মেয়ে!
তুই কি জানিস? তোর ঐ নেশাতুর চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে আমি নিমিষেই অজস্র কাব্য রচনা করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তোর কবিতা পছন্দ না। তোর পছন্দ ডিএসএলআর, বাইক সমৃদ্ধ বয়ফ্রেন্ডের তথাকথিত সস্তা ভালোবাসা।
একদিন তোর সেই স্মার্ট ছেলেটির কাছে তোর মূল্য শূন্যের কোঠায় চলে যাবে। তোকে পুরনো ঠুনকো বস্তুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দিবে আর সবার মতো। তুই কাঁদবি সেদিন। খুব করে কাঁদবি। চিন্তা করিস না। সেদিন তোর চোখের জল মুছে দিতে আমি আর আসবনা।
আমি সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে তোর ঐ নেশাতুর চোখ দুটি দেখবো। আর কবিতা লিখে যাবো।
-
মেয়ে!
সময় যাবে। তুই এবার আরো অনেক ম্যাচিউর্ড হবি। এবার তুই বেছে নিবি সমাজের তথাকথিত বড়লোক ঘরের কোনো এক সুদর্শন ছেলেকে। তোর গলা ভর্তি থাকবে ভারি ভারি গয়না। থাকবে হাত ভর্তি চুড়ি। আরো থাকবে কানে সোনা কিংবা ডায়মন্ড এর দুল। তুই খুশিতে হাসবি সেদিন। আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়বে তোর ঐ চোখ দুটি হতে।
আমি সেদিনও লুকিয়ে লুকিয়ে তোর ঐ নেশাতুর চোখ দুটি দেখবো। আর কবিতা লিখে যাবো।
-
মেয়ে!
আরো সময় বয়ে যাবে। তোর সেই ব্যাস্ত স্বামী প্রায়শই তার কাজে ব্যাস্ত থাকবে। তোকে সময় দেওয়ার মতো সময় তার কাছে হয়ে উঠবেনা তখন। তোর ভালবাসার চাহনিতে ভ্রু কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করবে সেদিন তোর স্বামী। তোকে এনে দিবে কাড়ি কাড়ি অর্থ। এনে দিবে কাড়ি কাড়ি লেটেস্ট ডিজাইনের গহনা। ইশারায় বুঝিয়ে দিবে এতো কিছুর পরে আবার ভালবাসা লাগে নাকি?
তার কাছে টাকাই সব রে। ভালবাসা তো কিছুই নয়। নগন্য! তুই একটুখানি ভালবাসার জন্য ছটফট করবি। হাহাকার করে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠবি তখন।
আমি সেদিনও লুকিয়ে লুকিয়ে তোর ঐ নেশাতুর চোখ দুটি দেখবো। আর কবিতা লিখে যাবো।
-
মেয়ে!
একদিন তুই বুড়িয়ে যাবি। তোর চোখের নিচে কালো দাগ পড়বে। দীঘল কালো রেশমি চুল গুলো সাদা বর্ণ ধারণ করবে। চামড়াগুলো কুঁচকে যাবে। তোর স্বামী তোর দিকে ফিরেও তাকাবেনা তখন। নাইট ক্লাব এ গিয়ে তাগড়া তাগড়া মেয়ের সাথে ফুর্তিতে মেতে উঠবে। ভোর রাতে মদ্য পান করে বাড়িতে ফিরবে। তুই কেমন আছিস, খেয়েছিস কিনা ভুলক্রমেও জানতে চাইবেনা। তুই আবারও কাঁদবি তখন।
আমি সেদিনও লুকিয়ে লুকিয়ে তোর ঐ নেশাতুর চোখ দুটি দেখবো। আর কবিতা লিখে যাবো।
-
মেয়ে!
মৃত্যুসজ্জায় তুই একদিন জীবনের হিসাব মিলাতে বসবি। জীবনের সব প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খাতা খুলে বসবি। আমি সেদিন আর লুকিয়ে দেখবোনা তোকে। ধীর পায়ে হাতে তোর দেওয়া লাল ডায়েরিটুকু নিয়ে আসবো তোর কাছে। আমাকে দেখে কি তুই খুব বেশি অবাক হবি? আমিও তো ততোদিনে বুড়িয়ে গেছি। তুই আমাকে দেখে খুব করে কাঁদবি। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারবিনা সেদিন আমায়। কাছে এসে তোর হাতে ডায়েরিটুকু ধরিয়ে দিয়ে ফিরে চলে যাবো। তুই অপলক দৃষ্টিতে আমার চলে যাওয়া দেখবি। আমি যাওয়ার পর তুই ডায়েরি খুলে বসবি। প্রতিটি পাতায় পাতায় আমার ছোঁয়া পাবি। খুঁজে পাবি তোর প্রতি আমার নিঃসার্থ ভালবাসা। দেখতে পাবি প্রতিটি পাতায় পাতায় তোকে নিয়ে লেখা আমার কাব্য।
তুই পড়বি আর অঝর ধারায় কাঁদতে থাকবি সেদিন। এতদিনে এসে তুই তোর ভুল বুঝতে পারবি। যেই কবিতাকে তুই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গিয়েছিলি। দিয়েছিলি উপহার একরাশ তাচ্ছিল্য। সেই কবিতার মাঝেই তুই সেদিন ভালবাসা খুঁজে পাবি। তুই সেদিন কি হারিয়েছিলি তা ক্ষনে ক্ষনে বুঝতে পারবি। জীবনটা কতটা ভালবাসায় পূর্ণতা পেতে পারতো সেদিন বুঝতে পারবি। তুই আবারো কাঁদবি। ক্রমাগত কাঁদতেই থাকবি। তোর কান্না যেনো আর শেষ ই হবেনা। দূর হতে তুই তোর মৃত্যু ঘন্টা ভেসে আসতে শুনতে পাবি। তোর শুধু জানা হয়ে উঠবেনা এতো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তোর ঐ চোখ দুটো আমার কাছে বিন্দু মাত্র ও বদলে যায়নি।
আমি আবারও সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে তোর ঐ নেশাতুর চোখ দুটি দেখবো। আর কবিতা লিখে যাবো।
-
মেয়ে!
আবারও সময় পেরিয়ে যাবে। তোর সাথে এবার আমার দেখা হবে জাহান্নামে। কি করবো বল? তোর মৃত্যুর পর যে আমিও তোর কাছে চলে যাওয়ার পায়তাঁরা কষ ছিলাম। তাইতো ছুরি টা নিয়ে হাতের শিরা এক টানেই কেটে দেই। সত্যি বলছি। আমার এক বিন্দু ও কষ্ট হয়নি। ভালবাসার মানুষের জন্য যেকোনো কিছু করার মাঝেই সুখের ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যায়। এবার আমার তোর সাথে দেখা হবে জাহান্নামে। দুজনে একত্রে জাহান্নামের লেলিহান অগ্নি শিখায় জ্বলতে থাকবো। খুব কষ্ট হবেরে। খুব। জানিস ই তো জাহান্নামের আগুন পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তর গুন বেশি প্রখর।
সে যাই হোক, দুজন মিলে একসাথে এই শাস্তি ভোগ করবো। এটুকুই বা কম কিসের? শুনেছি মনে বিন্দু পরিমান ঈমান থাকলেও নাকি একসময় জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। একসময় আমাদের শাস্তির ও অবসান ঘটবে। দুজনের আবার দেখা হবে কোনো এক সময় জান্নাতে।
তুই কি সেদিনও আমায় ছেঁড়ে চলে যাবি অন্য কোনো সুখের আশায়? নাকি শেষমেশ এবার আমার কবিতাগুচ্ছের প্রেমেই পড়বি? প্রশ্ন টা নাহয় তোর জন্যই তুলে রাখা হলো!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৭