ধর্ষনের মূল কারণ যারা মেয়েদের পোশাকের দোষ বলে চালিয়ে দেয়। তাদের আমি এক বাক্যে বলতে দ্বিধা করব না যে তারা এক প্রকার মেন্টালি সিক। তারা প্রচন্ড রকমের মেন্টালি সিক। তুমি বোরখা, হিজাব করে রাস্তায় বের হওনা। তোমায় লোকে ধর্ষন করবেনা তো কে করবে? দুঃখিত লোক হবেনা। হবে এক প্রকার মনুষত্বহিন মানব রূপধারী ঘৃণিত পশু। আমি এমনও দেখেছি যে, রাস্তায় চলার পথে পরিণত বোরকা পরিহিতা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে চুপিসারে একটি ছেলে আরেকটি ছেলেকে বলতে, “মালটা সেই না? ফিগারটা দারুণ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
হয়ত পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে মেয়েটির বয়সী বড় বোন তার নিজ ঘরেই আছে। যে কিনা বাসায় তার ভাই আসলে নিষ্পাপ পবিত্র ভাই-বোনের ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে। সেই বোনটি কি কখনও ভেবেছে তার আদরের ছোটো ভাইটা বাহিরে গিয়ে তার মতই একটি মেয়েকে টিজ করে বেড়াচ্ছে। কিংবা সেই ছেলেটি কি কখনও ভেবেছে যেই মেয়েটিকে আজ সে টিজ করলো সে স্বয়ং তার বোনের মতো কেউ একজন।
***
এক প্রজাতির লোক এখন বলবে, “তাহলে তারা যেমন খুশি তেমন পোষাক পড়ে বেরোবে। আর আমরা কি চোখ বন্ধ করে রাস্তায় ঘুরে বেরবো? সব তাদের ঐ পোশাকেরই দোষ।”
যেই দেশে ৫ বছরের একটি শিশু ধর্ষনের শিকার হয়। তখন আপনি কোথায় থাকেন? আপনার বড় বড় বুলি তখন কোথায় থাকে?
স্কুল-কলেজ এর সামনে ঘাপটি মেরে বসে থাকেন। সুযোগ মতো যা নয় তাই করে বেড়ান তাদের সাথে। আপনাদের ভাষায়, “কচি মাল তো! এদের টিজ না করলে কাদের করব! এখন তো এসব করার সময়।”
আপনার স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া বোনটিকে আপনি ঠিক সেভাবেই টিজ করুন দেখি। আপনার কতো বড় বুকের পাটা! কি ভাবছেন এ কেমন অসভ্যের মতো কথা বলছি? আমাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে? আচ্ছা বাদ দেই। আপনার দ্বারা সম্ভব না হলে আপনার কোনো এক পার্টনার কেই নাহয় বলুন আপনার সেই আদরের বোনটিকে টিজ করতে। আড়াল থেকে সব দেখে যান। বাসায় দরজা বন্ধ করে যখন আপনার বোন কাঁদবে। সুযোগ পেলে একটিবার আপনার বোনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তো, তোমার/ তোর এখন অনুভুতি কি? খুব গায়ে লাগতেছে? বাহিরে যখন অন্য কোনো মেয়েকে টিজ করেন। তার আগে পারলে একটিবার ভাববেন সেও কারো না কারো আদরের ছোট্ট বোন। সেও কোনো বাবা-মা'র আদরের সন্তান।
***
এখন আবার এক প্রজাতির লোক বলবে আমার তো কোনো বোন নেই। তাহলে টিজ কিংবা ধর্ষন করতে দোষের কি? এদের আসলে অজুহাতের অভাব নেই। আপনাকে শুধু একটি প্রশ্নই করবো, “আপনার কি মা ও নেই?”
থাক এসব কথা। আর কিছু না বলি। নিজে ঠিক থাকলেই জগৎ ভালো। তবে আমরা বাঙ্গালি কিছু পারি আর না পারি। মুখে আঙ্গুল দিয়ে সব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে স্বচক্ষে দেখে যেতে বেশ ভালো পারি। অন্তত একটা দিকে দিয়ে আমরা ভালো। আমরা খুব ভালো দর্শক। দেশে অহরহ টিজ কিংবা ধর্ষন হচ্ছে। এসব করছে আমার আপনার মতই কিছু মানুষ। আশেপাশে আরও কিছু মানুষ আছে দেখবেন। যারা এসব কিছুতে ভ্রূক্ষেপ পর্যন্ত করেনা। তাদের কাছে এসব অজুহাত কোনো ফ্যাক্ট না। তাদের ঘর থেকেই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে কিভাবে সমাজে চলতে হয়। কিভাবে সম্মান করতে হয়। আর সম্মানের ভাগীদার হতে হয়। আমার মতে তারাই প্রকৃত মানুষ। এসব মানুষের জন্যই এখনও টিকে আছে সমাজ। টিকে আছে দেশ ও পৃথিবী। তাদের মতো হতে পারলেই জীবনটা স্বার্থক হবে বলে আমি মনে করি। জাস্ট সেলুট দেম!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৫