকু ঠিকই বুঝতে পারে একটি দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে। ভয়ংকর রকমের দুঃস্বপ্ন। মেয়েটিকে হারিয়ে ফেলার দুঃস্বপ্ন। ছেলেটির মাথা ক্রমশ ভারী হতে থাকে। পুরো পৃথিবী যেনো তার অক্ষিগোলকের চারপাশে ঘুরতে থাকে ক্রমাগত। ঝট করে পাশ হতে ল্যাপটপের ডালা খুলে বসে ছেলেটি। ফেসবুকে গিয়ে চিরচেনা সেই আইডির ম্যাসেজ বক্সে খট খট শব্দের আওয়াজ তুলে টাইপ করে সেন্ড বাটন এ প্রেস করে, 'আআ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। অ্যান্ড ইটস আর্জেন্ট। কাল বিকাল ঠিক ৪ টায় সিআরবি তে। আমি অপেক্ষা করব তোমার পথ চেয়ে।' সেন্ড হতেই আইডি ডিয়েক্টিভ করে চলে আসে ছেলেটি।
***
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে ঢুঁ দেওয়ার অভ্যাস মেয়েটির। প্রতিদিনের মতো ফেসবুকে এসে আজ আশ্চর্য বনে যায় ছেলেটির ম্যাসেজ দেখে। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। আজ পর্যন্ত যেই ছেলে লজ্জ্বার কারণে ফোন নাম্বারটুকু চাইতে পারেনি। সেই ছেলেটি আজ হুট করেই কোনো কিছু বলা কওয়া ছাড়াই সরাসরি দেখা করতে চাচ্ছে। তাছাড়া এভাবে কারো সাথে হুট করে দেখা করা যায় নাকি? কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা মেয়েটি। কিছু যে বলবে সেই সুযোগ ও রাখেনি ছেলেটি। সকাল পেড়িয়ে দুপুর। দুপুর পেড়িয়ে বিকালের পথে। সারাটা দিন অস্থিরতায় কেঁটে যায় মেয়েটির। তবুও কোনো খবর নেই ছেলেটির। হঠাৎই কেমন যেনো অনুভব হয় মেয়েটির। মস্তিষ্কের প্রতিটি ব্রেইন সেলে তড়িৎ গতিতে অদৃশ্যমান কিছু অজানা এক ভয়ের আভাস জানান দিয়ে যায়। নিমিষেই আতংক ফুঁটে উঠে মেয়েটির মুখমন্ডলে। ক্রমশ অস্থিরতা বাড়তে থাকে মেয়েটির। আর এক মুহুর্ত ও নয় এখানে। তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে পড়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। পার্কে দুটি ছেলে-মেয়ে মুখোমুখী দাড়িয়ে আছে। দুজনই খুব করে হাফাচ্ছে। ছেলেটির চোখ দুটো অস্বাভাবিক রকমের লাল হয়ে আছে। মেয়েটির চিবুক বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এর পেছনের কারণ কি কেউ বলে না দিলেও দুজন ঠিকই বুঝে নেয়। মেয়েটি ছেলেটির ছবি অসংখ্য বার দেখেছে। তাই ভুল হওয়ার প্রশ্ন আসেনা। ছেলেটি ও মেয়েটির চোখ দুটো এর আগে কয়েক বার দেখেছিল। এই মায়াবী চোখ দুটো না চিনতে পারার মতো বোকামি করতেই পারেনা ছেলেটি। পৃথিবীটা অদ্ভুত। এখানে সব অদ্ভুত মানুষের বসবাস। অদ্ভুত তাদের কারসাজি। এই অদ্ভুত কোটি কোটি মানুষের মাঝে দুই জন অদ্ভুত মানুষের আকস্মিক মনের মিল হয়ে গেলে সেই সম্পর্কের কি নাম দেওয়া যায় সেটা তারা জানেনা। কেউ জানতে ও চায়না। ছেলে আর মেয়েটি এই নামহীন সম্পর্কেই সুখী। তারা শুধু জানে সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে ছাড়া তার এক মুহুর্ত ও চলবেনা। এক মুহুর্ত ও না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০২