কোনো এক গোধূলী ক্ষণে কেউ একজনের অনুপস্থিতিটি বারে বারে জানান দিয়ে যায় নিকোটিনের ধোঁয়া উড়ানো ছেলেটির কাছে।
কুয়াশা ভরা কোনো এক ক্ষণে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ হাতে বারান্দার এক কোণে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটিও একসময় পাশে কেউ একজন কে খুব করে খুঁজে বেড়ায়।
স্নিগ্ধ সকালে কুয়াশা ভেদ করে হেঁটে যাওয়ার সময় হাতে হাতটুকু আলতো করে ধরে রাখার জন্য হলেও মাঝে মাঝে আকুল হয়ে খোঁজে কেউ একজনকে ছেলেটি।
পথ চলতে চলতে পাঁচিলের প্রতিটি বালুকণায় কেউ একজনের ছায়ার দাগ কল্পনায় খুঁজে ফেরে মেয়েটি।
জনমানবহীন নির্জন উপত্যকায় গিটারে টুং টাং করে ওঠা শব্দের প্রতিধ্বনিতেও মাঝে মাঝে কেউ একজনের পরিচিত সেই কন্ঠ খুঁজে বেড়ায় ছেলেটি।
আকাশের ওই রঙ বেরঙের মেঘের দেশে হারিয়ে যাওয়ার জন্য হলেও আনমনে খুঁজে বেড়ায় সেই কেউ একজনকে মেয়েটি।
মধ্যদুপুরে বালু পথ ঘেষে যাওয়ার সময় এক সারি পায়ের ছাপ দেখে অকারণেই কেউ একজনকে খুঁজে ফেরে ছেলেটি।
শহরের আনাচে কানাচে অলিতে গলিতে সেই কেউ একজনের চিরচেনা ঘ্রাণের রেশে আচমকাই থমকে দাড়ায় মেয়েটি।
কোনো এক পড়ন্ত বিকালে হঠাৎ বৃষ্টির আগমনে রিকশার হুড নামাতে গিয়েও ব্যাকুল হয়ে কেউ একজনকে অনুভব করে ছেলেটি।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণার ন্যায় দূরন্তপণা আহ্লাদ পূরণ করার জন্য হলেও কেউ একজনকে খুঁজে ফেরে মেয়েটি।
একলা ক্ষণ পার করার সময় অজান্তেই কাব্য রচনা করতে গিয়ে সেথায় কেউ একজনের পরশ খুঁজে ফেরে ছেলেটি।
পুরোনো বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে কেউ একজনের স্পর্শ খুঁজে ফেরে মেয়েটি।
একই শাল দুজনে ভাগাভাগি করে উষ্ণ ভালোবাসা অনুভব করার জন্য হলেও কেউ একজনকে খুঁজে ফেরে ছেলেটি।
হঠাৎ কোনো এক পূর্ণিমার রাতে জোৎস্নাবিলাস করার জন্য হলেও কেউ একজনকে অজান্তেই খুঁজে ফেরে মেয়েটি।
এরকম অসংজ্ঞায়িত সব টুকরো টুকরো ইচ্ছে পূরণের জন্য হলেও কেউ একজনকে অগণিত মানুষদ্বয়ের মাঝে খুঁজে ফেরে তথাকথিত কিছু ব্যার্থ মানুষ। কেউ একজনের অস্তিত্বে মুখরিত হয়ে থাকা চেনা সেই শহর, চেনা সেই জায়গা, চেনা প্রতিটি মুহূর্ত। সবকিছু ঠিক আগের মতোই থেকে যায়। শুধু সেই কেউ একজনকেই অবাঞ্ছিতভাবে আর খুঁজে পাওয়া যায়না। দিন শেষে সেসব ব্যার্থ মানুষেরা সবাই একা হয়ে পড়ে। বড্ড একা হয়ে পড়ে। নিকশ কালো রাতের আধারে তাদের শুধুমাত্র বুকের বাম পাশেই চিনচিন করে ব্যাথা হয়না। সর্বাঙ্গে, প্রতিটি শিরায়-উপশিরায় ভালোবাসাহীনতা নামক ব্যাথা চিরচির করে উঠে। পৃথিবীর কোনো ডাক্তারই আজ পর্যন্ত এই ব্যাথার নিরাময় আবিষ্কার করতে পারেনি। পারেনি এই অজানা রহস্যময়ী রোগের কোনো খোলাসা করতে। ব্যার্থ মানুষেরা সেই রোগের নাম দেয় তুমিহীনতা। অদ্ভুত এক তুমিহীনতায় ভুগে তারা প্রতিটিক্ষণ। যেই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাঁসতে হাঁসতে সেই যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয় তারা। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি প্রহরের প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে অদৃশ্যমান কিছু জানান দিয়ে যায় সেই কেউ একজনের অপূর্ণতা। কিংবা সেই কেউ একজনের অনুপস্থিতি। মাঝে মাঝে কষ্টগুলো সেসব অব্যক্ত অনুভূতির মতো ভয়াবহভাবে গা চারা দিয়ে উঠে। সেসময় চিৎকার করে বলতে গিয়েও বলতে পারেনা তারা, “ইশশশশশ! সব যদি আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যেতো!”
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০